প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমরা নিশ্চয়ই নাটক দেখেছ। এটা একই সঙ্গে দেখা ও শোনার বিষয়। নাটকে একজনের সঙ্গে অন্যজনের যেসব কথা হয়, সেগুলোকে সংলাপ বলে। চরিত্রগুলোর সংলাপ অথবা পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ভেতর দিয়ে একটি নাটকের কাহিনি গড়ে ওঠে।
এবার আমরা একটি নাটক নিয়ে আলোচনা করব। নাটকটির নাম ‘সুখী মানুষ’। যাঁরা নাটক লেখেন, তাঁদের নাট্যকার বলে। ‘সুখী মানুষ’ নাটকের নাট্যকার মমতাজউদদীন আহমদ। তিনি একজন বিখ্যাত নাট্যকার। মমতাজউদদীন আহমদ ১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
নির্দেশনা: ‘সুখী মানুষ’ নাটকে অনেক চরিত্র আছে। তুমি ও তোমার সহপাঠীরা এগুলোর মধ্য থেকে একটি করে চরিত্র বেছে নাও এবং চরিত্র অনুযায়ী সংলাপ পাঠ করো। সংলাপ পাঠ করার সময় প্রমিত উচ্চারণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
‘সুখী মানুষ’ নাটকের বিষয়বস্তু:
‘সুখী মানুষ’ নাটকে এক মোড়লের জীবনের করুণ পরিণতি দেখানো হয়েছে। সুবর্ণপুর গ্রামের প্রধান হচ্ছেন মোড়ল। তিনি মানুষকে ঠকিয়ে ও মানুষের মনে কষ্ট দিয়ে ধনী হয়েছেন। একজন অত্যাচারী লোক ছিলেন মোড়ল। অসৎ উপায়ে অনেক ধনসম্পদের মালিক হয়েছেন। জীবনের শেষ দশায় এসে মোড়ল কঠিন অসুখে পড়লেন। তাঁর আত্মীয় হাসু মিয়া ও বিশ্বস্ত চাকর রহমত আলী তাঁর চিকিৎসার চেষ্টা করতে লাগল। মোড়লও এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে যেতে চান না। তিনি বাঁচতে চান।
মোড়লের চিকিৎসার জন্য কবিরাজ ডেকে আনা হলো। কবিরাজকে মোড়ল তাঁর অশান্ত মনে শান্তি এনে দিতে বললেন। কবিরাজ বললেন, কোনো সুখী মানুষের জামা গায়ে দিলে মোড়লের অসুস্থতা কেটে যাবে। কিন্তু পাঁচ গ্রামেও একজন সুখী মানুষের সন্ধান পাওয়া গেল না। অনেক খুঁজে বনের ধারে একজন সুখী মানুষ পাওয়া গেল। সে নিজের শ্রমের আয় দিয়ে খুব সুখে দিন কাটান। প্রয়োজনের অতিরিক্ত তাঁর কোনো সম্পদ নেই। তাই চোরের ভয়ও নেই। রাতে সে শান্তিতে ঘুমোতে পারেন। এটাই বনে বসবাসকারী লোকটির অনাবিল সুখের উৎস। শেষ পর্যন্ত একজন সুখী মানুষ পাওয়া গেল। কিন্তু দেখা গেল তাঁর কোনো জামা নেই। তাই মোড়লের চিকিৎসা করা আর সম্ভব হলো না। মোড়লের বাঁচার আক্ষেপ রয়েই গেল।
এই নাটকের শিক্ষা হলো, পৃথিবীতে সুখ একটা আপেক্ষিক ব্যাপার। কারও অনেক সম্পদ থেকেও জীবনে সুখ নেই। আবার কেউ কেউ কিছু না থাকলেও জীবনে অনেক সুখী।
জাহেদ হোসেন,সিনিয়র শিক্ষক, বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা