শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তের পর চলতি বছরের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আবার আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে এ বছরের এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও মাদ্রাসার জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকার। শিক্ষাবোর্ডগুলোও এ বিষয়ে এখনো নির্দেশনা পায়নি।
জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা হয়ে থাকে বছরের নভেম্বর মাসে। আর স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষাগুলো হয় ডিসেম্বর মাসে। করোনা সংক্রমণের দেড় বছর বন্ধের পর ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার এই ঘোষণার সময় বলা হয়, চলতি বছরের এবং আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর পরীক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হবে।
কিন্তু অষ্টম শ্রেণির ক্লাস অন্যান্য শ্রেণির মতো সপ্তাহে একদিন রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কি এই পরীক্ষা হবে না?
এই পরীক্ষা হয় শিক্ষাবোর্ডগুলোর অধীনে। জেএসসি পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা এই পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা পাননি। মন্ত্রণালয় থেকে সবুজ সংকেত পেলে প্রস্তুতি শুরু করবেন।
করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছর এই পরীক্ষা হয়নি। তখন পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের ওপরের ক্লাসে উত্তীর্ণ করা হয়েছিল।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নেওয়ারও চেষ্টা করছেন। তবে এ জন্য আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে। আর যদি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয় তখন হয়তো অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও নিয়মিত ক্লাস হতে পারে।
এ বছরের এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর সম্ভাব্য প্রাথমিক সময়ও ঠিক করা হয়েছে। ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন প্রাথমিক চিন্তা হলো চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষা নভেম্বরের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে শুরু করা। আর এইচএসসি পরীক্ষা ডিসেম্বরের ৭-৮ তারিখের মধ্যে শুরুর করা চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। তবে সময়সূচি প্রকাশ করা হতে পারে পরিস্থিতি দেখে পরীক্ষা শুরুর সপ্তাহ দু-এক আগে। এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার মাঝে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ ব্যবধান রাখা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগেই ঘোষণা দিয়েছে, এ বছরের এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হবে শুধু গ্রুপভিত্তিক (বিজ্ঞান, মানবিক এবং ব্যবসায় শিক্ষা) তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে পরীক্ষা হবে। করোনার কারণে সময় ও নম্বর কমিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হবে এসব পরীক্ষা। আবশ্যিক বিষয় ও চতুর্থ বিষয়ে কোনো পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে না।
আবশ্যিক বিষয়গুলোর মূল্যায়ন হবে এসএসসির ক্ষেত্রে জেএসসি ও সমমান এবং এইচএসসির ক্ষেত্রে এসএসসি, জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ‘বিষয় ম্যাপিং’ করে।
করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি চলছে। দীর্ঘ বন্ধের ফলে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা স্তর পর্যন্ত চার কোটির বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারের সবশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটি আছে। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে এই ছুটি আর বাড়ছে না। পরদিন থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণার একদিন পর আজ সোমবারই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, পুনর্বিন্যাস করা (সংক্ষিপ্ত) পাঠ্যসূচিতে আগামী নভেম্বরের শেষে অথবা ডিসেম্বরের শুরুতে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।