কমনওয়েলথ দিচ্ছে বৃত্তি (স্কলারশিপ) সুবিধা। সাধারণত নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপে মাস্টার্সে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দেয় কমনওয়েলথ বৃত্তি। মাস্টার্সের জন্য কমনওয়েলথের এই বৃত্তির যাবতীয় অর্থ দেয় ইউকে ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি) নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
২০২৪ সালের জন্য কমনওয়েলথ বৃত্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিটি দেশের জন্য আলাদা মনোনীত প্রতিষ্ঠান আছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও আগ্রহীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এ–সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
প্রতিবছর ইউজিসি কমনওয়েলথ স্কলারশিপের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরখাস্ত আহ্বান করে। এ বছরেও ‘কমনওয়েলথ স্কলারশিপস (পিএইচডি) ইন দ্য ইউনাইটেড কিংডম ২০২৪’-এ দরখাস্তের আহ্বান করেছে ইউজিসি। আগ্রহীরা ইউজিসির ওয়েবসাইট (http://www.ugc.gov.bd/) থেকে বৃত্তিসংক্রান্ত সার্কুলারসহ সব তথ্য জানতে পারবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত ঠিকানায় ২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দরখাস্তের ‘হার্ড কপি’ পাঠাতে হবে। কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে প্রার্থীরা চূড়ান্তভাবে এ বৃত্তির জন্য নির্বাচিত হয়ে থাকেন।
১.
স্নাতকোত্তর বা পিএইচডির সম্পূর্ণ টিউশন ফি বহন করবে কমনওয়েলথ কমিশন
২.
যুক্তরাজ্যে যাওয়া–আসার বিমানের টিকিট।
৩.
লন্ডনের বাইরে থাকলে মাসিক ভাতা হিসেবে দেওয়া হয় ১ হাজার ৮৬ পাউন্ড। লন্ডনের ভেতরে থাকলে ভাতার পরিমাণ ১ হাজার ৩৩০ পাউন্ড।
৪.
মাসিক ভাতার বাইরেও এককালীন ৪২১ পাউন্ড পাওয়া যাবে।
৫.
‘স্টাডি ট্রাভেল গ্র্যান্ট’ হিসেবে ২০০ পাউন্ড বা প্রায় ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাবে।
৬
‘থিসিস গ্র্যান্ট’ হিসেবে দেওয়া হয় ২২৫ পাউন্ড।
৭.
এ ছাড়া কমনওয়েলথ কমিশন কর্তৃক আয়োজিত যেকোনো প্রশিক্ষণ, স্বল্পমেয়াদি কোর্স, ওয়েলকাম ইভেন্ট ও আঞ্চলিক সম্মেলনে যোগদানের জন্য ট্রেনের টিকিট, থাকা ও খাওয়ার সুব্যবস্থা করা হয়।
*এসব সুযোগ-সুবিধা ২০২০ সালের বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক। এসব সুযোগ–সুবিধা কমতে বা বাড়তে পারে।
১৯৫৯ সালে যাত্রা শুরু করে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ কমিশন (সিএসসি)। এখন পর্যন্ত কমনওয়েলথ স্কলারশিপ ও ফেলোশিপ পেয়েছেন ৩৫ হাজারের বেশি। কমনওয়েলথভুক্ত ৫৩টি দেশের তরুণ শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের জন্য দেওয়া হয় ৮০০টি বৃত্তি (স্নাতকোত্তর, পিএইচডি ও স্প্লিট–সাইট স্টাডি)। কমনওয়েলথ কমিশন সচিবালয়, লন্ডনের মাধ্যমে আর্থিক অনুদান দেয় যুক্তরাজ্য সরকারের ‘আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগ বা ডিএফআইডি’।
www.cscuk.dfid.gov.uk তে ঢুঁ মারলে কমনওয়েলথ বৃত্তিসংক্রান্ত বেশির ভাগ তথ্য পাওয়া যাবে। এটি এই বৃত্তির অফিশিয়াল ওয়েব পেজ।
www.ugc.gov.bd, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) প্রতিবছর কমনওয়েলথ স্কলারশিপের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরখাস্ত আহ্বান করে। যে কেউ ইউজিসির ওয়েবসাইট থেকে বৃত্তিসংক্রান্ত সার্কুলারসহ বিস্তারিত জানতে পারবেন।
www.scholars4dev.com, ই–মেইলের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পেতে চাইলে এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারেন যেকোনো শিক্ষার্থী। তাহলে ই-মেইলেই সময়মতো বিজ্ঞপ্তি পৌঁছে যাবে।
www.britishcouncil.org.bd, এ ছাড়া কমনওয়েলথ বৃত্তিসংক্রান্ত নানা তথ্য পাওয়া যাবে ব্রিটিশ কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে। ফেসবুক পেজেও হালনাগাদ তথ্য দেওয়া হয়।
*উন্মুক্ত (ওপেন)
*শর্তপূরণ সাপেক্ষে যে কেউ আবেদন করতে পারেন। বাংলাদেশে আবেদন করতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে (যেমন বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা উন্নয়ন সহযোগী) কর্মরত কর্মীদের (স্টাফ) জন্য প্রযোজ্য। প্রতিষ্ঠান থেকেই যাচাই–বাছাই করে কয়েকজনের নাম ইউজিসির কাছে প্রস্তাব করা হয়।
শেয়ারড স্কলারশিপের ক্ষেত্রে দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠানে আবেদন না করে সরাসরি যুক্তরাজ্যে অবস্থিত যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুক, সে প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে হয় এবং কমনওয়েলথ শেয়ারড স্কলারশিপের অধীনে অর্থায়ন পেতে ইচ্ছুক বলে বিশ্ববিদ্যালয়কে জানাতে হয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয় যাচাই–বাছাই করে কমনওয়েলথ কমিশন সচিবালয়কে জানিয়ে দেয়।
১.
