সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট বলতে মূলত মার্ক জাকারবার্গের হাত ধরে ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করা ফেসবুককেই আমরা বুঝি। জনপ্রিয়তা ও সফলতার কারণেই এমনটা হয়েছে। ফেসবুক চালু হওয়ার পর এবং আগেও অনেক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম চালু হয়েছিল। তবে এগুলোর কোনোটাই ফেসবুকের মতো জনপ্রিয় ও ব্যবসাসফল হয়নি। অরকুট, মাই স্পেস, ফ্রেন্ড স্টার, সিক্সডিগ্রিস, এইচ আই ফাইভ, ক্লাসমেটস ও গুগল প্লাস ফেসবুকের মতো জনপ্রিয় ও সফল হয়নি। জনপ্রিয়তায় ফেসবুকের ধারে-কাছে না থাকা এসব সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের কয়েকটি বন্ধ হয়েছে আবার কয়েকটি কোনো রকমে চালু আছে। এই সাইটগুলো ফেসবুকের মতো কেন হতে পারেনি, তা পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো:
ভারতে আবার অরকুটের পুনর্জন্ম হতে যাচ্ছে। অরকুট যাঁর হাত ধরে যাত্রা শুরু করেছিল, তাঁর হাতেই আবার হ্যালো নামের নতুন একটি অ্যাপ সম্প্রতি ভারতে চালু হয়েছে। অনলাইনে বন্ধুদের সঙ্গে সংযোগের এই অ্যাপ্লিকেশন ফেসবুকের আগে যে ভারতীয়রা গ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের বন্ধুত্বের ব্যাপারে পুরোনো দিনগুলো স্মরণ করিয়ে দিতে পারে।
অরকুট
অরকুটের প্রতিষ্ঠাতা হলেন অরকুট বুয়োক্কুকটেন। ২০০৪ সালে ১ জানুয়ারি যাত্রা শুরু হয় অরকুটের। বেশি বন্ধু ও ব্যবহারকারীকে আকৃষ্ট করতে না পারায় ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে এক সময় ভারতে অন্যতম জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের এই সাইট বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক চালু হওয়ার দুই সপ্তাহ পরে গুগলের তুর্কি প্রকৌশলী বুয়োক্কুকটেন অরকুট চালু করেন। তবে গুগলের সামাজিক মাধ্যম অরকুট যুক্তরাষ্ট্রে সাফল্য না পেলেও ব্রাজিল ও ভারত যে বড় দুটি বাজার, তা শুরুর দিকে কিছুটা প্রমাণিত হয়। কিন্তু ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে বন্ধুসংখ্যা এবং ব্যবহারকারীর দিক দিয়ে ভারতে অরকুটকে পেছনে ফেলে ফেসবুক। এর এক বছর পর ব্রাজিলেও এগিয়ে যায় ফেসবুক।
ফেসবুকের কাছে শীর্ষস্থান হারানোর সময় ভারতে ১ কোটি ৯০ লাখ এবং ব্রাজিলে ৩ কোটি ৪০ লাখ ব্যবহারকারী ছিল অরকুটের। ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়িক দিক দিয়ে টিকতে না পেরে ২০১৪ সালের ৩০ আগস্ট গুগল অরকুট বন্ধ করে দেয়।
মাই স্পেস
মাই স্পেসের প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস ডে ওল্ফ ও টম অ্যান্ডারসন। ২০০৩ সালে আগস্টে চালু হয় মাই স্পেস। এখনো সক্রিয় থাকা সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যম কতটা বড় ও এর ব্যাপকতা কতটা ছিল, তা এখন কল্পনা করাও কঠিন। কারণ, ২০০৬ সালে পেজ ভিউয়ের দিক থেকে ইয়াহু ও গুগলকে হটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বৃহত্তম ওয়েবসাইট হিসেবে পরিণত হয় মাই স্পেস। এর আগের বছরে রুপার্ট মারডকের নিউজ করপোরেশন ৫৮ কোটি ডলারে কিনে নেন মাইস্পেস। ২০০৭ সালে যখন মাইস্পেসের ৩০ কোটি ব্যবহারকারী দাঁড়ায় তখন এর মূল্যমান ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারে।
কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই মাইস্পেসকে ধরে ফেলে ফেসবুক। এরপরই নিউজ করপোরেশন ২০১১ সালে জুন মাসে মাত্র ৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারে বেঁচে দেয় মাইস্পেসকে।
