যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিপ নকশাকারী প্রতিষ্ঠান এআরএম হোল্ডিংস মার্কিন গ্রাফিকস চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়ার কাছে বিক্রি হয়ে গেল। এআরএমের দাম উঠেছে চার হাজার কোটি মার্কিন ডলার।
চার বছর আগে প্রতিষ্ঠানটিকে ৩ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলারে কিনেছিল জাপানের সফটব্যাংক। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এআরএমের তৈরি প্রযুক্তি এখন বিশ্বের অধিকাংশ স্মার্টফোনসহ অন্যান্য যন্ত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। এআরএমকে কিনে নেওয়ার সময় এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা যুক্তরাজ্যে রাখার পাশাপাশি আরও কর্মী নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এআরএম ব্র্যান্ডটিকেও তারা ব্যবহার করবে।
এনভিডিয়া ঘোষণা দিয়েছে, তাদের চুক্তির ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে প্রিমিয়ার কম্পিউটার কোম্পানি হিসেবে গড়ে উঠবে এআরএম।
এনভিডিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেনসেন হুয়াং বলেন, ‘এআরএমের প্রধান কার্যালয় কেমব্রিজেই থাকবে। আমরা একে আরও বড় করব। একে বৈশ্বিক মানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকেন্দ্র হিসেবেও গড়ে তোলা হবে। স্বাস্থ্যসেবা খাত, জীবনবিজ্ঞান, রোবটিকস, স্বচালিত গাড়ি ও অন্য ক্ষেত্রের উপযোগী করে একে গড়ে তোলা হবে।’
বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কাছে এআরএমের সঙ্গে এনভিডিয়ায় একীভূত হওয়া ঠেকাতে খোলা চিঠি দিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের জ্যেষ্ঠ একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, খোলা চিঠিতে এআরএম বিক্রিতে কোনো বাধা আসবে না, তবে কিছু শর্ত আরোপ হতে পারে।
আগামী বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ চাকরির নিরাপত্তা ও প্রধান কার্যালয় যুক্তরাজ্যে রাখার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সফটব্যাংক। তবে এক বছর পরে কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশ্লেষকেরা।
যুক্তরাজ্যের লিগ্যাল অ্যান্ড জেনারেল ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্টের প্রধান সনজা লাউড বলেন, ‘এনভিডিয়ার কাছ থেকে ঘোষণা শোনা মানে তারা সফটব্যাংকের সিদ্ধান্তকে সম্মান দেখাবে। তবে নির্দিষ্ট সময় শেষ হলেও এবং ব্রেক্সিটের মতো বিষয়গুলো সামনে রেখে পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে, তা দেখতে হবে।’
এর অর্থ যুক্তরাজ্যের চাকরির উদ্বেগ তৈরি হবে এবং সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের হাতে চলে যাবে। গত মাসে লেবার পার্টি থেকে এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। অবশ্য এ বিষয়ে এআরএমের দুই সহপ্রতিষ্ঠাতা অন্য প্রসঙ্গ তুলেছেন।
হারমান হাউসার ও টুডর ব্রাউন মনে করেন, এনভিডিয়ার মতো কোম্পানির হস্তগত হওয়ার চেয়ে এআরএমের নিরপেক্ষ থাকা উচিত।
এআরএম যখন মার্কিন কোম্পানির হস্তগত হবে, তখন ওয়াশিংটন একে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিপ বিক্রি করতে দেবে না। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের কবলে পড়ে যাবে এআরএম। প্রতিষ্ঠানটির তৈরি চিপের বড় ক্রেতা চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো।
এআরএমের সিইও অবশ্য বলেছেন, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়বে না এআরএম। কারণ, এআরএমের অধিকাংশ পণ্যের নকশা যুক্তরাজ্যে করা হয়। এর বাইরে অন্য দেশেও এর কাজ চলে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়বে না তারা।
এখন পর্যন্ত এআরএমের চিপ ব্যবহারকারীর তালিকায় অ্যাপল, স্যামসাং, হুয়াওয়ে, কোয়ালকমের মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এআরএমের তথ্য অনুযায়ী, তাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১৮০ বিলিয়নের বেশি চিপসেট তৈরি করা হয়েছে।