সমীকরণ সমাধান (পর্ব-০২)

সমীকরণ সমাধান করতে তোমাকে প্রথমেই সমান চিহ্নের এপাশ-ওপাশ অর্থাৎ দুপাশ সম্পর্কে জানতে হবে। সমান চিহ্নের একপাশ থেকে কোনো পদকে অপর পাশে নিলে অবশ্যই চিহ্ন পরিবর্তন করতে হবে। অর্থাৎ দিকের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চিহ্নের পরিবর্তন হয়ে যায়।

যেমন ধরো, সমান চিহ্নের বাঁ পাশে +3 আছে, সেটা ডান পাশে নিতে গেলে চিহ্ন পরিবর্তন করে -3 করে নিতে হবে। আবার বাঁ পাশের পুরো অংশের সাথে 4 গুণ আকারে আছে। এখন দিক পরিবর্তন করে সমান চিহ্নের ডান পাশে নিতে গেলে বাঁ পাশের 4 গায়েব করে ডান পাশের পুরো অংশকে 4 দিয়ে ভাগ করে দিতে হবে।

ব্যাপারটা উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি। একটা সমীকরণ 7a + 7 = 9a + 5 দেওয়া আছে। এখন তুমি বললে বাঁ পাশে 7 গুণ আকারে আছে, সেটা ডানে নিয়ে নিলেই তো হয়। এমন করলে কিন্তু খাতায় ঘোড়ার ডিম পাবে। কারণ, তোমার 9 তো শুধুই a এর সাথে গুণ আকারে আছে। আর বাঁ পাশে নিয়ে ভাগ করলে তো ডানের 5 মূল্যহীন হয়ে যাবে।

এবার ব্যাপারটা যদি 7(a + 1) = 9a + 5 এভাবে লিখি? দেখো, বাঁ পাশের পুরোটার সাথে কিন্তু 7 গুণ আকারে আছে। এই 7 দিয়ে তুমি ডানের 9a + 5 কে নিশ্চিন্তে ভাগ করে দিতে পারো। আরেকটা ছোট্ট সূত্র বলে দিই। তোমাকে একটা সমীকরণ দিলাম 8a + 14 = 7b + 16; এবার আমি এটা একটু আমার মতো করে লিখি। 8a + 14 = 7b + 2 + 14; এখন দেখো উভয় পাশে 14 যোগ আছে। এমন হলে আমরা বলতে পারি, 8a = 7b + 2! একে বলে মুকাবালা!

এখন মনে প্রশ্ন আসতে পারে, কোন পদ বাঁ থেকে ডানে নেব, কোনটাকে ডান থেকে বাঁয়ে কিংবা কোনটাকে চুপ করে বসিয়ে রাখব, সেটা বুঝব কীভাবে? উত্তরে বলব, সদৃশ পদগুলো একই দিকে রাখার চেষ্টা করতে হবে। একটা সমীকরণ 7x + 14 = 3x + 6 সমাধান করতে হলে প্রথমেই সদৃশ পদগুলো একদিকে নিতে হবে। সদৃশ পদ বলতে একই রকম দেখতে যে পদগুলো আছে।

অর্থাৎ, এই প্রক্রিয়ার পরে সমীকরণটা দেখতে 7x + 3x = 14 + 6 এমন হবে। শুধু এক রকম দেখতে পদগুলোকে এক দিকে নিয়ে নিলাম আর কি! আর বাকি যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ করা। সেটা শেখাতে পারব না বাপু। নিজে নিজে শিখে নাও।

 

একচলক বিশিষ্ট সমীকরণ সমাধান: এক চালকবিশিষ্ট একঘাত সমীকরণ সমাধান করতে তোমার তেমন কঠিন কিছুই জানতে হবে না। যেটুকু জানতে হবে, সেটা আমি ওপরে বলে দিয়েছি। না বুঝলে আবার পড়ে আসো। যারা বুঝে ফেলেছ, তাদের একটা সমীকরণ দিলাম 9x + 13 = 7x + 15। সমাধান করে ফেলো দেখি!

 

তোমাদের সমাধান শেষ হলে আমার সঙ্গে মিলিয়ে নাও। এখানে আমাদের গুপ্ত ঘাতক যেহেতু একজন, তাই এই একটা সমীকরণ দিয়েই তুমি অজ্ঞাত চলককে খুঁজে ফেলতে পারো।

 

প্রথমে সমীকরণটা লিখি

9x + 13 = 7x + 15

এইবার সদৃশ পদগুলো এক দিকে রাখি।

9x + (-7x) = 15 + (-13)

এবার সাধারণ গাণিতিক হিসাব।

9x - 7x = 15 – 13

বা, 2x = 2

বা, x = 2/2

বা, x = 1

এই তো খুঁজে ফেলছি গুপ্ত ঘাতক! আমি কিন্তু তোমাদের না বলেই পদগুলো এদিক-ওদিক করার সময় ঠিকই চিহ্ন পরিবর্তন করে ফেলছি, সেটা খেয়াল করেছ?

 

চিহ্ন পরিবর্তন করার ব্যাপারটা অনেকে আবার করতে অভ্যস্থ না। যেমন বাঁ পাশে -3 আছে, ওটা ডানে না নিয়ে উভয় পাশে +3 যোগ করো। এতে বাঁয়ের -3 + 3 = 0 হয়ে হারিয়ে যায়, আর ডান পাশে একটা +3 চলে আসে। কথা কিন্তু একই। যে যেটায় সুবিধা বোধ করে আর কি!

এখন তোমরা মোটামুটি একটা গুপ্ত ঘাতক খুঁজতে শিখে গেছ। পরের পর্বে তোমাদের দুটি গুপ্তঘাতকের মোকাবেলা করতে হবে। তার জন্য আরো কিছু সমাধানপদ্ধতি সম্পর্কে লিখে শিগগিরই হাজির হব। টা টা!