টিকটকের সঙ্গে চুক্তিতে ট্রাম্পের আর্শীবাদ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটক নিয়ে সন্তোষজনক চুক্তি না হলে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপটি নিষিদ্ধ করার হুমকি দিয়েছিলেন। আজ রোববার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প এ চুক্তির ক্ষেত্রে তাঁর অনুমোদন দিয়েছেন বলে এটি বন্ধ হচ্ছে না।

ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, টিকটক এবং মার্কিন সংস্থা ওরাকল ও ওয়ালমার্টের মধ্যে অংশীদারত্বের জন্য তিনি তাঁর ‘আশীর্বাদ’ দিয়েছিলেন। জাতীয় সুরক্ষা উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপটি নিষিদ্ধ করার নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি।

মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আশঙ্কা করেন, টিকটকের মালিকের সংগৃহীত তথ্য চীন সরকারের কাছে হস্তান্তরিত হতে পারে।

টিকটকের মালিক বাইটড্যান্স এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি তাদের নিয়ন্ত্রণ করে না বা বাইটড্যান্স তাদের কোনো তথ্য দেয় না।

গতকাল শনিবার ট্রাম্প বলেন, ‘চুক্তির ফলে ১০ কোটি মার্কিন নাগরিকের তথ্য সুরক্ষিত থাকবে। নিরাপত্তার বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত করা হবে। চুক্তিটির প্রতি আমার আশীর্বাদ রয়েছে।’ হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমি চুক্তির ধারণাটিতে অনুমোদন দিয়েছি।’

চুক্তি অনুযায়ী, টিকটকের নতুন নাম হবে টিকটক গ্লোবাল। এতে অধিকাংশ শেয়ার থাকবে মার্কিন পরিচালকদের হাতে।

চুক্তির বিষয় নিয়ে বাইটড্যান্সের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তাদের চুক্তি করতে হলে চীন সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তর গত শুক্রবার রাতে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এতে ২০ সেপ্টেম্বর থেকে দেশটিতে চীনা অ্যাপ টিকটক ও উইচ্যাট ডাউনলোডের সুযোগ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

তবে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ বলেছে, সাম্প্রতিক ইতিবাচক উন্নতির আলোকে তারা ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টিকটক বন্ধের সময়সীমা বাড়িয়েছে।

টিকটকের ওপর মার্কিন এ চাপের বিষয়টি ট্রাম্প প্রশাসন ও চীন সরকারের মধ্যে বাণিজ্য–বিরোধ, হংকংয়ে বিক্ষোভ, বেইজিংয়ের করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবকে সামলানোসহ বেশ কয়েকটি ঘটনার তীব্র উত্তেজনার সময় এসেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী, টিকটকের নতুন নাম হবে টিকটক গ্লোবাল। এতে অধিকাংশ শেয়ার থাকবে মার্কিন পরিচালকদের হাতে। মার্কিন প্রধান নির্বাহী ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা যুক্ত হবেন এতে। কোম্পানিতে ওরাকল ও ওয়ালমার্টের গুরুত্বপূর্ণ শেয়ার থাকবে। বাইটড্যান্সকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীদের তথ্য নিরাপত্তার বিষয়ে সম্মত হতে হবে। টিকটকের তথ্য সংরক্ষণ করবে ওরাকল এবং তারা সোর্স কোড তদন্ত করতে পারবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, টিকটক কোম্পানি পুরোপুরি ওরাকল ও ওয়ালমার্টের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন কর্মসংস্থান ও রাজস্ব আসবে।

চুক্তির বদলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চেয়েছিলেন কোম্পানিটি যেন মার্কিন কোনো প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি কিনে নেয়। তবে এ ক্ষেত্রে তা ঘটছে না। এটি মূলত তিনটি কোম্পানি যৌথ উদ্যোগ হতে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ওরাকল ও ওয়ালমার্ট বিশ্বস্ত সহযোগীর ভূমিকা পালন করবে। তারা মার্কিন ব্যবহারকারীদের তথ্য নিরাপত্তার দিকটি দেখবে।

প্রস্তাবিত শর্তে চীনের বাইটড্যান্সের অধীনে অধিকাংশ শেয়ার থাকবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হওয়া এড়াতে আইনি পথে হাঁটে ইন্টারনেটে ভিডিও প্রচার বা প্রকাশের জনপ্রিয় অ্যাপ টিকটক। চীনা প্রতিষ্ঠানটি শুক্রবার ট্রাম্প প্রশাসনের ওই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছে। বাইটড্যান্স শুক্রবার স্থানীয় সময় রাতে ওয়াশিংটনের ফেডারেল আদালতে অভিযোগটি দায়ের করে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক বন্ধ করার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।

আদালতে দায়ের করা বাইটড্যান্সের অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর কর্তৃত্বের সীমা ছাড়িয়ে টিকটক নিষিদ্ধ করার নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ‘অস্বাভাবিক ও অসাধারণ হুমকি’ থামানো নয়, বরং নিছক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এটা করেছেন তিনি।

আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ওই সিদ্ধান্তকে ‘ভয়ভীতি প্রদান’ হিসেবে দেখছে চীন। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিবৃতিতে হুমকি দিয়ে বলেছে, তারা পাল্টা পদক্ষেপ নেবে। বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের ভয়ভীতি প্রদানের পথ পরিহার করবে, ভুল পদক্ষেপ থেকে সরে আসবে এবং ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিধিবিধান মেনে চলবে—চীন সেই আহ্বান জানাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের মতো করে চললে চীন তার বৈধ অধিকার ও চীনা কোম্পানিগুলোর স্বার্থ অটলভাবে সুরক্ষিত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে।

এ ছাড়া চীন গতকাল নতুন এক নীতি চালু করেছে, যাকে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়েসহ বিভিন্ন চীনা কোম্পানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের পাল্টা হিসেবে দেখছে অনেকে।