ফেসবুকের নীতিমালায় যা আছে

ফেসবুক কনটেন্ট নিয়ে খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে অস্ট্রেলিয়া
ছবি: রয়টার্স

অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী চলতি সপ্তাহে হুট করেই একটি পপ-আপ বার্তা পাচ্ছেন। এ বার্তার মাধ্যমে ফেসবুক তাদের প্ল্যাটফর্মের পরিষেবার শর্তাদিতে আগত পরিবর্তন সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছে।

অনেকেই ফেসবুকের এ দীর্ঘ নীতিমালা পড়ে দেখেন না। কিন্তু ব্যবহারের শর্তাবলিতে যে পরিবর্তন আসছে, তা জেনে রাখা জরুরি বলেই মনে করছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা।
ফেসবুকের বার্তাটিতে বলা হচ্ছে, ‘১ অক্টোবর থেকে এটি কার্যকর হবে।

এতে ফেসবুকের সেবা নীতিমালার ৩.২ ধারায় পরিবর্তন আসছে। এতে যুক্ত হচ্ছে একটি শর্ত। সে অনুযায়ী ফেসবুক চাইলে ব্যবহারকারীর জন্য কোনো কনটেন্ট দেখানো বন্ধ করতে পারে বা কোনো সেবা বা তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে।

ফেসবুক যদি নির্ধারণ করে যে তাদের বিরুদ্ধে আনা বিরূপ আইনি বা নিয়ন্ত্রক প্রভাব এড়াতে বা প্রশমিত করতে সেবা বন্ধ করা যৌক্তিক, তবে তারা তা করতে পারবে।’

ফেসবুকের পক্ষ থেকে এ ধরনের বার্তা দেওয়া অনেকটাই অস্বাভাবিক। ফেসবুক সাধারণত টাইমলাইন পাশ কাটিয়ে নির্দিষ্ট কোনো পরিবর্তনের জন্য এ ধরনের বার্তা দেয় না। ফেসবুকের বার্তাটি বিশেষ রহস্যপূর্ণ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। তাদের বার্তার মধ্যে যে ‘নিয়ন্ত্রক প্রভাব’ শব্দ যুক্ত করা হয়েছে, তাতে রহস্য লুকিয়ে আছে। প্রশ্ন উঠছে, ফেসবুক কি তবে কোনো নিয়ন্ত্রক প্রভাবের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে।

এ প্রশ্নের উত্তর মিলতে পারে ফেসবুকের বর্তমান প্রচেষ্টার দিকে তাকালে। বার্তাটি জল্পনা তৈরি করেছে যে ফেসবুক আপত্তিজনক বিষয়বস্তু সরিয়ে বা সেন্সর দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, অন্যথায় মার্কিন নির্বাচনের আগেই উন্মুক্ত আলোচনার বিষয়গুলোর ওপর পর্দা টানতে হবে তাদের। কারণ, ফেসবুকের এ ধরনের আলোচনার ক্ষেত্রে ফেসবুকের স্বচ্ছতা এবং তথ্য গোপনীয়তার মতো বিষয়গুলো এখন প্রশ্নবিদ্ধ। সম্প্রতি ভারতে ফেসবুক এমনই এক জটিলতায় পড়েছে।

রাজনৈতিক পক্ষপাত ও ঘৃণ্য বক্তব্যের অভিযোগে ফেসবুকের ভারতীয় কর্মকর্তাদের একটি সংসদীয় কমিটির মুখোমুখি হতে হয়েছে। ফেসবুকের এই কর্মীদের বিরুদ্ধে তাঁদের প্ল্যাটফর্মের ঘৃণ্য বক্তৃতা বিধি লঙ্ঘন করলেও ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সমর্থকদের বিরুদ্ধে সহজ পদক্ষেপ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

