কমই বেশি। বলতেন স্টিভ জবস। অ্যাপল ইনকরপোরেটেডের প্রয়াত সহপ্রতিষ্ঠাতা ‘মিনিমালিস্ট’দের দলেই ছিলেন। অ্যাপলে তাঁর হাত দিয়ে যত পণ্য বাজারে এসেছে, সব কটির নকশা বেশ সাদাসিধে। কোনো আড়ম্বর নেই। তবু দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে দীর্ঘদিন ভুগেছেন স্টিভ জবস। মারা যান ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর। আজ তাঁর নবম মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁকে আলাদা করে স্মরণ করার দিন। অ্যাপলের বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুক আজ ৫ অক্টোবর টুইটারে স্টিভ জবসের ছবি পোস্ট করেছেন। সঙ্গে মায়া অ্যাঞ্জেলুকে উক্তি করে লিখেছেন, ‘মহৎ আত্মার মৃত্যু নেই। এটা বারবার আমাদের কাছে টেনে আনে।’ তুমি সব সময় আমাদের সঙ্গে আছ, স্টিভ। তোমার স্মৃতি প্রতিদিন আমাদের অনুপ্রাণিত করে।
অ্যাপল থেকেই স্টিভ জবসের যত খ্যাতি। তবে এর বাইরেও দুটি প্রতিষ্ঠান গড়েছেন তিনি। প্রতিষ্ঠান দুটির একটি নেক্সট, অপরটি পিক্সার। ঠিক অ্যাপলের মতো মহিরুহ না হলেও সেগুলোকেও নির্দ্বিধায় সফল বলা চলে। এক জীবনে যেখানেই হাত দিয়েছেন, সোনা ফলেছে। স্টিভ জবসের মৃত্যুবার্ষিকীতে আজ তাই তাঁর অন্য সফল উদ্যোগগুলোর কথা জানা যাক।
১৯৮৫ সালে অ্যাপল থেকে বেরিয়ে স্টিভ জবস প্রতিষ্ঠা করেন নেক্সট। ব্যবসায় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য কম্পিউটার তৈরি করা শুরু করলেন। হাজার পঞ্চাশেক কম্পিউটার বিক্রি করেছিলেন। আশানুরূপ সাফল্য না পেলেও ইতিহাসে ঠিকই ঠাঁই করে নিয়েছিলেন।
জবসের প্রতিষ্ঠানের নেক্সটকিউব ওয়ার্কস্টেশনেই প্রথম ওয়েব সার্ভার এবং ওয়েব ব্রাউজার সফটওয়্যার বানিয়েছেন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের জনক টিম বার্নার্স-লি। সর্বকালের প্রভাবশালী ভিডিও গেমগুলোর বিশেষ দুটি হলো ‘উলফেনস্টাইন থ্রিডি’ এবং ‘ডুম’। নেক্সটকিউব ওয়ার্কস্টেশনেই সে দুটির প্রোগ্রাম লিখেছেন জন কারম্যাক।
সবচেয়ে বড় কথা, বেশ ভালো দামে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করেন স্টিভ। অ্যাপল কম্পিউটার ১৯৯৭ সালে নেক্সট কিনে নেয়। নেক্সটের বিনিয়োগকারীরা পান নগদ ৪২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। তবে স্টিভ জবস পেয়েছিলেন অ্যাপলের ১৫ লাখ ডলার মূল্যের শেয়ার। অ্যাপলের প্রতিটি শেয়ারের দাম সে সময় কমবেশি ৬ ডলার ছিল। শেয়ারগুলোর বর্তমান মূল্য আমলে নিলে স্টিভ জবসকে ঘাগু ব্যবসায়ী ছাড়া আর কী বলা যাবে।
অ্যানিমেশন স্টুডিও পিক্সারে স্টিভ জবস ছিলেন মূলত বিনিয়োগকারী। আজও প্রতিষ্ঠানটি টিকে আছে। শুধু টিকে নয়, খ্যাতির চূড়ায় রয়েছে। লুকাসফিল্মের কাছ থেকে ৫০ লাখ ডলারে পিক্সার কেনেন স্টিভ জবস। ১৯৮৬ সালের ঘটনা। এর সঙ্গে নিজের বিনিয়োগ হিসেবে যোগ করেন আরও ৫০ লাখ ডলার। ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানির কাছে ২০০৬ সালে ৭৪০ কোটি ডলারে পিক্সার বিক্রি করেন। সে সময় ডিজনির সবচেয়ে বড় একক শেয়ারহোল্ডারে পরিণত হন স্টিভ।
শুরুতে পিক্সারকে উচ্চ মানের কম্পিউটার যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বানানোর ইচ্ছা ছিল জবসের। যেসব প্রতিষ্ঠানের কাছে ‘পিক্সার ইমেজ কম্পিউটার’ বিক্রি করতে চেয়েছিলেন, তার একটি ছিল ডিজনি। ১৯৯০ সালে ডিজনির কাছ থেকে তিনটি সিজিআই অ্যানিমেশন ফিল্ম তৈরির ফরমাশ পেয়েছিল পিক্সার। প্রথমটি ‘টয় স্টোরি’। প্রথম সম্পূর্ণ সিজিআই-নির্ভর অ্যানিমেশন ছবি হিসেবে সেটি ইতিহাসে ঠাঁই করে নিয়েছে।
অ্যাপলের কাছে নেক্সট বিক্রির কিছুদিন পর অ্যাপলের প্রধান নির্বাহীর আসনে বসেন। প্রায় ব্যর্থ একটি প্রতিষ্ঠানকে টেনে তোলেন। সফলতার পথে এগিয়ে নেন। আর এখন তো সফলতম প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি বললে মোটেও ভুল বলা হবে না। আর তা হয়েছে স্টিভ জবস হাত দিয়েছিলেন বলেই।