‘ময়নামতীর চর’ কবিতাটি পড়ে কী বুঝতে পারলে, তা লেখো।
‘ময়নামতীর চর’ কবিতার মূলভাব: নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলোতে ভাঙা–গড়ার কারণে অনেক চর সৃষ্টি হয়। ‘ময়নামতীর চর’ তেমনি একটি চরের নাম। এই চরে যারা বাস করে তারা অনেক সংগ্রাম করে টিকে থাকে। চরের সেই সংগ্রামী মানুষের প্রতিদিনকার জীবনচিত্র আর চরের প্রাকৃতিক পরিবেশের বিবরণ ‘ময়নামতীর চর’ কবিতায় ফুটে উঠেছে।
ময়য়নামতীর চরটি পদ্মা নদীর একটি শুকনা চর। নদীর এক পাড়ে বুনো ঝাউগাছ ও অন্য পাড়ে বুড়ো একটা বটগাছ রয়েছে। তার মাঝখানে আগাছায় ভরা ময়নামতীর চর। চরের উঁচু দিকে প্রতিদিন সকালে চাষিরা লাঙল চালান। আর এক পাশে কুমির রোদ পোহায়। নদীর কূল ঘেঁষে খরশুলা ও দাঁড়িকানা মাছ দল বেঁধে চলে। গাঙচিল ছোঁ মেরে মাছ ধরে ডালে এসে বসে। তারপর ঠোঁট দিয়ে চেপে মাছটিকে আছাড় মেরে সেটার মাথা-পেট-লেজ একে একে ছিঁড়ে গিলে খায়।
নদীর কিছুদূরে মাঠে একপাল গরু চরে বেড়ায়। একটা ষাঁড় দড়ি ছিঁড়ে এদিক–ওদিক ছুটে চলে, যার শিঙে মাটি মাখা। কোনো কোনো গরু মাথা নিচু করে ঝিমায়, কোনোটি ঘাস খায়, কোনোটি শুয়ে শুয়ে জাবর কাটে। কিছু পাখি গরুর গায়ে লেগে থাকা উকুন ও আঠালু ঠুকরে খায়। বকপাখিরাও এদের সঙ্গী হয়। আর শালিক শুধু কিচিরমিচির করে।
নতুন চরের পলিমাটিতে কৃষকেরা কলাই বুনেছেন। তাঁরা সারা রাত ধরে আখখেতে পাহারা দেন। কৃষকেরা খেতের কোনায় বাঁশ পুঁতে তার ওপর ঘর বেঁধেছেন। বাঁশের চাটাইয়ের ওপর বিচালি বিছিয়ে পাতা হয়েছে বিছানা। শীতের মধ্যেও তাঁরা মাঠের মাঝখানে খড়ের আগুন জ্বালান, ঠকঠকি নেড়ে শব্দ করে আর হাতে তালি বাজান। পদ্মা নদীর ওপাড় থেকে বুনো শূকর নদীর এপারে এসে রোজ আখ খায়, আখের খেত নষ্ট করে। আখখেতকে রক্ষার জন্য তাদের এই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।
জাহেদ হোসেন, সিনিয়র শিক্ষক, বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা