সোহা একদিন বিকেলে তার চাচাতো বোন পুষ্পর সঙ্গে খেলছিল। হঠাৎ সেখানে তাদের এক চাচা এসে বললেন, ‘জানিস, শামপুর এলাকায় নদীর মধ্যে থেকে একটি বাড়ি উঠে এসেছে।’ সোহা আর পুষ্প এমন অদ্ভুত কথা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারল না। কিন্তু চাচা বড় মানুষ, তিনি নিশ্চয়ই ভুল কথা বলবেন না। এরপরও তারা চাচাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘আপনি কার কাছ থেকে শুনেছেন এই ঘটনা?’
চাচা বললেন, ‘আমি নিজের চোখে দেখেছি, মানে আমার মোবাইল ফোনে ভিডিও নিজের চোখে দেখেছি’ এই বলে তিনি সোহা আর পুষ্পকে মোবাইল ফোনে একটি ভিডিও দেখালেন । তারা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারল না। পুষ্প বলল, ‘এটি কোনোভাবেই সম্ভব না, চলো আমরা আরেকটু মন দিয়ে ভিডিওটি দেখে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি। চাচা বললেন, যত ইচ্ছা দেখ, ‘নিজের চোখে দেখছি, এটি ভুল হয় কীভাবে? আর নিচে তো ক্যাপশনে লেখাই আছে শামপুরে ঘটেছে এই ঘটনা’—এই বলে তিনিও সোহা আর পুষ্পর সঙ্গে ভিডিওটি মন দিয়ে দেখতে লাগলেন। তারা ভিডিওটিতে কয়েকটি অসংগতি দেখতে পেলেন—
১। বাড়িটি নদী থেকে উঠে এসেছে বলা হলেও বাড়িটি শুকনা। সত্যিই যদি নদী থেকে বাড়িটি উঠে আসত, তাহলে এটি ভেজা দেখাত।
২। ভিডিওতে শোনা যাচ্ছে আশপাশের অনেক মানুষ বাড়িটি উঠে আসার আগে চিত্কার করছেন। কিন্তু বাড়িটি নদী থেকে উঠে আসার আগে মানুষের জানার কথা নয়, এখানে একটি বাড়ি উঠে আসবে। তাই সেখানে আগে থেকে মানুষের ভিড় থাকা এবং চিত্কার করা স্বাভাবিক নয়।
৩। দেখা যাচ্ছে নদীর পাড় থেকে কিছু মাটিও উঠে আসছে।
ভিডিওটিতে এতগুলো অসংগতি খুঁজে পেয়ে সোহা ও পুষ্পর নিজেদের বেশ গোয়েন্দা মনে হলো। চাচার সঙ্গে তারা দুজন আলোচনা করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাল যে ‘এটি একটি নদী ভাঙনের দৃশ্য, একটি বাড়ি ভেঙে নদীতে তলিয়ে গেছে আর কোনো একজন অসৎ ব্যক্তি ভিডিওটিকে শেষ থেকে শুরু করে বা রিভার্স করে দিয়ে ইন্টারনেটে আপলোড করেছে। এতে শেষের দৃশ্য আগে এবং শুরুর দৃশ্য পরে মনে হচ্ছে। তাই বাড়ি নদীতে তলিয়ে যাওয়াটাকে মনে হচ্ছে নদী থেকে বাড়ি উঠে আসা।
আমরাও সোহা ও পুষ্পর মতো মাঝেমধ্যেই এ রকম ভুল তথ্য, ছবি ও ভিডিও দেখতে পাই। কিন্তু সব সময় সোহা ও পুষ্পর মতো যাচাই করে সঠিক তথ্য খুঁজে পাওয়া বা তথ্যটি যে ভুল, তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয় না। তাই আমরা আজকে প্রযুক্তি দিয়ে কীভাবে সঠিক তথ্য যাচাই করা সম্ভব, তার কয়েকটি পদ্ধতি অনুশীলন করব।
প্রকাশ কুমার দাস, সহকারী অধ্যাপক, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা