বেনিয়ামিন আহমেদের বয়স ১২ বছর। থাকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। স্কুল ছুটির দিনগুলোতে ডিজিটাল শিল্পকর্ম বানিয়ে কেটেছে তার সময়। ‘উইয়ার্ড হোয়েলস’ সিরিজের শিল্পকর্মগুলো বিক্রি করে এরই মধ্যে ২ লাখ ৯০ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড আয় করেছে বেনিয়ামিন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় দাঁড়ায় ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার বেশি।
ডিজিটাল শিল্পকর্মগুলো বেনিয়ামিন বিক্রি করে নন-ফাঞ্জিবল টোকেন (এনএফটি) হিসেবে। এনএফটি অনেকটা সনদের মতো। ডিজিটাল কিছুর মালিকানার সনদ বলা যেতে পারে। সেটি বিনিময়যোগ্য। এনএফটি ফরম্যাটে ক্রেতাকে শিল্পকর্ম বা এর স্বত্ব দেওয়া হয় না, বরং শিল্পকর্মের ডিজিটাল মালিকানার সনদ দেওয়া হয়। ক্রেতা সেটি পরে আবার বিক্রি করতে পারেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনএফটি বিক্রির আয় ডিজিটাল মাধ্যমেই সংরক্ষণ করছে বেনিয়ামিন। নিজের ভার্চ্যুয়াল ওয়ালেটে ‘ইথেরিয়াম’ নামের ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রা জমাচ্ছে সে। ইথেরিয়ামের বিনিময় মূল্য বাড়লে বেনিয়ামিনের আয় বেড়ে যাবে। মূল্য কমলে আয়ও কমে যাবে। আর কোনো কারণে ভার্চ্যুয়াল ওয়ালেটটি হ্যাক হলে সব জলে যাবে। তবু তার নামে প্রচলিত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়নি কখনো।
কোডিং শেখার জন্য নিজেকে চাপ দিয়ো না। তোমার যদি রান্না পছন্দ হয়, তবে রান্না করো। নাচতে ভালো লাগলে সেটাই করো। শুধু নিজের সেরাটা দাও।বেনিয়ামিন আহমেদ
অবসরে বেনিয়ামিনের পছন্দ সাঁতার, ব্যাডমিন্টন আর তায়েকান্দো। এর পাশাপাশি ইউটিউবে ভিডিও বানায় সে। বিবিসিকে বেনিয়ামিন বলেছে, ‘অন্য শিশুদের জন্য, বিশেষ করে যারা এই কাজ করতে চায় তাদের জন্য আমার পরামর্শ হলো, কোডিং শেখার জন্য নিজেকে চাপ দিয়ো না। তোমার যদি রান্না পছন্দ হয়, তবে রান্না করো। নাচতে ভালো লাগলে সেটাই করো। শুধু নিজের সেরাটা দাও।’
বেনিয়ামিনের বাবা ইমরান আহমেদ সফটওয়্যার নির্মাতা। বেনিয়ামিন ও তার ভাই ইউসেফকে পাঁচ–ছয় বছর বয়স থেকেই কোডিং শেখাতে শুরু করেন তিনি।
তারা অল্প বয়স থেকেই প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সান্নিধ্য পেয়েছে। প্রয়োজনে সাহায্য-পরামর্শ পেয়েছে ঠিকই, তবে ইমরান তার সন্তানদের ব্যাপারে অত্যন্ত গর্বিত। সন্তানদের কাজটা সম্পর্কে বলেছেন, শুরুতে কেবলই মজার কাজ থাকলেও একটু একটু করে তারা ‘সিরিয়াস’ হতে শুরু করে। তবে বেশি চাপ দিতে চান না। বলেছেন, ‘আপনি বলতে পারবেন না আমি তিন মাসে কোডিং শিখে ফেলব।’
ইমরান আহমেদের দুই সন্তান দিনে ২০ থেকে ৩০ মিনিট কোডিং অনুশীলন করে। সেটা ছুটির দিনেও।
উইয়ার্ড হোয়েলস বেনিয়ামিনের দ্বিতীয় ডিজিটাল শিল্পকর্ম বানানোর প্রকল্প। এর আগে ভিডিও গেম মাইনক্রাফট ধাঁচের এনএফটি বিক্রির চেষ্টা করে সে। তবে সেটি তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি।
এবার অনুপ্রেরণা নিয়েছে ‘পিক্সেলেটেড হোয়েল মিম’ থেকে। নেটিজেনদের কাছে সেটি আগে থেকেই জনপ্রিয়। এরপর নিজের প্রোগ্রাম ব্যবহার করে ৩ হাজার ৩৫০টি ইমোজি বানিয়েছে সে।
বেনিয়ামিনের পরবর্তী প্রকল্পের অনুপ্রেরণা সুপারহিরো। পাশাপাশি পানির নিচের জগৎ নিয়ে একটি ভিডিও গেম বানাতে চায়। আর সেখানেও থাকবে তিমি।
শিল্পীরা অবশ্য এনএফটির ব্যাপারে একমত হতে পারেননি। কিছু শিল্পী মনে করেন, এটি আয়ের ভালো একটি উৎস। চড়া দামে শিল্পকর্ম বিক্রির খবর মাঝেমধ্যে পাওয়া যায়। তবে এনএফটি দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের উপযুক্ত কি না, তা নিয়েও আছে প্রশ্ন।