বোকার মতো প্রশ্ন হয়ে গেল। ফেসবুকে ঢুকলেই তো বোঝা যায়, সেটা চালু আছে কি না। আবার জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে উঁকি দিলেও নাকি টের পাওয়া যায়। এই তরিকা কিন্তু আমার বানানো নয়। আপনারাই বাতলে দিয়েছেন। ফেসবুকে প্রথম আলোর পোস্টের নিচে কমেন্টে এক পাঠক লিখেছেন, ‘বাইরে তাকিয়ে দেখি, সব বাড়ির বাতি নেভানো। বুঝলাম ফেসবুক এখন অচল।’
দাঁড়ান, ফেসবুক বন্ধের খবরে আপনাদের আরও কিছু মন্তব্য দিচ্ছি এখানে। একজন বলেছেন, ‘তিনবার ফোন আছাড় দিয়েছি, কাজের কাজ কিছু হয় নাই। খালি খালি চোখের সামনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল সাধের স্মার্টফোন।’ আরেকজন ধরেই নিয়েছেন সমস্যা তাঁর বাসার রাউটারে। বারবার রিস্টার্ট দিয়েও কাজ না হলে হাল ছেড়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সে রাতটা নাকি তিনি নাক ডেকে ঘুমিয়েছেন। এরপরও যদি বলেন, দুনিয়ায় হাজারো বিষয় থাকতে কেন এ নিয়ে লিখছি, তাহলে আপনার খবর আছে।
তবে যাঁরা নিজের ডিভাইসে সমস্যা আছে বলে মনে করেছেন, তাঁদের চিন্তার ধারা ঠিক আছে। কারণ, ফেসবুকের সার্ভারে সমস্যা তো হররোজ হয় না। ফোন, কম্পিউটার কিংবা রাউটারেও সমস্যা হতে পারে। ফেসবুক অ্যাপে সমস্যা থাকতে পারে, আবার কেবল আপনার অ্যাকাউন্টও বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। অর্থাৎ সমস্যা কি সবার নাকি আপনার একার, তা কোনো কোনো ক্ষেত্রে খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে যায়। চলুন দেখি, আপনার মুশকিল আসান করা যায় কি না।
শুরুতেই ফেসবুকের প্ল্যাটফর্ম স্ট্যাটাস ওয়েবপেজ দেখুন। সেখানে কোনো সেবায় বিঘ্ন থাকলে দেখাবে। তবে পেজটি ফেসবুকের সার্ভারেই থাকে। সমস্যার ধরন বুঝে কখনো কখনো তথ্যগুলো হালনাগাদ না-ও থাকতে পারে।
টুইটারে #facebookdown হ্যাশট্যাগ খুঁজে দেখুন। অন্য ব্যবহারকারীদের টুইটে সময় দেখে বোঝার চেষ্টা করুন, একই সময় আর কেউ ফেসবুকে সমস্যার মুখে পড়েছেন কি না।
টুইটারে যখন ঢুকেছেনই, সেখানে ফেসবুকের পেজ থেকে দেখে আসতে পারেন প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কোনো আপডেট দেওয়া হয়েছে কি না। তবে আপনি যদি টুইটার, ইউটিউবসহ অন্যান্য জনপ্রিয় ওয়েবসাইট দেখতে না পারেন, তবে সমস্যা আপনার ডিভাইসে কিংবা ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানেও (আইএসপি) হতে পারে।
জনপ্রিয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো বন্ধ থাকলে ব্যবহারকারীরা সচরাচর ডাউনডিটেকটর ডটকমে জানিয়ে থাকেন। এমন আরও কিছু সেবার ফেসবুক অংশ থেকে বোঝার চেষ্টা করতে পারেন, যেমন ডাউন ফর এভরিওয়ান অর জাস্ট মি, ইজ ইট ডাউন রাইট নাউ কিংবা আউটেজ ডট রিপোর্ট।
সংবাদমাধ্যমে চোখ রাখুন। ঘটনা বড় হলে দ্রুততম সময়ে খবর চলে আসার কথা।
আর কেউ যদি সমস্যার কথা না জানিয়ে থাকেন, তবে ধরে নিতে হবে সেটা আপনার প্রান্তে।
ফেসবুকের ওয়েব ঠিকানা ঠিক লিখেছেন কি না, তা দেখতে পারেন। আইওএস বা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ হলে সেটি ফেসবুকের অফিশিয়াল অ্যাপ কি না, তা-ও দেখে নিতে পারেন।
ওয়েব ব্রাউজার থেকে ফেসবুক দেখতে না পারলে অ্যাপ থেকে দেখার চেষ্টা করুন। অ্যাপে সমস্যা পেলে স্মার্টফোন বা ট্যাবের ব্রাউজারে দেখতে পারেন।
ব্রাউজারের ক্যাশ ও কুকিজ পরিষ্কার করে দেখতে পারেন। সেটিংসে অপশনগুলো পাবেন।
অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার দিয়ে ডিভাইসের ম্যালওয়্যার স্ক্যান করতে পারেন।
ডিভাইস বন্ধ করে চালু (রিস্টার্ট) করে দেখতে পারেন।
অনেক সময় স্থানীয়ভাবে ফেসবুক বন্ধ রাখা হয়। সেটা বুঝতে চাইলে ভিপিএন ব্যবহার করে পরীক্ষা করা একটি উপায়।
কোনো কিছুতেই কিছু না হলে ধরে নিতে হবে আপনার ইন্টারনেটে সমস্যা। হয় সংযোগ বন্ধ আছে, নয়তো গতি কম। আবার একসঙ্গে অনেক মানুষ এক নেটওয়ার্কে যুক্ত হলেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আবার অনেক সময় ফেসবুকের পক্ষ থেকেই সেবা বিঘ্নের খবর জানিয়ে দেওয়া হয়। তেমন কোনো বার্তা পেলে পড়ে বোঝার চেষ্টা করতে পারেন। তা ছাড়া সার্ভার ডাউন থাকলে ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীদের তা জানিয়ে দেওয়ার একটি সুবিধা নিয়েও পরীক্ষা–নিরীক্ষা চলছে।
ফেসবুক নিয়ে এত মাথা ঘামিয়ে কীই–বা হবে বলুন! ফেস বাদ দিয়ে শুধু বুক (বই) নিয়ে পড়ুন। নয়তো ওপরে উল্লেখ করা পাঠকের মতো নাক ডেকে ঘুমান।