পাসওয়ার্ড দিতে যে ভুল করবেন না

পাসওয়ার্ড নির্বাচনে কৌশলী হতে হবে
ছবি: রয়টার্স

ডিজিটাল এ যুগে পাসওয়ার্ড বা পিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, ব্যাংকের অ্যাপ, ই-কমার্স সাইটসহ অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন সেবা নিরাপদে ব্যবহার করতে সহজে অনুমান করা যায় না—এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহারের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

এখন স্মার্টফোন ও অন্য ডিভাইসের ক্ষেত্রেও পিন দিয়ে তা সুরক্ষিত রাখতে বলেন। এর পাশাপাশি বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশন হিসেবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তির ব্যবহার ও দ্বিস্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তাপদ্ধতির ওপর জোর দিতে বলেন।

একই পাসওয়ার্ড সব ডিজিটাল অ্যাকাউন্টে ব্যবহারের পরিবর্তে ভিন্ন ভিন্ন অ্যাকাউন্টে পৃথক পাসওয়ার্ড ব্যবহারের পরামর্শ মানতে গিয়ে অনেকের জন্য পাসওয়ার্ড ব্যবস্থাপনা ও মনে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এ ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই সংক্ষিপ্ত পথ বেছে নিতে গিয়ে বড় ধরনের ভুল করে বসেন। এতে সহজেই সাইবার দুর্বৃত্তরা অ্যাকাউন্টের নাগাল পেয়ে যায়। হ্যাকড হয়ে যায় অ্যাকাউন্ট।

সহজে অনুমান করা যায় বা সহজে ভেঙে ফেলা যায়—এমন পাসওয়ার্ড দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবহার করেন অনেকে। এ কারণে অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নেওয়া সহজ হয়।

অনলাইনে নিরাপদ থাকতে তাই পাসওয়ার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো:

প্রতিবছরই সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলো সাইবার আক্রমণ ও হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়া বিভিন্ন অনলাইন অ্যাকাউন্ট বিশ্লেষণ করে দেখে। তাদের দাবি, সাইবার আক্রমণের শিকার হওয়ার মূল কারণই থাকে দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহারের বিষয়টি।

সহজে অনুমান করা যায় বা সহজে ভেঙে ফেলা যায়—এমন পাসওয়ার্ড দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবহার করেন অনেকে। এ কারণে অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নেওয়া সহজ হয়।

গত বছরে সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান স্প্ল্যাশডেটা অনলাইনে ফাঁস হওয়া কয়েক কোটি পাসওয়ার্ড বিশ্লেষণ করে সহজে হ্যাক করা যায়—এমন কয়েকটি পাসওয়ার্ডের তালিকা প্রকাশ করে। এ পাসওয়ার্ডগুলো ব্যবহার খুবই বিপজ্জনক।

কেউ এ তালিকায় থাকা কোনো পাসওয়ার্ড অনলাইন অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করলে তা বাদ দিয়ে জটিল ও সহজে অনুমান করা যায় না—এমন পাসওয়ার্ড বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। পাসওয়ার্ডগুলো হচ্ছে 000000,111111, 112233, 123456, 12345678, 123456789, 1 qaz 2 wsx 8, 3154061, 456 a 33, 66936455, 789 _ 234, aaaaaa, abc 123, career 121, carrier, comdy, cheer!, cheezy, Exigent, old 123 ma, opensesame, pass 1, passer, passw 0 rd, password, password 1, penispenis, snowman,! qaz 1 qaz, soccer 1, student, welcome।
একই পাসওয়ার্ড বিভিন্ন অনলাইন অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করা বিপজ্জনক বলে তা করা যাবে না। সহজ পাসওয়ার্ড হ্যাক করা হ্যাকারদের জন্য খুব কঠিন কিছু নয়। একই পাসওয়ার্ড সব অ্যাকাউন্টে থাকলে তাতে হ্যাকারদের জন্য এসব অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সহজ হয়ে যায়।

পাসওয়ার্ড নিয়মিত পরিবর্তন ও হালনাগাদ করতে হবে। পুরোনো পাসওয়ার্ড বারবার ব্যবহার করা বিপজ্জনক। নতুন কোনো অ্যাকাউন্ট তৈরি করলে তাতে পুরোনো কোনো পাসওয়ার্ড দেবেন না। এর বদলে অক্ষর, সংখ্যা, চিহ্ন মিলিয়ে জটিল পাসওয়ার্ড তৈরি করে তা ব্যবহার করুন। হ্যাকাররা সব সময় ডার্ক ওয়েবে পুরোনো পাসওয়ার্ড খুঁজতে থাকে। এ কারণে নতুন পাসওয়ার্ড ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ।

কেউ নতুন পাসওয়ার্ড সেট করার পর তা মনে রাখার জন্য জিমেইল, গুগল ডকস বা অন্য অনলাইনে সংরক্ষণ করে রাখেন। এ পদ্ধতি বিপজ্জনক। একবার কোনো অ্যাকাউন্ট বেহাত হলে পাসওয়ার্ড হ্যাকারদের হাতে চলে যায়। তাই পাসওয়ার্ড কোথায় সংরক্ষণ করবেন, তা বিবেচনা করা জরুরি। অনেকে ক্রোম ব্রাউজার বা অন্য কোনো ব্রাউজারে পাসওয়ার্ড রেখে দেন। কোনো ক্ষতিকর ওয়েবসাইটে গেলে বা সিস্টেমে ম্যালওয়্যার ঢুকে গেলে পাসওয়ার্ড ঝুঁকিতে পড়ে যায়।

অ্যাকাউন্ট সুরক্ষার জন্য টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন বা দ্বিস্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা এখন জরুরি। এতে অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে বাড়তি নিরাপত্তা যুক্ত হয়। ফলে, হ্যাকারদের জন্য অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

অনেকেই পাসওয়ার্ড হিসেবে জন্মদিন, বিয়ের তারিখ বা নানা রকম তারিখ ব্যবহার করেন। কিন্তু পিন বা পাসওয়ার্ড হিসেবে হ্যাকাররা অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নেওয়ার সময় সবার আগে এগুলোই ব্যবহার করে থাকে। অনেকেই পিন দেওয়ার সময় জন্মদিন ও পরে মাস লিখে পিন তৈরি করেন। এ পদ্ধতিও এখন ঝুঁকিপূর্ণ। এর বাইরে অনেকে প্রিয়জনের নাম বা প্রিয় জিনিসের নাম পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন।

সহজে অনুমান করা যায়—এমন পাসওয়ার্ড এড়িয়ে চলাই যুক্তিযুক্ত। অনেকেই মোবাইল নম্বরকে পাসওয়ার্ড হিসেবে বেছে নেন। এটাও অনেক ঝুঁকিপূর্ণ।

অ্যাকাউন্ট নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখতে অনন্য পাসওয়ার্ড নির্বাচন করতেই পরামর্শ দেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।