কমনওয়েলথভুক্ত যেকোনো দেশের নাগরিক এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে মেধাবী তরুণ ও পেশাজীবীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এ বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে। বিশেষ করে যাঁরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান, পাবলিক সার্ভিস ও বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, তাঁরা অগ্রাধিকার পান।
২.
আবেদনকারীর কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণির (২:১) স্নাতক বা স্নাতকোত্তর থাকতে হবে, যা সিজিপিএ ৩.০-এর সমতুল্য। তবে সিজিপিএ যত বেশি হবে, বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি থাকে।
৩.
যাঁরা আগে বিদেশে থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন, তাঁরা স্নাতকোত্তরের জন্য বিবেচিত হবেন না। তবে অন্য কোনো বৃত্তির অধীনে স্নাতকোত্তর করে থাকলে পিএইচডিতে আবেদন করতে পারবেন।
৪.
দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠানে পিএইচডির জন্য নিবন্ধন করলে বৃত্তির জন্য বিবেচিত হবেন না।
৫.
কমনওয়েলথভুক্ত বা নিজ দেশের বাইরে অবস্থানকালে কেউ আবেদন করলে গ্রহণযোগ্য হবেন না।
৬.
যুক্তরাজ্যে কেউ শিক্ষারত অবস্থায় এই স্কলারশিপের জন্য বিবেচিত হবেন না।
৭.
উচ্চশিক্ষা শেষে অবশ্যই নিজ দেশে ফেরত আসতে হবে।
১.
উন্মুক্তর ক্ষেত্রে ইউজিসির ওয়েবসাইট থেকে আবেদনের নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের (যদি থাকে) গ্রুপ/বিষয়, পাসের বছর, মোট নম্বর/জিপিএ/সিজিপিএ ও প্রাপ্ত নম্বরের শতকরা হার উল্লেখ করে সত্যায়িত সনদ, ট্রান্সক্রিপ্টসহ জমা দিতে হবে। এ ছাড়া আবেদনকারীর যদি কোনো প্রকাশনা থাকে, তার বর্ণনা, আইইএলটিএস স্কোর (যদি থাকে) ও এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি দরখাস্তের সঙ্গে সংযুক্ত করে এই ঠিকানায় পাঠাতে হবে: বরাবর, সচিব, উচ্চশিক্ষা কমিশন, আগারগাঁও প্রশাসনিক ভবন এলাকা, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা-১২০৭। এ বছর পাঠাতে হবে ২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে।
যাচাই–বাছাই করে আবেদনের দুই-চার সপ্তাহ পর সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকবে ইউজিসি। পরে একাডেমিক ফলাফল, প্রকাশনার সংখ্যা ও গুণগত মান এবং সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে প্রাথমিক নির্বাচন করা হয়, যা সরাসরি কমনওয়েলথ কমিশন সচিবালয়ে পাঠানো হয়। উল্লেখ্য, স্নাতকোত্তরের জন্য প্রকাশনা থাকা বাধ্যতামূলক নয়, তবে পিএইচডির জন্য থাকা বাঞ্ছনীয়।
২.
দ্বিতীয় পর্যায়ে, কমনওয়েলথ কমিশন সচিবালয় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের ই-মেইলের মাধ্যমে ‘অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন প্ল্যাটফর্ম’–এ আবেদন জমা দেওয়ার অনুরোধ জানায়। এ পর্যায়ে একজন দরখাস্তকারীর ব্যক্তিগত তথ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, একাডেমিক অ্যাওয়ার্ড ও স্বীকৃতি, প্রকাশনার বিবরণ, পেশাগত অভিজ্ঞতা, একাডেমিক বা পেশাগত প্রশিক্ষণ/শর্টকোর্সের বিবরণ, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের সম্পৃক্ততা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বলে রাখা ভালো, একজন আবেদনকারীর অনেক বিষয়ের মধ্যে সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কাজকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়া আবেদনকারীকে তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থল থেকে তিনটি ‘রেফারেন্স লেটার’ (সুপারিশপত্র) সংগ্রহ করতে হয়।
৩.
ই পর্যায়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ, যার ওপর ভিত্তি করে ‘চূড়ান্ত নির্বাচন’ করা হয়। জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ঘোষণার পর থেকে সাধারণত ছয়টি থিমের ওপর কমনওয়েলথ বৃত্তির দরখাস্ত আহ্বান করা হয়ে থাকে।
ক. উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি
খ. স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নতকরণ ও সামর্থ্য বাড়ানো
গ. বৈশ্বিক কল্যাণ ও সমৃদ্ধিসাধন
ঘ. বৈশ্বিক শান্তি, নিরাপত্তা ও সুশাসন নিশ্চিতকরণ
ঙ. স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ ও সংকট মোকাবিলা
চ. অভিগমন, অন্তর্ভুক্তি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ দরখাস্ত বাতিল হিসেবে গণ্য করবে ইউজিসি। তাই আবেদনের ক্ষেত্রে আন্তরিক হোন। যথাযথতা অনুসরণ করে স্বপ্নপূরণের পথ ধরে এগিয়ে যান।