যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন এবং দেশের ৪৮ অঙ্গরাজ্য মিলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মামলাটি করা হয়েছে। এতে ফেসবুকের বিরুদ্ধে উঠতি প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোকে অবৈধভাবে নির্মূল করে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে কোনো ব্যবসায় একচেটিয়া অধিকার ভোগ করার সুযোগ নেই। ফেসবুক এ আইনের লঙ্ঘন করে সামাজিক মাধ্যমের একচেটিয়া প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
অ্যান্টি ট্রাস্ট আইনের এ মামলায় বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমটি একচেটিয়া ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রতিযোগিতা মেনে না নেওয়ার আচরণ দেখিয়ে আমেরিকার বাণিজ্যনীতির লঙ্ঘন করছে ফেসবুক। তাদের এ একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের কাঠামো ভেঙে দেওয়ার জন্য মামলায় আদালতের আদেশ কামনা করা হয়েছে।
ফেসবুকের একচেটিয়া ব্যবসার বিষয়টি নিয়ে ফেডারেল এবং রাজ্যগুলোর নীতিনির্ধারকেরা বছরখানেক থেকে তদন্ত করে আসছেন। ভিন্ন এক মামলায় তাঁরা বলছেন, ২০১২ সালে ইনস্টাগ্রামকে ১০০ কোটি ডলার দিয়ে এবং দুবার হোয়াটসঅ্যাপকে ১ হাজার ৯০ কোটি ডলার দিয়ে কিনে নিয়েছে ফেসবুক। এ দুটি কোম্পানি দ্রুত সামাজিক মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছিল। ফেসবুকের একচেটিয়া প্রাধান্যের প্রতি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। চুক্তি দুটি সম্পন্ন হওয়ার পর ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হতে থাকে।
ফেসবুক বিশ্বের শীর্ষ তিনটি জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম এবং মেসেজিং অ্যাপের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। মাত্র ১৬ বছর আগে কলেজ ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে সৃষ্টি হওয়া ফেসবুক দ্রুত ইন্টারনেট ‘পাওয়ার হাউসে’ পরিণত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এবং রাজ্য কর্তৃপক্ষ এখন ফেসবুক ভেঙে দেওয়ার কথা বলছে। যাতে করে কোনো একটি কোম্পানি বিশ্বের পুরো সামাজিক মাধ্যমের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে।
মার্কিন ফেডারেল ট্রেড কমিশনের পরিচালক আইয়ান কনার বলেছেন, ফেসবুক তাদের তৎপরতার মাধ্যমে বাজার থেকে প্রতিযোগিতা তুলে দিয়েছে। মামলার মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একচেটিয়া আধিপত্য দূর করা এবং প্রতিযোগিতার বাজার সৃষ্টি করাই তাদের লক্ষ্য।
নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লতিশিয়া জেমস ফেসবুকের বিরুদ্ধে ১৪ মাস আগে তদন্ত শুরু করেন। তাঁর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আরও ৪০টি রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলরা যোগ দিয়েছেন এ মামলায়। লতিশিয়া জেমস বলেছেন, এক যুগের বেশি সময় থেকে ফেসবুক আধিপত্য বিস্তার করে একচেটিয়া হয়ে উঠেছে। তাদের আধিপত্যের কারণে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান দাঁড়াতে পারছে না। ফেসবুক তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের নানাভাবে দমানোর চেষ্টা করে আইনের লঙ্ঘন করেছে।
ফেসবুকের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেনিফার নিউস্টেড বলেছেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিতে বাধ্য নয়। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কার্যকর সেবা পায় বলেই লোকজন ফেসবুকের সেবা গ্রহণ করে।