বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির আবেদন শুরু হয়েছে গত ২২ ফেব্রুয়ারি, আবেদন চলবে ৯ মার্চ পর্যন্ত। এই আবেদন প্রক্রিয়ার মধ্যে একজন শিক্ষার্থী দুইভাবে ভর্তির পদ্ধতি নির্বাচন করতে পারেন। একটি হলো সাধারণ ভর্তি, যেটাতে নিজস্ব খরচে পড়াশোনা চালিয়ে নিতে হয়। আরেকটি হলো অসচ্ছল-মেধাবী কোটায় ভর্তি, যেখানে শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেল কলেজের সমপরিমাণ ফি পরিশোধ করেই ভর্তির সুযোগ পান।
২০২৪ সালে দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য ৫ হাজার ৩৮০টি আসন আছে। আর ৬৭টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন আছে ৬ হাজার ২৯৫টি। ফলে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট আসন আছে ১১ হাজার ৬৭৫টি। এর বিপরীতে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছেন ৪৯ হাজার ৯২৩ জন শিক্ষার্থী।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মোট আসনের ৫ শতাংশ 'অসচ্ছল-মেধাবী' কোটার জন্য বরাদ্দ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই বিশেষ কোটার অধীনে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের বেতন-ভাতা, সেশন ফির পরিমাণ হবে সরকারি মেডিকেলের অনুরূপ।
এই কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে রয়েছে যোগ্যতার সুনির্দিষ্ট মানদন্ড। অভিভাবকের অসচ্ছলতা প্রমাণে দাখিল করতে হবে বেশকিছু কাগজপত্র। শিক্ষার্থীর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর এবং অভিভাবকের আর্থিক অবস্থার ভিত্তিতে একটি স্কোর করা হবে। সেই স্কোর এবং শিক্ষার্থীর পছন্দক্রম অনুযায়ী যোগ্য বিবেচিত হলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য তিনটি করে কলেজের একটি তালিকা দেওয়া হবে। সেই তিনটি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীকে স্বশরীরে সাক্ষাৎকার দিতে হবে যেখানে শিক্ষার্থীর প্রকৃত অবস্থা অধিকতর যাচাই বাছাই করা হবে। এই বৈতরণী পার হয়ে তবেই পাওয়া যাবে এই বিশেষ সুবিধা।
'অসচ্ছল-মেধাবী' কোটার বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (বেসরকারি মেডিকেল কলেজ) উপল সিজার বলেন, ‘মেধাবী কিন্তু অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের মেডিকেলের স্বপ্নপূরণে মেধা কোটা একটি সুন্দর ব্যবস্থা। তবে মেধা কোটায় যে একেবারে খরচ নেই, এমনটা ভাবা ভুল হবে। দেখা যায় যে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে, সেখানকার হোস্টেল ফি, বই-খাতা, প্রফের খরচ, শিক্ষার্থীদের স্টাডি ট্যুর, ব্যক্তিগত কোনো আয়োজনসহ আরও আনুষঙ্গিক খরচ থাকেই। অনেক সময় দেখা যায়, সরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের মতোই তাঁদের বিভিন্ন ডেটা কালেকশনে যেতে হয়, যেখানে যাতায়াত, খাওয়ার খরচসহ অন্যান্য খরচ শিক্ষার্থীকেই বহন করতে হয়। এগুলো মেনে নিয়ে কেউ যদি মেধা কোটায় ভর্তি হয়, তাহলে তাঁর জন্য সামনের যাত্রাটা সহজ হবে।’
