বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সাইবার দুর্বৃত্তরা নানাভাবে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছে। মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের ছদ্মবেশে ক্ষতিকর অ্যাপ ডাউনলোড করাতে পারলে সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। প্রয়োজনীয় অক্সিমিটার যন্ত্রটিকে এবার প্রতারণার লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে দুর্বৃত্তরা। মোবাইল অ্যাপে অক্সিমিটারের সুবিধার কথা বলে ক্ষতিকর ম্যালওয়্যার ডাউনলোডের জন্য প্রলুব্ধ করছে তারা।
পালস অক্সিমিটার হৃৎস্পন্দন ও শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা মাপার যন্ত্র। সহজে বহনযোগ্য ছোট যন্ত্রটি এখন অনেকেই ব্যবহার করছেন। আঙুলের মাথায় লাগিয়ে জানা যায় রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ। ব্যবহার করতেও নিতে হয় না বিশেষ প্রশিক্ষণ। অক্ষরজ্ঞান থাকলে সহজেই ব্যবহার করতে পারেন এই পালস অক্সিমিটার।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বা উপসর্গ রয়েছে—এমন মানুষের জন্য পালস অক্সিমিটার সাহায্যকারী একটি যন্ত্র। এতে কার হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে, কখন ভর্তি হতে হবে, কার অক্সিজেন থেরাপির দরকার এবং কাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিতে হবে কিংবা ভেন্টিলেশনে রাখতে হবে, তা সহজেই জানা যায় পরীক্ষার মাধ্যমে। এ সুবিধা নিতে চেষ্টা করছে দুর্বৃত্তরা। তারা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে পালস অক্সিমিটারের সুবিধা দেওয়ার কথা বলছে।
অচেনা উৎস থেকে পাওয়া লিংকে ক্লিক করে অক্সিমিটার অ্যাপ ডাউনলোডের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
ইতিমধ্যে ‘অক্সিমিটার’ সুবিধা দেয়—এমন অ্যাপ ডাউনলোডের বিষয়ে সতর্ক করেছে ভারতের সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সাইবার সুরক্ষায় চালানো ‘সাইবার দোস্ত’ নামের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, অচেনা উৎস থেকে পাওয়া লিংকে ক্লিক করে অক্সিমিটার অ্যাপ ডাউনলোডের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা নির্ণয়ের কথা বলে এসব অ্যাপ মোবাইল থেকে কন্টাক্ট, বায়োমেট্রিক তথ্যসহ নানা তথ্য চুরি করে নেয়। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি তৈরি হয় ফিঙ্গারপ্রিন্টের ক্ষেত্র। গোপনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে তা দুর্বৃত্তদের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারে। ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইন্টারনেটে কয়েকটি ইউআরএল লিংক থেকে অক্সিজেনের স্তর যাচাই করার জন্য ভুয়া মোবাইল অক্সিমিটার অ্যাপ্লিকেশন সরবরাহ করার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। মোবাইলে এ–জাতীয় ভুয়া অক্সিমিটার অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করবেন না, কারণ এই অ্যাপ্লিকেশন আপনার মোবাইল ফোন থেকে ব্যক্তিগত বা বায়োমেট্রিক ডেটা চুরি করতে পারে।
এর আগে সাইবার বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছিলেন, যেসব পেমেন্ট অ্যাপ ই–মেইল, এসএমএস ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য সংগ্রহ করে, তা ইনস্টল করবেন না। অ্যাপ স্টোরের বাইরে কোনো উৎস থেকে অ্যাপ ডাউনলোডের আগে সতর্ক থাকতে হবে।
যুক্তরাজ্যের দ্য টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকেরাও রক্তের অক্সিজেন মাপার অ্যাপ সম্পর্কে সতর্ক করেন।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন গবেষক বলেছেন, যেসব অ্যাপ রক্তে অক্সিজেন মাপার কথা বলে, তা নিখুঁত পর্যবেক্ষণের ডিভাইস হিসেবে নির্ভর করা ঠিক হবে না। রক্তে অক্সিজেন মাপার জন্য কোনো স্মার্টফোন প্রযুক্তি নিখুঁত বলে প্রমাণিত হয়নি।
লিওনেল তারাশেঙ্কো ও তৃষা গ্রিনহাফ এ প্রযুক্তি পর্যবেক্ষণ করে দেখেন। তাঁরা দেখছেন, অ্যাপে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা পরীক্ষা করে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিখুঁতভাবে নির্ণয় করা যায় না।