অ্যাবাকাসের সঙ্গে যাত্রাটা সহজ হলেও মানুষ কখনো থেমে থাকতে পছন্দ করে না। এই পদ্ধতিতে যোগ হয়তো খুব সহজ, তবে গুণ করা মুশকিল। ধরো, ২ ও ১০ গুণ করতে বলা হলে তোমাকে হয় ১০টা ২ অথবা ২টা ১০ যোগ করতে হবে, এভাবেই তখন মানুষ গুণ করত! শুনতে সহজ মনে হলেও যদি তিন বা ততোধিক অঙ্কের সংখ্যা নিয়ে কাজটা করা হয়, এটা অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়বে।
প্রায় অসম্ভব বললেও খুব একটা ভুল হবে না। এই সমস্যা সমাধানে ১৬১৭ সালে স্কটল্যান্ডের গণিতবিদ জন নেপিয়ার ম্যানুয়ালি অপারেটেড একটা পদ্ধতি নিয়ে এলেন, যাকে তিনি নেপিয়ার্স বোনস বা র্যাডোলজি নাম দেন। এই পদ্ধতিটি বেশ মজার। একই সঙ্গে গুণ, ভাগ ও বর্গমূল নির্ণয় বিষয়গুলো মানুষের কাছে সহজতর করে ফেলেন।
আমরা এবার নেপিয়ার্স বোনস ব্যবহার করে গুণ করা শিখব। ধরো, তোমাকে ৪২৫ ও ৬ গুণ করে ফলাফল নির্ণয় করতে হবে। নেপিয়ার্স বোনসের সুবিধা হলো, এখানে ০ থেকে ৯ পর্যন্ত প্রতিটি সংখ্যার সঙ্গে প্রতিটি সংখ্যার গুণফল আগেই রেডি করা থাকে। নিচের চিত্রে খেয়াল করলে দেখতে পারবে, ৪২৫–এর প্রতিটি অঙ্কের সঙ্গে ০ থেকে ৯ পর্যন্ত গুণ করে কী পাওয়া যাবে, সেটা লেখা আছে। তবে এখানে একটু ভিন্ন উপায়ে লেখা। ড্যাশের ওপরে দশক মান, নিচে একক মান লেখা।
প্রতিটি ঘরে কখনোই দুই অঙ্কের বেশি সংখ্যা থাকবে না। কেননা, ৯ ও ৯ গুণ করে ৮১ পাওয়া যায়, যা এই পুরো পদ্ধতির সর্বোচ্চ খোদাই করা সংখ্যা। আমরা যে সংখ্যা গুণ করতে চাচ্ছি, তার অঙ্কগুলো একদম ওপরের লাইনে নিয়ে বাঁ পাশের প্রথম কলামে সব সংখ্যা এবং মধ্যবর্তী ঘরগুলোতে তাদের গুণফল খোদাই করা হয়েছে। এই ডাইসগুলো আগেই রেডি করা থাকে, তোমাকে কেবল বসাতে হয়। প্রতিটি কলামের প্রথম সংখ্যা প্রতিনিধিত্ব করে এবং উক্ত কলামের বাকি সংখ্যাগুলো হলো প্রতিনিধি সংখ্যার ক্রমিক গুণিতক। যেমন ৪–এর ক্রমিক গুণিতকগুলো হলো ৪, ৮, ১২, ১৬, ২০, ২৪, ২৮, ৩২, ৩৬। পুনশ্চ সব ডাইসের ওপরের সংখ্যা দশক নির্দেশক, নিচের সংখ্যা একক এবং কোনো ডাইসে একটা সংখ্যা থাকা বোঝায় দশক স্থানে ০ আছে, অনেকটা ০৭ কে কেবল ৭ লেখার মতো।
এবার আমরা মূল প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করব। ৪২৫ সংখ্যাটির প্রতিটি অঙ্কের জন্য আমরা ৬ দিয়ে গুণফলের ছকটা আলাদা করে নেব। তোমাদের জ্ঞাতার্থে বলে রাখি, ৪২৫ সংখ্যাতে ৪ কিন্তু ৪০০, ২ কিন্তু ২০ এবং ৫ হলো ৫–এর প্রতিনিধি। তাহলে গাণিতিকভাবে বলা যায়, ৪২৫ = {(৪০০ + ২০ + ৫) ৬} = {(৪ × ৬ × ১০০) + (২ × ৬ × ১০) + (৫ × ৬ × ১)} = (২৪০০ + ১২০ + ৩০) = ২৫৫০; যা হলো উক্ত গুণফল।
এটা তো আমরা হাতে হাতে করলাম। নেপিয়ার্স বোনস ব্যবহার করে গুণ করা হলে আমরা পেতাম ২৪, ১২ ও ৩০ তিনটি সংখ্যা। এবার এদের নিয়ে একটু কাজ করব। ২৪ মূলত ২৪০০ অর্থাৎ এতে ২০০০ ও ৪০০ আছে। ওদিকে ১২ হলো ১২০, যেখানে ১০০ আর ২০ আছে।
অর্থাৎ প্রতিটি ঘরের শেষ অঙ্ক তার আগের ঘরের ওপরের অঙ্কের সঙ্গে মিলে যাবে। এখানে যেমন (৪০০ + ১০০) আলাদা করে না লিখে ২৪ থেকে ৪ এবং ১২ থেকে ১ নিয়ে যোগ করে ৫ লিখে ফেলতে পারি। একইভাবে (২ + ৩) = ৫ পাব।
এভাবে যোগ করে আমরা ২, ৫, ৫, ০ পাই, যা ওপরের চিত্রে একদম স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। অর্থাৎ আমাদের গুণফল হলো ২৫৫০!
তোমাদের আজকে কিছু বাসার কাজ থাকবে। আমরা একক গুণক পদ্ধতি শিখে গেছি। যদি দশক (দুই অঙ্কের সংখ্যা দিয়ে গুণ) কিংবা শত গুণক (তিন অঙ্কের সংখ্যা দিয়ে গুণ) থাকত অথবা বহু অঙ্কের দুইটি সংখ্যার গুণ থাকলে কীভাবে সলভ করবা, সেটা বের করতে হবে তোমাদের।
আমি এমন দুইটি গুণ দিয়ে দিচ্ছি, সঙ্গে কিছু হিন্টও থাকবে।
১। গুণ কর: (এটা আগের উপায়েই করতে পারবা!)
২। গুণ কর: (এটা করতে তোমাকে একটু ভাবতে হবে!)
হিন্ট: ছোট ছোট করে দেখো। অর্থাৎ = ×; এভাবেও করতে পারো।
তবে আরও সহজে করতে, × = × = × আকারে লিখে একটা একটা করে পার্ট আকারেও করতে পারো, একদম প্রথমটির মতোই।