সংখ্যাতত্ত্বের গোড়াপত্তন (পর্ব–৬) | গণিত ইশকুল

বছরজুড়ে গণিত অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি

আজকে আমাদের আলোচনা হবে অঙ্ক নিয়ে।

এক (১): শূন্যের মতো ঐতিহাসিক ইতিহাস আর কোনো সংখ্যার নেই। ১ হলো ডেসিমেল ডিজিটের দ্বিতীয় প্রতীক। আমরা সাধারণত বাংলায় এক এবং ইংরেজিতে One বলে থাকি। কিন্তু এরও অনেক রূপসজ্জা আছে, যেগুলো লেখার শেষে ছবিতে দেখতে পাবে।

এটি অশূন্য স্বাভাবিক সংখ্যা এবং প্রথম বিজোড় সংখ্যাও বটে। কোনো সংখাকে ১ দিয়ে গুণ করলে ওই সংখ্যাই থাকে, তাই ১–এর ভগ্নাংশ, বর্গ, ঘন বা যেকোনো সূচকের জন্যও আউটপুট আসবে ১! একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, ১ মৌলিক সংখ্যা নয়। ১ একমাত্র ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা, যা একটি মাত্র ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য।

অন্যদিকে সব মৌলিক সংখ্যা দুটি ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা দিয়ে বিভাজ্য হয়। ১-কে আগে কিছু গণিতবিদ মৌলিক সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করতেন। কেননা, তা মৌলিক সংখ্যার একটি শর্ত (মৌলিক সংখ্যা শুধু ১ এবং ওই সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য) পূরণ করে। কিন্তু এই নিয়ম পাটিগণিতের কিছু মৌলিক সূত্রে জটিলতা তৈরি করে। তাই আধুনিক

সংজ্ঞানুসারে ১ মৌলিক সংখ্যা নয়। সবশেষ ১৮৯৯ সালে পেশাদার গণিতবিদ হেনরি লিবেসগু ১-কে মৌলিক সংখ্যা হিসেবে দেখান। কিন্তু তার পরে কেউ আর ১-কে মৌলিক হিসেবে গ্রহণ করেননি। এই ১ আবার ফিবোনাচ্চি রাশিমালার প্রথম ও দ্বিতীয় সংখ্যা (মতান্তরে ২য় ও ৩য় পদ)।

এই ১ হলো মবিয়াস সমীকরণের তিনটি সম্ভাব্য ফলাফলের মধ্যে একটি। প্রাচীন মিসরীয়রা সব ভগ্নাংশকে একাধিক ভিন্ন ভগ্নাংশের যোগ আকারে প্রকাশ করতে ভালোবাসত এবং এই ভগ্নাংশগুলোর লব ১ ও হর ভিন্ন হতো।

যেমন: 2/5 = 1/3 + 1/15 । এভাবে চেষ্টা করতে করতেই মিসরীয় ভগ্নাংশ বা একক ভগ্নাংশের প্রচলন শুরু। এদিকে আবার Generating Fuction 1/(1-x)এর বিস্তৃতিতে সব চলকের সহগ ১; সমীকরণটি হলো,

1/(1-x) = 1 + x + x2 + x3 + x4 +…

দুই (২): ডেসিমেল ডিজিটের তৃতীয় প্রতীক হলো ২। আমরা সাধারণত বাংলায় দুই এবং ইংরেজিতে Two বলে থাকি। কিন্তু এরও অনেক রূপসজ্জা আছে, যেগুলো লেখার শেষে ছবিতে দেখতে পাবে।

এর বৈশিষ্ট্য বলতে গেলে কোনো পূর্ণসংখ্যা যদি ২ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য হয়, তবে তাকে জোড় সংখ্যা বলা হয়। পূর্ণসংখ্যাগুলো যদি কোনো জোড় সংখ্যাভিত্তিক সংখ্যাপদ্ধতিতে (যেমন: ডেসিমেল, অকটাল, হেক্সাডেসিমেল ইত্যাদি) লেখা হয়, তবে শুধু সংখ্যার শেষ অঙ্কটি দেখেই সংখ্যাটি ২ দ্বারা বিভাজ্য কি না, তা বোঝা যায়।

শেষ অঙ্কটি জোড় হলে সংখ্যাটি ২ দ্বারা বিভাজ্য (অর্থাৎ জোড় সংখ্যা); আর শেষ অঙ্কটি বিজোড় হলে সংখ্যাটি বিজোড় সংখ্যা। দশমিক পদ্ধতিতে ২-এর গুণিতকগুলো সব সময় ০, ২, ৪, ৬ বা ৮ (জোড় অঙ্ক আরকি!) দিয়ে শেষ হয়।

এটি হচ্ছে ক্ষুদ্রতম মৌলিক সংখ্যা এবং একমাত্র জোড় মৌলিক সংখ্যা (এ কারণে একে ব্যতিক্রমী মৌলিক সংখ্যা বলা হয়)। আবার ২–এর পরবর্তী সংখ্যা ৩–ও মৌলিক। পরপর দুটি সংখ্যা মৌলিক হওয়ার এটিই একমাত্র ঘটনা। ২ হচ্ছে প্রথম সোফিয়ে জার্মেইন মৌলিক, প্রথম ফ্যাক্টোরিয়াল মৌলিক, প্রথম লুকাস মৌলিক এবং প্রথম রামানুজান মৌলিক সংখ্যা।


০ থেকে ৯ পর্যন্ত অঙ্কগুলোও বিভিন্ন ভাষায় বা বিভিন্ন সময়ের মানুষ কীভাবে লিখত, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি নিচের ছবিতে দেখে নাও।

ছবিসূত্র: wikipedia.org/wiki/Numerical_digit

আর যদি ০ থেকে ৯–এর পর ১১, ১২, ১৩, ...১০০, ১০০০ ইত্যাদি কীভাবে লেখা হয় পৃথিবীর নানা ভাষায় সেগুলো সবই জানতে চাও, তবে সোজা চলে যাও নিচের লিংকে:
omniglot.com/language/numbers/index.htm


এত এত ভাষায় এত রকমে যে অঙ্ক লেখা হয় দেখে অবাক হবে। দেখ তো কোনো মিল খুঁজে পাও কি না, বিভিন্ন দেশের অঙ্কের মধ্যে? সংখ্যার ইতিহাস কিন্তু বলছে কিছু না কিছু মিল আছে, থাকতেই হবে।