প্রিয় পরীক্ষার্থী, শুভেচ্ছা নিয়ো। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের অনুশীলন। এ সময় তোমাদের আত্মবিশ্বাস হারালে চলবে না, নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। তুমি পারবে। তোমার পরীক্ষা ভালো হবেই। কেননা তুমি তোমার গণিত সিলেবাসের নির্ধারিত বিষয়বস্তু বারবার অনুশীলন করেছ এবং তোমার প্রস্তুতি অনেক ভালো। কোনোভাবেই গণিতকে ভয় পাওয়া চলবে না। মানসিক দুর্বলতা বা পরীক্ষাভীতির কারণে পরীক্ষা হলে প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পর কিছুক্ষণের জন্য মাথা পুরো ফাঁকা হয়ে যায় এবং বারবার মনে হতে থাকে আমি বোধহয় কিছুই পারব না। ফলে অনেক জানা জিনিস ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে এ কথা ঠিক যে তোমার সঙ্গে যারা পরীক্ষা দিচ্ছে, তারাও একটু একটু ভয় পাচ্ছে। এই একটুখানি ভয় পাওয়া খারাপ কিছু নয়। এতে প্রমাণ হয় তুমি দায়িত্ববান মানুষ। তুমি তোমার দায়িত্বের প্রতি উদাসীন নও বরং যত্নশীল। তাই মনোবল হারানো চলবে না। আত্মবিশ্বাস অটুট রাখবে। প্রশ্নগুলো বারবার পড়তে থাকবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তোমার সবকিছু মনে পড়ে যাবে।
অন্যান্য বিষয় ও প্রাত্যহিক কাজ পর্যালোচনা করে গণিত অনুশীলনের জন্য প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করো। একসঙ্গে কয়েকটি অধ্যায় অনুশীলন না করে একটি/দুটি অধ্যায় একাধিকবার অনুশীলন করো। প্রথমবারেই সব সমস্যার সমাধান নির্ভুলভাবে পারবে—এমনটি না–ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ধৈর্যসহকারে পুনরায় চেষ্টা করো। প্রয়োজনে বন্ধুবান্ধব বা বিষয় শিক্ষক থেকে পরামর্শ নিয়ে নাও। পারোনি বলে ফেলে রাখা যাবে না।
সত্যি বলতে বছরজুড়ে শ্রেণি কার্যক্রমসহ বাসাবাড়িতে অনুশীলনের ক্ষেত্রেও তোমরা অধিকাংশ সময় সৃজনশীল প্রশ্নের সমাধান নিয়ে ব্যস্ত থাকো। বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর শিখনে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অথচ, বোর্ড পরীক্ষায় বহুনির্বাচনি ও সৃজনশীল অংশে আলাদা আলাদাভাবে ৩৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাস করতে হয়। তা ছাড়া বিষয়ভিত্তিক গ্রেড পয়েন্ট বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বহুনির্বাচনি অংশে পূর্ণ নম্বর পাওয়া অনেক জরুরি। কম সময়ে সঠিকভাবে উত্তরগুলো পারার জন্য অধ্যায়ভিত্তিক মৌলিক ধারণাগুলো বারবার অনুশীলন করবে।
দু–চারটির উত্তর করতে রাফ করার প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মূল খাতার পেছনের কোনো একটি পৃষ্ঠা ব্যবহার করতে পারবে। তাই সময় নষ্ট না করে নির্ধারিত সময়েই সব কটি প্রশ্নের উত্তর ভরাট করবে।
এবার চলো জেনে নিই গণিত বিষয়ে বহুনির্বাচনি অংশের ৩০ নম্বরের বিভাজন কেমন হবে:
‘ক’ বিভাগ (বীজগণিত) থেকে ৯/১০টি প্রশ্ন থাকবে
‘খ’ বিভাগ (জ্যামিতি) থেকে ৯/১০টি প্রশ্ন থাকবে
‘গ’ বিভাগ (ত্রিকোণমিতি ও পরিমিতি) থেকে ৮/৯টি প্রশ্ন থাকবে
‘ঘ’ বিভাগ (পরিসংখ্যান) থেকে ২/৩টি প্রশ্ন থাকবে
