এসএসসি পরীক্ষা–২০২১: সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুসারে

জীববিজ্ঞান | সৃজনশীল প্রশ্ন

অধ্যায় ৪

আরিক বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকে। একদিন সে একটি বড় কাচের বোতলে দুটি মাছ, কিছু সবুজ জলজ উদ্ভিদ ও পানি নিয়ে বোতলটিকে কর্ক দিয়ে এঁটে দিল। তারপর বোতলটিকে এমনভাবে রেখে দিল, যাতে দিনে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায়।

প্রশ্ন

ক. ফটোফসফোরাইলেশন কাকে বলে?

খ. সালোকসংশ্লেষণ উদ্ভিদের পাতায় হয় কেন?

গ. উল্লিখিত অবস্থায় উদ্ভিদ ও মাছগুলো কার্বন ডাই–অক্সাইড উৎপন্ন করবে কি? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. বোতলটিকে সূর্যালোকে রাখার যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করো।

উত্তর

ক. সালোকসংশ্লেষণের সময় ADP সৌরশক্তি গ্রহণ করে ATPতে পরিণত হয়। এ প্রক্রিয়াকে ফটোফসফোরাইলেশন বলে।

খ. সালোকসংশ্লেষণ: একটি জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাই–অক্সাইড, পানি, আলো ও ক্লোরোফিলের উপস্থিতিতেই শুধুমাত্র সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। উদ্ভিদের সবুজ অংশ, বিশেষ করে পাতাতেই থাকে সালোকসংশ্লেষণের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ক্লোরোফিল। উদ্ভিদের অন্যান্য অঙ্গ, যেমন কাণ্ড ও মূলে কোনো ক্লোরোফিল থাকে না। এ জন্য সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া উদ্ভিদের পাতায় সম্পন্ন হয়।

গ. উল্লিখিত অবস্থায় উদ্ভিদ ও মাছগুলো কার্বন ডাই–অক্সাইড উৎপন্ন করবে। প্রতিটি জীব শ্বসনের সময় কার্বন ডাই–অক্সাইড উৎপন্ন করে। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানি, সূর্যালোক ও কার্বন ডাই–অক্সাইড কাজে লাগিয়ে উদ্ভিদ শর্করাজাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে থাকে। উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য শক্তি প্রয়োজন। শক্তির জন্য উদ্ভিদ তার দেহে সঞ্চিত খাদ্য ব্যবহার করে থাকে। এ শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়াই হলো শ্বসন। শ্বসন প্রক্রিয়ায় জীব কোষস্থ জটিল জৈব যৌগসমূহ জারিত হয়ে সঞ্চিত স্থিতিশক্তিকে গতিশক্তিতে রূপান্তরিত করে।

শ্বসনের ফলে নির্গত এই শক্তি জীবের বিভিন্ন শক্তি শোষণকারী কাজে ব্যবহৃত হয়। গ্লুকোজকে প্রাথমিক শ্বসনিক বস্তু হিসেবে ধরা হয়। শ্বসন প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাই–অক্সাইড নির্গত হয়। উদ্ভিদ বা প্রাণী যাই হোক না কেন, শ্বসনে জটিল জৈব যৌগসমূহের জারণ ঘটে। তাই অবশ্যই কার্বন ডাই–অক্সাইড নির্গত হবে। এ জন্য উল্লিখিত অবস্থায় উদ্ভিদ ও মাছগুলো কার্বন ডাই–অক্সাইড উৎপন্ন করবে।

ঘ. সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য উৎপন্ন করে। সমস্ত প্রাণিজগৎ খাদ্যের জন্য উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ শর্করা জাতীয় খাদ্য উৎপন্ন করে। প্রথম শ্রেণির খাদক উদ্ভিদকে সরাসরি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। বোতলের ভেতরে রাখা জলজ উদ্ভিদগুলো সূর্যালোক ব্যবহার করে খাদ্য উৎপাদন করেছিল। আরিক বোতলটিতে মাছ ও জলজ উদ্ভিদ রেখেছিল প্রধানত দুটি কারণে। প্রথমত, জলজ উদ্ভিদগুলো যেন সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন উৎপন্ন করতে পারে। কারণ, অক্সিজেন ছাড়া জীব বেঁচে থাকতে পারে না। বোতলটি এমন অবস্থায় আছে, যাতে বাইরের বাতাস ও ভেতরের বাতাসের বিনিময় ঘটতে না পারে। তাই বোতলের ভেতরে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য এটিকে পর্যাপ্ত সূর্যালোকে রাখা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, খাদ্য উৎপাদনের জন্য সূর্যালোক প্রয়োজন। সূর্যালোক ছাড়া জলজ উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করতে পারবে না। বোতলের ভেতরের মাছগুলোও খাদ্যের জন্য জলজ উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। আবার মাছের শ্বসনের ফলে নির্গত কার্বন ডাই–অক্সাইড জলজ উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। মূলত জলজ উদ্ভিদের খাদ্য উৎপাদনের প্রয়োজনেই বোতলটিকে সূর্যালোকে রাখা যৌক্তিক ছিল।