বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) অবৈধ মুঠোফোন বন্ধের স্বয়ংক্রিয় কার্যক্রম আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু করতে চায়। সংস্থাটির নতুন চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদার বলেছেন, এই প্রযুক্তি চালু হলেও মানুষের হাতে থাকা অবৈধ মুঠোফোন বন্ধ হবে না। তবে এরপর থেকে কোনো অবৈধ মুঠোফোন নেটওয়ার্কে চালু করা যাবে না।
আজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিটিআরসির চেয়ারম্যান এসব তথ্য জানান। এতে আরও জানানো হয়, ১৬ জানুয়ারি মোবাইল অপারেটরগুলো হাতে হাতে বা ম্যানুয়াল ব্যবস্থায় নতুন ফোন নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার তথ্য বিটিআরসিকে দেওয়া শুরু করবে। এতে একটু বাড়তি সময় নিয়ে অবৈধ মুঠোফোনগুলো শনাক্ত করা যাবে। পরে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু হলে অল্প সময়ের মধ্যেই মুঠোফোন বৈধ না অবৈধ, তা ধরা পড়বে।
মুঠোফোন বৈধ না অবৈধ, তা যাচাই করতে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) নামের এই ব্যবস্থা চালু ও পরিচালনার জন্য সিনেসিস আইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে বিটিআরসি। চুক্তি অনুযায়ী ৯ জুনের মধ্যে তাদের অবৈধ মুঠোফোন বন্ধের প্রযুক্তিগত সমাধান তৈরি করার কথা।
বিটিআরসি জানিয়েছে, তাদের তথ্যভান্ডারে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি আইএমইআই নম্বর সংযোজন করা হয়েছে। ৭ কোটি ১৯ লাখ মুঠোফোন সেটের তথ্য রয়েছে। সংস্থাটির মহাপরিচালক (সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ বলেন, ১ জুলাই থেকে এনইআইআর চালু হলে গ্রাহকের হাতে থাকা মুঠোফোনগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়ে যাবে।
অভিযোগ আছে, বাজারে একই আইএমইআই নম্বরে একাধিক মুঠোফোন রয়েছে। আবার অনেক মুঠোফোন কর ফাঁকি দিয়ে আনা। কিছু মুঠোফোন চুরি হওয়া। এসব অবৈধ মুঠোফোনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদার বলেন, ‘বিদ্যমান মুঠোফোনগুলোকে আমরা ডিস্টার্ব না করার চিন্তাই করছি।’
অবৈধ মুঠোফোন বন্ধে বিটিআরসির এই কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে কর ফাঁকি দিয়ে আমদানি, একই আইএমইআই নম্বর ব্যবহার করে নকল মুঠোফোন বাজারে ছাড়া ও চুরি করা ফোন ব্যবহার বন্ধে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, দেশে ২৫-৩০ শতাংশ স্মার্টফোন অবৈধভাবে আমদানি করা হয়, যার কারণে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারায় সরকার।
এর আগে বিটিআরসি জানিয়েছিল, বিদেশ থেকে ব্যক্তিগতভাবে নিয়ে আসা, কারও উপহার বা অনলাইনে কেনা মুঠোফোনের ক্ষেত্রে রসিদ যাচাই করে নিবন্ধন দেওয়া হবে। বিদেশ থেকে উপহার পাওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রমাণ দেখাতে হবে। একই ব্যক্তি বারবার উপহার দিচ্ছেন, তা দেখানো যাবে না।
অনুষ্ঠানে বিটিআরসির পক্ষ থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে টেলিযোগাযোগ খাতের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। সংস্থাটি জানায়, আলোচ্য সময়ে মুঠোফোন গ্রাহক বেড়েছে ২৮ লাখ। ইন্টারনেট গ্রাহক বেড়েছে ১ কোটি ১১ লাখ। চতুর্থ প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা ফোর-জির গ্রাহক বেড়েছে ১ কোটি ৬৮ লাখ। ব্যান্ডউইডথের ব্যবহার ৬৩৪ জিবিপিএস বেড়ে ১ হাজার ৮২৬ জিবিপিএসে উন্নীত হয়েছে। ব্যান্ডউইডথের দাম আর ৫০ টাকা কমিয়ে এমবিপিএসপ্রতি ৩৫০ টাকা করা হয়েছে।
এ ছাড়া বিটিআরসি জানায়, দেশে এখন ১২টি মুঠোফোন তৈরির কারখানা হয়েছে। সেগুলোতে বিগত দেড় বছরে ৩ কোটি ৩৮ লাখ মুঠোফোন সেট তৈরি হয়েছে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, তিনি যোগ দেওয়ার পরই খাতসংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। সমস্যাগুলো জানছেন। ধাপে ধাপে সমস্যার সমাধান করবেন। গ্রাহক সেবার মানোন্নয়নে কাজ করবেন।
অনুষ্ঠানে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র, কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হুসেইন, স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল আলম, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. এহসানুল কবির, লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক আশিষ কুমার কুণ্ডু, প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক মো. দেলোয়ার হোসাইন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিটিআরসির উপপরিচালক (গণমাধ্যম) জাকির হোসেন খান।