ক্রিয়াপদ ও ব্যুত্পত্তি অনুযায়ী বিশেষণের শ্রেণিবিভাগ - বাংলা ২য় পত্র | এইচএসসি ২০২৪

পুনবি৴ন্যাসকৃত সিলেবাস

প্রশ্ন: ক্রিয়াপদ কাকে বলে? ক্রিয়াপদের শ্রেণি বিভাগসহ উদাহরণ দাও।

উত্তর: ক্রিয়াপদ: ধাতুর প্রয়োগগত রূপ হলো ক্রিয়া। বাক্যের আবার দুটি অংশ—উদ্দেশ্য ও বিধেয়। উদ্দেশ্য হলো কর্তা ও বিধেয় ক্রিয়া। ক্রিয়াপদ বিধেয় অংশে থাকে। 

পড়ছে, খেলছে পদগুলো দ্বারা কোনো না কোনো কাজ করা বোঝাচ্ছে, এ জন্য এগুলো ক্রিয়াপদ। 

সংজ্ঞা: যে পদ দিয়ে কোনো কাজ করা বোঝায়, তাকে ক্রিয়াপদ বলে।

অর্থ সম্পর্কের দিক থেকে ক্রিয়াপদকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়: ১. সমাপিকা, ২. অসমাপিকা

সমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়াপদের দ্বারা বাক্যের অর্থ বা ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায়, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন: কাল ছাত্ররা আসবে। 

ওপরের দুটি বাক্যে ক্রিয়াপদের দ্বারা বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পেয়েছে; অর্থগত কোনো অপূর্ণতা নেই। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি ক্রিয়াপদই সমাপিকা ক্রিয়া।

অসমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়াপদের দ্বারা বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায় না, বাক্যটি সমাপ্ত হয়েছে কি না বোঝায় না এবং বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণতার জন্য একটি সমাপিকা ক্রিয়ার অপেক্ষায় থাকে, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে।

‘এ কথা শুনে তিনি হাসলেন’—এটি সম্পূর্ণ বাক্য।

‘হাসলেন’—সমাপিকা ক্রিয়া। কিন্তু ‘এ কথা শুনে’—এই পর্যন্ত বাক্যটি বললে অর্থ অসম্পূর্ণ থাকে। ‘শুনে’ ক্রিয়াপদটি অসমাপিকা। ‘হাসলেন’ সমাপিকা ক্রিয়ার সাহায্যে ‘শোনা’ ক্রিয়াটির অর্থ অসম্পূর্ণতা পায়।

সমাপিকা ক্রিয়ার মতো অসমাপিকা ক্রিয়ারও কর্তা, করণ, অধিকরণ ও অপাদান থাকতে পারে। অসমাপিকা ক্রিয়ারও কর্ম থাকতে পারে। বাক্যে সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা ও কর্ম এক অথবা আলাদাও হতে পারে। আমি খেয়ে এসেছি। ‘খেয়ে’ ও ‘এসেছি’ উভয়ের কর্তা ‘আমি’।

প্রশ্ন: ব্যুত্পত্তি অনুযায়ী বিশেষণের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করো।

উত্তর: ব্যুত্পত্তি তথা শব্দ গঠনের দিক থেকে বিশেষণ শব্দটি কীভাবে গঠিত হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করে বিশেষণকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। 

যথা: ক. মৌলিক বিশেষণ, খ. সাধিত বিশেষণ।

মৌলিক বিশেষণ: যে বিশেষণকে ব্যাকরণগতভাবে আর কোনো ক্ষুদ্র অংশে রূপান্তর বা বিভক্ত করা যায় না, তাকে সিদ্ধ বা মৌলিক বিশেষণ বলে। যেমন: ভালো, মন্দ, লাল, নীল।

সাধিত বিশেষণ: যে বিশেষণকে ব্যাকরণগতভাবে আরও এক বা একাধিক ক্ষুদ্রতর অংশে রূপান্তর বা বিভক্ত করা যায়, তাকে সাধিত বিশেষণ বলে। যেমন: চলন্ত গাড়ি, মেঘলা আকাশ। সাধিত বিশেষণ নানাভাবে গঠিত হতে পারে।

ক. ক্রিয়াজাত বিশেষণ: ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয়যোগে যে বিশেষণ হয়, তাকে ক্রিয়াজাত বিশেষণ বলে। যেমন: চলন্ত গাড়ি।

খ. বিশেষ্যজাত বিশেষণ: বিশেষ্যের সঙ্গে তদ্ধিত প্রত্যয়যোগে এ ধরনের বিশেষণ গঠিত হয়ে থাকে। যেমন: রোদেলা দুপুর।

গ. সর্বনামজাত বিশেষণ: কিছু সর্বনাম প্রত্যয় যোগ হয়ে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাকে সর্বনামজাত বিশেষণ বলে। যেমন: কবেকার কথা, কোথাকার লোক।

ঘ. ধনাত্মক শব্দজাত বিশেষণ: যে ধনাত্মক শব্দ কখনো এককভাবে, কখনো-বা প্রত্যয় যুক্ত হয়ে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাকে ধনাত্মক শব্দজাত বিশেষণ বলে। যেমন: কনকনে শীত, ধিকিধিকি আগুন।

ঙ. সমাসবদ্ধ বিশেষণ: যে সমাসবদ্ধ শব্দ বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাকে সমাসবদ্ধ বিশেষণ বলে। যেমন: বে-কার মানুষ, নিয়ম-বিরুদ্ধ কথা, পা-চাটা কুকুর।

চ. উপসর্গ যুক্ত বিশেষণ: উপসর্গ বা অদ্য প্রত্যয়যোগে যে বিশেষণ গঠিত হয়, তাকে অদ্য প্রত্যয় বা উপসর্গযুক্ত বিশেষণ বলে। যেমন: নিখুঁত কাজ, সুকঠিন প্রতিজ্ঞা।

মোস্তাফিজুর রহমান, শিক্ষক, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা