আইনস্টাইনের ৫ বাড়ি

বছরজুড়ে গণিত অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি

মূলত এটি একটি ধাঁধার নাম। এই ধাঁধার সঙ্গে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের নাম জড়িত। প্রচলিত কথন হলো যুবা বয়সে আইনস্টাইন যুক্তির এই ধাঁধা তৈরি করেছেন। অবশ্য এই দাবির সপক্ষে খুব জোরালো সমর্থন পাওয়া যায় না। কিন্তু ধাঁধার জগতে এটি আইনস্টাইনের নামেই প্রচলিত। এটি যে খুব কঠিন একটা ধাঁধা, তা নয়। ধৈর্যের সঙ্গে যুক্তি খাটিয়ে এটির সমাধান করা যায়।

ধাঁধা:

এক রাস্তার ধারে পরপর পাঁচটি বাড়ি। বাড়িগুলোকে পাঁচটি রঙে রাঙানো হয়েছে। পাঁচ বাড়ির মালিক পাঁচ ভিন্ন ভিন্ন দেশের লোক। তাঁরা প্রত্যেকেই আলাদা পানীয় পান করেন, ভিন্ন ভিন্ন প্রাণী পোষেন। এমনকি পাঁচজনের সিগারেটের ব্র্যান্ডও ভিন্ন। মানে কোনো দুজন একই ব্র্যান্ডের সিগারেট বা পানীয় পান করেন না বা প্রাণী পোষেন না।

তাঁদের সম্পর্কে নিচের ১৫টি তথ্য জানা গেছে—

১. লাল বাড়িটি ব্রিটিশের।

২. সুইডিশ ভদ্রলোক কুকুর পোষেন।

৩. ডেনিশ ভদ্রলোকের পছন্দ চা।

৪. সাদা বাড়ির বাঁ পাশের বাড়িটিই সবুজ রঙের।

৫. সবুজ বাড়ির মালিক কফি খেতে পছন্দ করেন।

৬. পল মল ব্র্যান্ডের সিগারেটখোরের বাড়ির পেছনে রয়েছে পাখিদের রাজ্য।

৭. ডানহিল সিগারেটপ্রেমীর বাড়ির রং হলুদ।

৮. মাঝখানের বাড়ির মালিকের পছন্দের পানীয় দুধ।

৯. প্রথম বাড়িটিতে থাকেন নরওয়েজিয়ান।

১০. বিড়ালের পাশের বাড়িতে থাকেন ব্লেন্ড সিগারেটের লোক।

১১. যে বাড়ির মালিকের ডানহিল পছন্দ, তাঁর পাশের বাসাতেই থাকেন তিনি, যিনি কিনা ঘোড়া পোষেন।

১২. ব্লুমাস্টার সিগারেটের মালিকের পছন্দের পানীয় হলো বিয়ার।

১৩. জার্মানের পছন্দের সিগারেট হলো প্রিন্স।

১৪. নরওয়েজিয়ানের পাশের বাড়িই হলো নীল রঙের।

১৫. যিনি কিনা ব্লেন্ড সিগারেট পছন্দ করেন, তিনি থাকেন তাঁর বাড়ির পাশে যাঁর পছন্দের পানীয় হলো পানি।

প্রশ্ন হচ্ছে, কোন বাড়ির মালিক অ্যাকুয়ারিয়ামে মাছ পোষেন?

অনেক বিষয়, অনেক সূত্র মিলে সমস্যাটিকে জটিল মনে হয়। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে যুক্তির সৌধ সাজিয়ে এটিকে সমাধান করা যায়। নিচের ছকের মতো একটি ছক করে তারপর সূত্র অনুসারে সমাধান করলে কাজটি সহজ হয়। সূত্রগুলো বিশ্লেষণ করে আমরা এই ছককে সাজাতে সাজাতে যাব।

প্রথমে আমরা দেখি, এমন কোনো সূত্র আছে কি না, যা থেকে সরাসরি কোনো সূত্র পাওয়া যায়। ৯ নম্বর সূত্রে বলা হয়েছে, নরওয়েজিয়ান থাকেন প্রথম বাড়িতে। ১৪ নম্বর থেকে জানা যাচ্ছে, তাঁর পাশের বাড়ির রং নীল। ৮ নম্বর সূত্রে, মাঝের বাড়ির মালিকের পছন্দের পানীয় হচ্ছে দুধ। তাহলে ছক দাঁড়াল—

৪ ও ৫ নম্বর সূত্রের দিকে তাকানো যাক। বোঝা যাচ্ছে, সবুজ বাড়ি ১ বা ৫ নম্বর হতে পারবে না; কারণ, তাহলে সেটির ডান পাশে সাদা বাড়ি থাকবে না। আবার সবুজ বাড়ির মালিক কফি খেতে পছন্দ করেন (সূত্র ৫)। এর মানে ৩ নম্বর বাড়িটিও সবুজ নয়; কারণ, আগেই আমরা জেনেছি, ৩ নম্বর হলো দুধওয়ালার বাড়ি। এর মানে ৪ নম্বর বাড়ি হলো সবুজ। তাহলে ৫ নম্বর হয়ে গেল সাদা। ছক দাঁড়াল—

এখন ১ নম্বর সূত্র অনুসারে লাল বাড়িতে ব্রিটিশ থাকেন। আমরা বাড়ির রং জানি না ১ ও ৩ নম্বরের। এর মধ্যে ১ নম্বরে থাকেন নরওয়েজিয়ান। কাজে ৩ নম্বরই ব্রিটিশের লাল বাড়ি। তাহলে ১ নম্বর বাড়ির রং হলুদ এবং এর মালিকের পছন্দের সিগারেট হলো ডানহিল। এখন তাহলে আমরা বলতে পারি, ঘোড়ার বাড়ি হলো ২ নম্বর।

এখন পানীয়র সারিতে আমরা দেখছি এখনো তিনটা বাকি—পানি, চা, কফি। ১২ নম্বর সূত্রের আলোকে নরওয়েজিয়ান কিন্তু বিয়ারের লোক নন। আর ডেনিশ ভদ্রলোকের পানীয় হলো চা। এর মানে নরওয়েজিয়ানের জন্য বাকি থাকল পানি। এর পাশের বাড়ির লোকের পছন্দের সিগারেটের ব্র্যান্ড হলো ব্লেন্ড (১৫)। এর মানে এটি ২ নম্বর বাড়ির।

এখন ১২ নম্বর বিবেচনা করলে আমরা বুঝতে পারি, আমাদের এমন একটা বাড়ি দরকার, যার সিগারেট ও পানীয়—দুটি ঘরই খালি। এ রকম কেবল ৫ নম্বর আছে। কাজে সেখানে ব্লুমাস্টার ও বিয়ার। তাহলে ২ নম্বর বাড়িতেই চা এবং তিনি ডেনিশ। যেহেতু জার্মানের পছন্দ প্রিন্স, সেহেতু এটি ৪ নম্বর বাড়ি। কারণ, ৩ নম্বরে ব্রিটিশ এবং ৫ নম্বরে ব্লুমাস্টার। তাহলে অবশিষ্ট জাতীয়তা ৫ নম্বরের বা সুইডিশ। তাঁর আবার পোষা প্রাণী হচ্ছে কুকুর। এখন ৬ নম্বর সূত্রের তথ্যগুলোকে ৩ নম্বর ছাড়া আর কোথাও সেট করা যাচ্ছে না। তাহলে—

তাহলে ১০ নম্বর সূত্র অনুসারে বিড়াল পোষেন নরওয়েজিয়ান। তাহলে একটিমাত্র ঘরই খালি থাকে। ৪ নম্বর ঘরের বাসিন্দা, জার্মান ভদ্রলোকই তাহলে অ্যাকুয়ারিয়ামে মাছ পোষেন।