বিজেপির পক্ষ থেকেও ফেসবুকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে।

অন্যদিকে ফেসবুককে বড় ধরনের আইনি লড়াই চালাতে হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়। দেশটির আইনপ্রণেতারা একটি খসড়া আইন প্রস্তাব করেছেন যাতে খবর প্রকাশকদের কনটেন্ট ফেসবুকে প্রকাশ করা হলে তার জন্য ফেসবুককে অর্থ পরিশোধ করতে হবে বলে উল্লেখ রয়েছে।

ফেসবুক এক ব্লগ পোস্টে বলেছে, তারা খবর প্রকাশকদের অর্থ দিতে চায় না। তারা অস্ট্রেলিয়ার ফেসবুক ব্যবহারকারীদের হুমকি দিয়ে বলেছে, খসড়া আইনটি কার্যকর করা হলে তারা অস্ট্রেলিয়ার ব্যবহারকারীদের খবর দেখানো বন্ধ করে দেবে।

অবশ্য, ফেসবুক তাদের নীতিমালায় যে পরিবর্তন এনেছে, তা অস্ট্রেলিয়ায় বিধিনিষেধের আওতায় পড়ার চেয়েও বড় কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার আইনপ্রণেতারা যদি প্রস্তাবিত খসড়াটিকে আইনে রূপ দেন, তবে অন্য দেশগুলো দ্রুত এর অনুকরণ করবে।

এর ফলে ফেসবুকের মতো ডিজিটাল সাইটগুলোর জন্য ব্যবহারকারী উৎপাদিত কনটেন্টের জন্য অর্থ পরিশোধ করতে হবে এবং আর্থিক দৃশ্যপট বদলে যাবে। এখন ফেসবুক ব্যবহারকারীর কাছ থেকে কেবল কনটেন্ট দেখানো, ক্লিক ও লাইকের লোভ দেখিয়ে বিনা মূল্যে সাইটে কনটেন্ট পোস্ট করার সুযোগ দেয়।

ফেসবুকের একজন মুখপাত্র ফাস্ট কোম্পানিকে বলেন, ‘ব্যবহারকারীর পরিষেবা শর্তাদিতে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, এতে আমাদের সেবার পরিবর্তন আরও সহজ করবে। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়াও রয়েছে। সম্ভাব্য নিয়ন্ত্রণ বা আইনি পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় আমাদের ব্যবহারকারীদের পরিচালনা এবং সমর্থন অব্যাহত রাখতে এ ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।

হার্ভার্ড ল স্কুলের সাইবার ল ক্লিনিকের পরামর্শক ম্যাসন কর্তজ বলেন, ফেসবুকের নীতিমালা হালনাগাদে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তা ব্যাপক অর্থ প্রকাশ করে। তবে ফেসবুকের যা করার ক্ষমতা রয়েছে, এতে এটি কোনো বড় অবস্থান পরিবর্তন হিসেবে চিহ্নিত হয় না।

ফেসবুক বলতে চাইছে, অস্ট্রেলিয়ার সরকারের প্রস্তাবিত আইনের মতোই অন্য দেশের সরকার যদি নির্দিষ্ট কনটেন্টের জন্য ফেসবুককে দায়ী করতে চায় বা কনটেন্ট নির্মাতাদের ক্ষতিপূরণ দিতে বলে, তবে ওই কনটেন্ট ফেসবুক মুছে দেবে। এটি পরিষ্কার বক্তব্য, তবে এটি ফেসবুকের ক্ষমতার পরিবর্তন কি না, তা বলা যাচ্ছে না।

কর্তজ বলেন, ফেসবুকের শর্তে এর মধ্যে যৌক্তিকভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া আছে। এতে এটি নির্বিচারে কনটেন্ট সরিয়ে ফেলতে পারে। ফেসবুক লাভজনক কোম্পানি হিসেবে তারা নিজেদের কনটেন্ট নীতিমালা তৈরি করতে পারে। তবে, ফেসবুক দাবি করছে, নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হলে তা ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।