ফ্রেন্ড স্টার
জোনাথন আব্রামস এবং পিটার চিনের হাত ধরে ২০০২ সালে মার্চে চালু হয় ফ্রেন্ড স্টার। ২০১১ সালে অনলাইন গেমিং হিসেবে যাত্রা শুরুর পরে ২০১৫ সালের জুনে বন্ধ হয়ে যায় এটি। চালুর এক বছরের মধ্য ফ্রেন্ড স্টার ব্যবহারকারী ছিল ৩০ লাখ। প্রতিদ্বন্দ্বী মাইস্পেস এবং ফেসবুকের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল ফ্রেন্ড স্টারকে।
২০০৯ সালে মালয়েশিয়ার ইন্টারনেট কোম্পানির কাছে ১০ কোটি ডলারে বিক্রি করা হয়েছিল ফ্রেন্ড স্টার। বিক্রি করার সময় এশিয়াতেই এর ব্যবহারকারী ছিল ৭ কোটি ৫০ লাখ। ২০১১ সালে ফ্রেন্ড স্টার অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্ম ফরম হিসেবে যাত্রা শুরু করে। সফল না হওয়ায় এর চার বছর পর তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সিক্সডিগ্রিস
সিক্সডিগ্রিসের প্রতিষ্ঠাতা হলেন এন্ড্রু ওয়েনরিচ। ১৯৯৭ সালের জানুয়ারিতে যাত্রা শুরুর চার বছর পরেই বন্ধ হয়ে যায় সিক্সডিগ্রিস। ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মধ্য প্রথম চালু হয় সামাজিক যোগাযোগের এই সাইটটি। সামাজিক যোগাযোগের প্রথম মাধ্যম সিক্সডিগ্রিস এর ব্যবহারকারী এক সময় ছিল ৩৫ লাখের মতো। কিন্তু ওই সময় ইন্টারনেট সংযোগের সীমাবদ্ধতার কারণে এটা বেশি দূর যেতে পারেনি বলে ধারণা করা হয়।
১৯৯৯ সালে ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলারে ইয়ুথ স্ট্রিম মিডিয়া নেটওয়ার্কের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয় সিক্সডিগ্রিস। এর দুই বছর পরে এটি বন্ধ হয়ে যায়।
এইচ আই ফাইভ
রামু ইয়ালামানচির হাত ধরে ২০০৪ সালের জুনে যাত্রা শুরু হয় এইচ আই ফাইভের। শুরুর পরই কয়েক বছর সামাজিক অন্য মাধ্যমগুলোর মধ্য বেশ জনপ্রিয় ছিল এইচ আই ফাইভ। ২০০৭ সালে মাই স্পেসের পরে দ্বিতীয় স্থানে ছিল এইচ আই ফাইভ। ২০১১ সালে সামাজিক নেটওয়ার্ক ট্যাগেড এর কাছে বিক্রি হয়ে যায় এইচ আই ফাইভ। এর পরে ট্যাগেড ও এইচ আই ফাইভ সম্মিলিতভাবে মিটমির কাছে বিক্রি হয় ৬০ কোটি ডলারে। ফেসবুকের মতো সফল না হলেও এখন টিকে আছে এইচ আই ফাইভ।
ক্লাসমেটস
স্কুল ও কলেজে নিজেদের বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগের একটি উপায় হিসাবে ২০০৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্লাসমেটসের যাত্রা শুরু। র্যান্ডি কনরাডসের হাতে যাত্রা শুরুর পর ক্লাসমেটস এখনো যুক্তরাষ্ট্রে তেমনি অবস্থায় আছে। এখনো এটি স্কুল ও কলেজে নিজেদের বন্ধু-বান্ধবদের কাছে মোটামুটি জনপ্রিয়।
ওয়েবসাইটটি ২০০৪ সালে ১০ কোটি ডলারে কিনে নেয় ইউনাইটেড অনলাইন। ২০১৫ সালে ক্লাসমেটস অন্য একটি তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।
গুগল প্লাস
২০১১ সালে যাত্রা শুরুর পর এখনো সক্রিয়। সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইট অরকুট এবং বাজের ব্যর্থতার পরই গুগল ফেসবুকের সঙ্গে পাল্লা দিতে গুগল প্লাস চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। জিমেইল ব্যবহারকারীদের মধ্য ‘সার্কেল’ গড়ার লক্ষ্যে এবং বন্ধুদের বিকল্প কিছু দিতেই গুগল প্লাসের যাত্রা শুরু। কিন্তু ব্যবহারকারীরা এটি খুব বেশি ব্যবহার করেনি। তাই ২০১৫ সালের শেষের দিকে নতুন করে এটির নকশা করা হয়।
ইকোনমিক টাইমস অবলম্বনে রাশেদুল আলম রাসেল