যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিটি কলেজ ইনিশিয়েটিভ (সিসিআই) কার্যক্রমের আওতায় ২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষে কমিউনিটি কলেজে পড়াশোনার জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের স্নাতক শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা আমেরিকান একটি কমিউনিটি কলেজে পূর্ণকালীন শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। যুক্তরাষ্ট্রে এক শিক্ষাবর্ষে থাকার জন্য কোনো একটি কলেজে ভর্তি হতে আবেদন করতে পারবেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। প্রতিশ্রুতিশীল শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের সামর্থ্য ও ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আমেরিকান সংস্কৃতি সম্পর্কে তাঁদের ধারণা ও বোঝাপড়া আরও স্বচ্ছ ও গভীর করাই এ কর্মসূচির উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশের মার্কিন দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই কার্যক্রমের আওতায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বিদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থেকে পড়াশোনা করতে পারবেন। পড়াশোনা শেষে নতুন জ্ঞান, কারিগরি দক্ষতা ও বৈশ্বিক নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা আবার দেশে ফিরে আসতে পারবেন। ২০০৭ সাল থেকে এই কার্যক্রমের আওতায় ২৪টি দেশের চার হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। আর ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ৭৬ শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন কলেজে অধ্যয়নের জন্য বৃত্তি পেয়েছেন। অ্যাকাডেমিক, সার্ভিস লার্নিং, ইন্টার্নশিপ, কালচারাল এক্সচেঞ্জ, লিডারশিপ এ অ্যাকশন প্ল্যানিং সম্পর্কে ধারণা মিলবে সিসিআই প্রোগ্রামে।
কমিউনিটি কলেজ ইনিশিয়েটিভ কর্মসূচির অধীন ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিটি কলেজগুলোতে কৃষি, ফলিত প্রকৌশল, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসন, প্রাক্-শৈশব শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি, গণমাধ্যম, সামাজিক সেবা, স্বাস্থ্য ও জননিরাপত্তা এবং পর্যটন ও আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবেন।
এই কার্যক্রমে সফল হওয়ার জন্য আবেদনকারীর উচ্চ একাগ্রতার পূর্বপ্রমাণ ও অসাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক ফল থাকতে হবে এবং উচ্চমাধ্যমিক বা এ লেভেল–সম্পন্ন ও আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে কোনো কোর্সে অধ্যয়নরত হতে হবে। অংশগ্রহণকারীরা তাঁদের নিজ নিজ অধ্যয়ন বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সনদ পাবেন এবং নিজ নিজ অধ্যয়ন বিষয়ে শিক্ষানবিশির মাধ্যমে সরাসরি ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। তবে এটি কোনো ডিগ্রি প্রোগ্রাম নয়। শিক্ষার্থীরা কেবল দুই ষাণ্মাসিকের পূর্ণ ক্রেডিট অর্জন করবেন।
পেশাগত প্রশিক্ষণ নেওয়ার বাইরে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে নেতৃত্বের দক্ষতা জোরদার হবে, ইংরেজি ভাষায় পারদর্শিতা বাড়বে। এ ছাড়া সমাজসেবা, সামাজিক দায়িত্বসহ মার্কিন সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ে ধারণা সৃষ্টি হবে। এ কার্যক্রম শেষে অংশগ্রহণকারীরা তাঁদের নিজ নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে অবদান রাখার লক্ষ্যে নতুন দক্ষতা নিয়ে দেশে ফিরে আসবেন।
সিসিআই কার্যক্রমে যে যে সুবিধা মিলবে—
*নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা পাবেন জে-১ ভিসা;
*এ ভিসার আওতায় সীমিত দুর্ঘটনা ও অসুস্থতাজনিত কাভারেজ;
*যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিজ দেশে যাতায়াতের জন্য রাউন্ড ট্রিপ ভ্রমণসুবিধা;
