বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন থাকে অনেকেরই। সে স্বপ্নপূরণে তাঁরা খোঁজ করেন স্কলারশিপ বা বৃত্তির। কিন্তু কীভাবে এ বৃত্তি পাওয়া যাবে বা কোথায় পাওয়া যাবে, অনেকেই তা অনেকেই জানেন না। আবার অনেকে এসব বৃত্তির কথা শুনলেও আবেদন করার প্রক্রিয়া, আবেদন কখন শেষ ঠিকমতো অনেকসময় বুঝতে পারেন না। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যও অনেকের কাছে থাকে না। কিন্তু বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বের কয়েকটি দেশে দারুণ কিছু বৃত্তি চালু রয়েছে। এ রকম ধরনের ৫টি বৃত্তির বিষয়ে জেনে নিন—
যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার স্বপ্ন অনেকেই দেখেন। কিন্তু সেখানে বৃত্তি কোথায় পাবেন? যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি বৃত্তি আপনার জন্য দারুণ সহায়ক হতে পারে। ফুলব্রাইট নামের এ বৃত্তি বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। এটি যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও ১৫৫টি দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক বৃত্তি বিনিময় কার্যক্রম। ১৯৪৬ সালের ১ আগস্ট ফুলব্রাইট বৃত্তি কার্যক্রম শুরু হয়। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৪০ হাজার ৮০০ জন ফুলব্রাইট বৃত্তি পেয়েছেন। এর মধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার ৮০০ জন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এবং অন্যান্য দেশ থেকে ২ লাখ ১০ হাজার জন এই কার্যক্রমে অংশ নেন। এই কার্যক্রম থেকে প্রতিবছর প্রায় ৮ হাজার জন বৃত্তি পান।
ইউরোপে পড়াশোনা করা যাদের স্বপ্ন, তাঁদের জন্য ইরাসমাস মুন্ডাস প্রোগ্রাম বৃত্তি কাজে লাগতে পারে। ইরাসমাস মুন্ডাস ইউরোপে পড়াশোনার জন্য বেশ জনপ্রিয় একটি বৃত্তি কার্যক্রম। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এটি চালু করেছে। এর লক্ষ্য উচ্চতর শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানো এবং একাডেমিক সহযোগিতার মাধ্যমে জনগণ ও সংস্কৃতির মধ্যে যোগাযোগ এবং বোঝাপড়া উন্নত করা। এটি শিক্ষার্থীদের ইউরোপের অন্তত দুটি দেশে যৌথ মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য পড়ালেখার সুবিধা দেয়। এই বৃত্তির আওতায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১৩০টির বেশি মাস্টার্স প্রোগ্রাম রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কৃষি ও ভেটেরিনারি, প্রকৌশল, উৎপাদন ও নির্মাণ, স্বাস্থ্য ও কল্যাণ, মানবিক ও কলা, বিজ্ঞান, গণিত ও গণনা, সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায়, আইন বিষয় ইত্যাদি।
ইউরোপে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এ বৃত্তি দারুণ সুযোগ। প্রয়োজনীয় তথ্যের ঘাটতির কারণে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই এই সুযোগ হাতছাড়া করেন। এ বৃত্তির জন্য আইইএলটিএসে ভালো স্কোর গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাজ্যের চেভেনিং স্কলারশিপ আরও একটি সম্মানজনক বৃত্তি কার্যক্রম। যুক্তরাজ্যের ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস (এফসিও) এবং অংশীদার সংগঠনগুলো এটি প্রতিষ্ঠা করে। যুক্তরাজ্য সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৃত্তি প্রোগ্রাম এটি। ১৯৮৩ সালে এই বৃত্তি কার্যক্রম শুরু হয়। এর আওতায় চেভেনিং স্কলারশিপ ও চেভেনিং ফেলোশিপ দেওয়া হয়। যুক্তরাজ্যের দূতাবাস ও হাইকমিশন বৃত্তি নির্ধারণ করে। সবার আগের স্কলারশিপের প্রয়োজনটা অনুধাবন করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপে আবেদনের পদ্ধতি বিভিন্ন। কিছু স্কলারশিপ একাডেমিক রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে, আর কিছু স্কলারশিপ কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়। আবার শিক্ষার্থীদের কাজের অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বের সক্ষমতা বিবেচনা করেও স্কলারশিপ দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের আবেদন প্রক্রিয়ার বিষয়ে ভালো করে জানা দরকার।
কমনওয়েলথ স্কলারশিপ এবং ফেলোশিপ কমনওয়েলথভুক্ত দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য। যুক্তরাজ্যে উচ্চতর শিক্ষা সম্পন্ন শেষে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের শিক্ষার্থীরা নিজের দেশে ফিরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন, সেই লক্ষ্যে এই বৃত্তি দেওয়া হয়। তারা এক বছরের মাস্টার্স বা সমমান কোর্স এবং তিন বা চার বছরমেয়াদি ডক্টরেট ডিগ্রি সম্পন্ন করার সুবিধা দেয়। এই প্যাকেজে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ, টিউশন ফি, প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্যান্য ভাতা অন্তর্ভুক্ত। এই বৃত্তির অধীনে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, বিজ্ঞান (বিশুদ্ধ ও ফলিত) কৃষি, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। এই স্কলারশিপের জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিল ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ওয়েবসাইটে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।
অস্ট্রেলিয়া সরকার পরিচালিত একটি সম্মানজনক বৃত্তি কার্যক্রম হচ্ছে ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান অ্যাওয়ার্ডস’। দেশটির পররাষ্ট্র বিভাগ, শিক্ষা বিভাগ এবং অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (এসিআইএআর) স্কলারশিপ ও ফেলোশিপসহ একযোগে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ পরিচালনা করে। অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা, গবেষণা এবং পেশাগত উন্নয়ন করতে এবং সমমানের দেশে উচ্চপর্যায়ের সাফল্য অর্জনে অস্ট্রেলিয়ান অ্যাওয়ার্ডস প্রোগ্রাম সহায়তা করে। বৃত্তির আওতায় টিউশন ফি, আকাশপথে ভ্রমণ, প্রতিষ্ঠান ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাসহ শিক্ষার্থীকে পাঁচ হাজার ডলার সহায়তা দেওয়া হয়।