‘পরীক্ষার বোঝা’ কমানোর যুক্তি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ঘ ইউনিট বাদ দিয়ে বিভাগ পরিবর্তনে অন্য ‘কৌশল’ প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। তবে ঘ ইউনিট বাতিলের সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়েছেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও ওই ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার প্রধান সমন্বয়কারী সাদেকা হালিম।
আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে অবস্থিত আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চ্যুয়াল শ্রেণিকক্ষে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য অন্য ‘কৌশলের’ কথা জানান। এ সময় সাদেকা হালিম সেখানে উপস্থিত থাকলেও ঘ ইউনিট নিয়ে উপাচার্যের বক্তব্যের বিষয়ে কিছু বলেননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিট বাতিল হতে পারে—এমন আলোচনা গত বছর থেকেই চলছে। ঘ ইউনিট থাকবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপাচার্য বলেন, ‘আমাদের একাডেমিক কাউন্সিল ও সাধারণ ভর্তি কমিটির একটি সিদ্ধান্ত আছে। সেটি হলো একই সঙ্গে কীভাবে এক শাখার শিক্ষার্থীরা অন্য শাখায় যেতে পারেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে একটি কৌশল বের করার জন্য ইতিমধ্যে অনলাইন ভর্তি কমিটিকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, ডিনরা বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন। পরীক্ষার সংখ্যা আমরা যত কমাব এবং বিষয়টি যত নিয়মের মধ্যে আনব, ভোগান্তি তত কমবে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, ফলে এখন কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।’
উপাচার্য বলেন, ‘কৌশল বের করতে হবে কীভাবে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা কলা, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষায় আসতে পারেন। একই সঙ্গে কলার শিক্ষার্থী কীভাবে ব্যবসায় শিক্ষায় যেতে পারেন অথবা ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থী কীভাবে কলায় আসতে পারেন। সবাই কিন্তু সব জায়গায় পারেন না। শুধু বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা কলা, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষায় আসতে পারেন। ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীরা শুধু কলা ও সামাজিক বিজ্ঞানে আসতে পারেন। কলার শিক্ষার্থীরা পারেন শুধু ব্যবসায় শিক্ষায় যেতে। এ জন্য আমাদের একটি নীতি ও কৌশল বের করতে হবে, তাহলে একটি পরীক্ষার বোঝা কমাতে পারব। পাঁচটি থেকে আমরা চারটি ইউনিটে চলে আসতে পারব। সেই সিদ্ধান্ত আছে, এখন একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিষয়টি অনুমোদিত হলে আমরা তা বাস্তবায়ন করব।’
ঘ ইউনিট নিয়ে উপাচার্যের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন সাদেকা হালিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একাডেমিক কাউন্সিলে সংস্কার করার কথা বলা হয়েছিল, ঘ ইউনিট বাতিলের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ১৬টি বিভাগে ৩০০ জন শিক্ষক আছেন। মাননীয় উপাচার্য এটি করতে চাইলে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সেটি করা উচিত। আমি সেটাই প্রত্যাশা করছি।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এখন যাঁরা কৃতিত্বের সঙ্গে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই এই অনুষদের সাবেক শিক্ষার্থী। ঘ ইউনিটের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে অনেকেই এখন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে শিক্ষকতা করছেন।
এবার প্রথমবারের মতো ঢাকা ছাড়াও দেশের অন্য সাতটি বিভাগীয় শহরের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর পর থেকে এভাবেই পরীক্ষা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, বিভাগীয় শহরে পরীক্ষার সিদ্ধান্তটি করোনার কারণে নয়। এটি করা হয়েছে অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘব এবং অর্থ ও সময় সাশ্রয়ের জন্য।
ঘ ইউনিটের মধ্য দিয়ে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর্ব শেষ হলো। নতুন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের করা ‘ক্ষতি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা’ প্রযোজ্য হবে বলে জানান উপাচার্য। তিনি বলেন, ফল ঘোষণা শেষ হলো। যত দ্রুত সময়ে ভর্তি কার্যক্রম সমাপ্ত করা যাবে, তত দ্রুত শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা যাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজন আগামী ১ ডিসেম্বর হওয়ার কথা। সেখানে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। আয়োজনে রাষ্ট্রপতি সশরীর উপস্থিত থাকবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আয়োজনের কাজটি বঙ্গভবনের সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এটিই হলো বড় কথা। আমাদের সব প্রস্তুতি এগিয়ে চলেছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি হিসেবে শতবর্ষের আয়োজনের শুভ উদ্বোধন করবেন।’