*টিউশন ও কলেজ ফি;
*আবাসন ও খাবার;
*বই, শিক্ষা উপকরণ ও সাধারণ ব্যয়ের জন্য আর্থিক সুবিধা।
সিসিআইয়ে আবেদনের যোগ্যতা—
*বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশের দ্বৈত নাগরিক বা স্থায়ী অভিবাসী হওয়া যাবে না;
*২০২৫ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত বয়স হতে হবে ন্যূনতম ১৮ বছর;
*উচ্চমাধ্যমিক/এ লেভেল পর্যায়ের শিক্ষা সম্পন্ন করেছেন অথবা বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম থেকে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি আছেন;
*ইংরেজি ভাষায় লেখা ও কথা বলায় পারদর্শী হতে হবে। TOEFL স্কোর ৪২০ অথবা IELTS স্কোর ৫.০ পেতে সক্ষম হতে হবে অথবা ডুওলিঙ্গো স্কোর (টোয়েফল বা আইএলটিএসের সমমান)। ইতিমধ্যে TOEFL বা IELTS-এর স্কোর থেকে থাকলে, সেটি আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আবেদনের আগে ইংরেজি পরীক্ষার স্কোর থাকলে নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় সুবিধা পাওয়া যাবে;
*যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সমাজে বাংলাদেশি সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে আগ্রহী ও সমর্থ হতে হবে;
*যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়ন বা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সীমিত বা নেই। বিদেশে অধ্যয়ন বা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা না থাকলে অগ্রাধিকার পাওয়া যাবে;
*যুক্তরাষ্ট্রের জে-১ ভিসা পাওয়ার জন্য যোগ্য হবেন এবং এ মর্যাদা বজায় রাখতে এ কার্যক্রমের শর্তাবলি পূরণ করতে হবে;
*কার্যক্রম শেষে বাংলাদেশে ফিরতে এবং জে-১ ভিসার আবশ্যকতা অনুযায়ী দুই বছর দেশে থাকার শর্ত পূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ;
*২০২৫ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিময় কার্যক্রম শুরুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে;
*আবেদনকারী কোনো অভিযোগে গ্রেপ্তার হলে বা কখনো দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।
আবেদন যেভাবে
আবেদনপত্র ও আবেদনের নিয়মাবলী এই লিংক থেকে ডাউনলোড করে আগামী ১৯ ডিসেম্বর বিকেল চারটার মধ্যে সরাসরি বা কুরিয়ারে পাঠাতে হবে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
আবেদনকারীর জন্য নির্দেশনা
পূরণ করা মূল আবেদনপত্রের শেষ পাতায় প্রার্থীকে স্বাক্ষরসহ জমা দিতে হবে। ইংরেজি আবেদনপত্রে দেওয়া সব প্রশ্নের উত্তর দিতে (সুনির্দিষ্ট স্থান ব্যতীত) হবে। কোনো ঘর ফাঁকা রাখা যাবে না। কোনো প্রশ্ন আপনার জন্য প্রযোজ্য না হলে N/A (not applicable) দিন। আন্তর্জাতিক পাসপোর্টে উল্লেখিত বানান অনুযায়ী আইনসম্মত সম্পূর্ণ নাম বা পারিবারিক নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যোগাযোগের পূর্ণ ঠিকানার মধ্যে সব ঠিকানার ডায়ালিং কোড এবং সব ফোন নম্বরের সিটি/কান্ট্রি কোড অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নিজের মুঠোফোন নম্বর দিতে হবে এবং কোনো আত্মীয় বা বন্ধুর মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করা যাবে না। আবেদন কম্পিউটারে টাইপ করতে হবে, শুধু শেষ পাতায় প্রার্থীকে স্বাক্ষর দিতে হবে।
আবেদনকারীর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার নম্বরপত্র/ও লেভেল এবং এ লেভেলের ট্রান্সক্রিপ্ট/গ্রেড শিট/বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ট্রান্সক্রিপ্ট (সর্বশেষটি) সংযুক্ত করতে হবে। সনদের প্রয়োজন নেই। শিক্ষকের কাছ থেকে নেওয়া ন্যূনতম একটি সুপারিশপত্র সংযুক্ত করতে হবে আবেদনে। এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও আবেদনকারীর পাসপোর্টের তথ্য পাতার ফটোকপি সংযুক্ত করতে হবে।
বিস্তারিত তথ্য, আবেদনের পদ্ধতির জন্য এখানে ক্লিক করুন