রাজধানী ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছর মেধাবী-অসচ্ছল কোটায় ভর্তির সুযোগ পান ভোলার চরফ্যাশনের শিক্ষার্থী মোঃ ফাতিহুল ইসলাম তায়ফুর। ভর্তি প্রক্রিয়ার ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, 'আমার তিনটি কলেজের মধ্যে প্রথম দুটি কলেজের সাক্ষাৎকার দেওয়ার পরও আমার সেখানে ভর্তির সুযোগ হয়নি, আমি ফেল করি। তৃতীয় এবং সর্বশেষ মেডিকেল কলেজের সাক্ষাৎকারে পাস করে ভর্তির সুযোগ পাই। প্রথম দুটি সাক্ষাৎকারের সময় আমি খুবই নার্ভাস ছিলাম, ঠিকমতো কথাই বলতে পারছিলাম না। তবে শেষ সাক্ষাৎকারে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সফলভাবে উত্তীর্ণ হই।' তায়ফুরের সঙ্গে আরো ৬ জন শিক্ষার্থী এই কোটায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। উত্তরার এই মেডিকেল কলেজটিতে মোট আসন আছে ১৪০টি। ফলে ৫ শতাংশ হারে সেখানে প্রতিবছর মোট ৭ জন শিক্ষার্থী 'মেধাবী-অসচ্ছল' কোটায় ভর্তির সুযোগ পেয়ে থাকেন।
মেধাবী-অসচ্ছল কোটায় ভর্তির জন্য যেসব যোগ্যতা থাকতে হবে:
১. শিক্ষার্থীকে ২০২৪ সালের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
২. ‘অসচ্ছল’ হওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, মেধাবী-অসচ্ছল কোটায় আবেদনকারী শিক্ষার্থী কোটার জন্য নির্বাচিত না হলে মেধাতালিকা অনুযায়ী সাধারণ কোটায় ভর্তির সুযোগ পাবেন। তবে অসচ্ছলতার দালিলিক প্রমাণ মিথ্যা বা ভুল প্রমাণিত হলে আবেদন/ ভর্তি/ কলেজ নির্বাচন বাতিল বলে গণ্য হবে।
ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীকে অভিভাবকের আর্থিক অসচ্ছলতার সপক্ষে যেসব প্রমাণ যাচাই করতে হবে:
শিক্ষার্থীর অভিভাবকের বার্ষিক আয়, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির সপক্ষে জেলা/ উপজেলা/ ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রত্যয়নপত্র ও নোটারি পাবলিক সার্টিফিকেট এবং সব ব্যাংক হিসাব বিবরণী ইত্যাদি।
ভিজিএফ/ ভিজিডি/ টিসিবি কার্ড/ আশ্রয়ণ প্রকল্পের বরাদ্দপত্র/ প্রান্তিক কৃষক কার্ড/ মৎস্যজীবী কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
এতিম শিক্ষার্থী/ স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা/ বিধবা ভাতা/ প্রতিবন্ধী ভাতাপ্রাপ্তির দলিলাদি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
ইউনিয়ন পরিষদ/ ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক প্রদত্ত দিনমজুর হিসেবে জীবিকা উপার্জনকারীর প্রত্যয়নপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
সরকার নির্ধারিত দুর্গম এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার প্রমাণ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
সরকারি/ আধা সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর জাতীয় বেতনক্রমের ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডের বেতনভুক্ত কর্মচারী বা সমপর্যায়ের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তির বার্ষিক বেতন বিবরণী, ব্যাংক হিসাব বিবরণী ও পেনশন বিবরণী (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
আবেদন করার আগে এই লিংক থেকে বিস্তারিত নির্দেশনা পড়ে দেখুন।
অনলাইনে আবেদন করতে হবে এই ঠিকানায়: dgme.teletalk.com.bd
অনলাইনে আবেদনপ্রক্রিয়ার নির্দেশিকা দেখুন এই ঠিকানায়: dgme.portal.gov.bd
অনলাইনে আবেদন শুরু: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
অনলাইনে আবেদন শেষ: ৯ মার্চ ২০২৪
আবেদন ফি জমার শেষ তারিখ: ১০ মার্চ ২০২৪
ওয়েবসাইটে তালিকা প্রকাশ: ২ এপ্রিল ২০২৪
ভর্তি শুরু: ৩ এপ্রিল ২০২৪
ভর্তি শেষ: ১৮ এপ্রিল ২০২৪