সহজ মান–৩০% (৯টি), মধ্যম মান-৫০% (১৫টি) এবং কঠিন মান–২০% (৬টি)
এসএসসি পরীক্ষায় বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তরে সময় বরাদ্ধ ৩০ মিনিট এবং এই সময়ের মধ্যেই বোর্ড প্রদত্ত OMR সিটে প্রতিটি প্রশ্নের বিপরীতে একটি করে মোট ৩০টি বৃত্ত কালো কালির বলপয়েন্ট কলম দিয়ে ভরাট করতে হয়। মনে রেখো, একটি প্রশ্নের বিপরীতে একাধিক বৃত্ত ভরাট করা যাবে না। ভুল করে ভরাট করেছ বলে কেটেও দেওয়া যাবে না। আবার সময়ের কথাটা মাথা থেকে বের করে দিলে চলবে না। কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে ৪০–৫০ সেকেন্ড লাগবে। কোনোটি আবার ৬০–৭০ সেকেন্ড লাগতে পারে।
সৃজনশীল অংশে প্রতিটি উদ্দীপক বা দৃশ্যকল্প পাঠ্যবইয়ের প্রদত্ত সমস্যাগুলোর আলোকেই তৈরি হয়। তবে পাঠ্যবই থেকে হুবহু উদ্ধৃত হয় না। মৌলিক ধারণা ঠিক রেখে বা গুণগত পরিবর্তন না করে শুধু কাঠামোগত বা অক্ষর বা সংখ্যাভিত্তিক পরিবর্তন করে উদ্দীপক বা দৃশ্যকল্প বানানো হয়। অনেক সময় একাধিক অধ্যায় থেকে সমন্বয় করে উদ্দীপক তৈরি করা হয়। পাঠ্যবইয়ের প্রদত্ত তত্ত্ব, তথ্য, সূত্র ও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো বারবার অনুশীলন করলে প্রশ্নের উদ্দীপক বুঝতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সৃজনশীল অংশের মোট নম্বর ৭০, সময়: ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। এর চারটি বিভাগ থাকে।
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় পরীক্ষার খাতার ওপরে ও বাঁ পাশে কালো কালির কলম বা পেন্সিল দিয়ে মার্জিন করবে। খাতা যতটা সম্ভব পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করবে। কাটাকাটি বা ঘষামাজা বা ওভাররাইটিং না করাই ভালো। কেননা তোমার প্রতিনিধি কিন্তু তোমার খাতা।
প্রতিটি প্রশ্নোত্তরের মধ্যে খানিকটা ফাঁকা রাখবে। জ্যামিতিক চিত্র অবশ্যই শার্প করা পেন্সিল দ্বারা পরিষ্কার করে আঁকবে। পরিসংখ্যানে গ্রাফ করার সময় গ্রাফপেপারে পেন্সিল দিয়ে লেবেলিং করে গ্রাফ করবে।
দরকারি স্থানে একক লিখবে। উত্তর আসন্ন হলে মানের শেষে (প্রায়) লিখবে।
গণিত পরীক্ষায় ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে হয়। তোমরা সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবে। পরীক্ষার হলে কোনো রকম মুঠোফোন নিয়ে যেতে পারবে না।
প্রতিটি সৃজনশীল প্রশ্নের তিনটি অংশ থাকে। ‘ক’ নম্বর প্রশ্নটি উদ্দীপকের বাইরেও হতে পারে। তবে যে অধ্যায় থেকে উদ্দীপক তৈরি করা হবে, প্রশ্নটি ওই অধ্যায় থেকেই সাধারণত হয়ে থাকে।
‘খ’ ও ‘গ’ নম্বর প্রশ্ন দুটি উদ্দীপকের আলোকে তৈরি করা হয়। সে জন্য ‘খ’ ও ‘গ’ নম্বর প্রশ্নে সমাধান উদ্দীপক ছাড়া করা যাবে না।
‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ নম্বর প্রশ্ন তিনটি কোনো অবস্থাতেই নির্ভরশীল হবে না। নির্ভরশীল অর্থ—একটি প্রশ্নের উত্তর অন্যটি সমাধানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না।
রতন কান্তি মণ্ডল, প্রভাষক, মাস্টার ট্রেইনার উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঢাকা