টিকটক বন্ধ হলেও বিক্রি চায় না চীন

যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি না হলে বন্ধ হয়ে যাবে টিকটক
ছবি: রয়টার্স

টিকটকের বিক্রি হওয়ার চেয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া ভালো। মার্কিন কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে চীনা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স তাদের জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং সাইট টিকটক বিক্রি করে দিক, তা চাইছে না বেইজিং। এর চেয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক বন্ধ করে দিতে বলেছে। গতকাল শুক্রবার এ বিষয়ে জ্ঞান রাখেন—এমন তিনজন ব্যক্তি বিষয়টি বলেছেন।

ওয়াশিংটনের চাপে পড়ে বাইটড্যান্স টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা বিক্রির জন্য আলোচনা করছে। সম্ভাব্য ক্রেতার তালিকায় রয়েছে মাইক্রোসফট ও ওরাকলের মতো দুই মার্কিন সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।

গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেন, টিকটক বিক্রি না করলে তা যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হবে। এ জন্য সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ফের হুমকি দিয়েছেন, টিকটক বিক্রির জন্য বেঁধে দেওয়া দিনক্ষণ পাল্টানো যাবে না। হয় এটা বন্ধ হয়ে যাবে, নয়তো তাদের বিক্রি হতে হবে।
ট্রাম্প প্রশাসন হুমকি দিয়েছে, ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে টিকটক কোনো মার্কিন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি না হলে এটি নিষিদ্ধ করা হবে। তারা আশা করছে, কোনো মার্কিন কোম্পানি টিকটককে কেনার জন্য চুক্তি করবে।

তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে টিকটক পরিচিতি পেলেও ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। ওয়াশিংটনের অভিযোগ, মার্কিন নাগরিকদের তথ্য বেইজিংকে দেয় টিকটক। অবশ্য টিকটকের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

বিষয়টি স্পর্শকাতর বলে নাম প্রকাশ না করে চীনা কর্মকর্তারা বলেছেন, তাঁরা মনে করছেন, ওয়াশিংটনের চাপে পড়ে টিকটক বিক্রি করতে বাধ্য হলে বাইটড্যান্স ও চীন সবার সামনে দুর্বল বলে প্রমাণিত হবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া বিবৃতিতে বাইটড্যান্স জানিয়েছে, চীন সরকার কখনো যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশে টিকটক বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শ দেয়নি। দুটি সূত্র বলেছে, বাইটড্যান্সকে যদি কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে হয়, তবে চুক্তির জন্য অপেক্ষায় রাখবে চীন। গত ২৮ আগস্ট চীন যে প্রযুক্তি রপ্তানির নতুন তালিকা করেছে, তার পর্যালোচনা করবে তারা।

ট্রাম্প ও টিকটক বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিঝিয়ান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের জাতীয় নিরাপত্তার ধারণাটির অপব্যবহার করছে। তিনি বিদেশি কোম্পানিগুলোকে হয়রানি না করার আহ্বান জানান।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, টিকটকের সম্ভাব্য ক্রেতারা চারটি উপায় খতিয়ে দেখছেন। এর মধ্যে চীনের অনুমতি ছাড়াই টিকটকের মার্কিন ব্যবসা বিক্রির সুযোগ রয়েছে, যাতে মূল অ্যালগরিদম বিক্রি হবে না।

সিএনবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, টিকটকের দাম হতে পারে দুই হাজার থেকে তিন হাজার কোটি ডলার। মার্কিন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির ক্ষেত্রে চীন সরকার বিশেষ বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। চীন তাদের প্রযুক্তি রপ্তানি তালিকা হালনাগাদ করেছে, যাতে টিকটকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি রপ্তানি করতে অনুমতি নিতে হবে।

গত মাসে টিকটক বিক্রির চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছালে এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেভিন মায়ার পদত্যাগ করেন। তিনি মাত্র কয়েক মাস প্রতিষ্ঠানটিতে চাকরি করেছিলেন। বর্তমানে টিকটকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী ভ্যানেসা পাপ্পাস।

বেইজিংভিত্তিক স্টার্টআপ বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন টিকটক নিয়ে আগে থেকেই মার্কিন রাজনীতিকদের একটি অংশ সমালোচনামুখর ছিলেন। তাঁদের বক্তব্য, এই বিশেষ অ্যাপের সঙ্গে চীন সরকারের সংযোগ রয়েছে। ছোট ছোট ভিডিওর এ অ্যাপ ব্যবহারকারীদের তথ্য হাতিয়ে নেয় এবং তা চীনের কমিউনিস্ট পার্টিনিয়ন্ত্রিত গোয়েন্দা বিভাগকে দিয়ে সহায়তা করে।

কিন্তু টিকটক বরাবরই বলে আসছে যে তারা বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন হলেও তাদের কার্যক্রম সম্পূর্ণ আলাদাভাবে পরিচালিত হয়। তাদের তথ্যকেন্দ্রগুলোর কোনোটিই চীনে নয়। এ কারণে তাদের আওতায় থাকা কোনো তথ্যই চীনের আইনের আওতায় পড়ে না।

গত মাসে ট্রাম্পের সই করা নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, টিকটক জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এ কারণে টিকটকের নির্মাতা বাইটড্যান্সের সঙ্গে লেনদেন করা যাবে না। ৪৫ দিন পর এই নির্দেশ কার্যকর হবে।