২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাজ্যের শেভেনিং স্কলারশিপের জন্য আবেদন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী শেভেনিং বৃত্তির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে পড়ছেন। এ বছরের বৃত্তির আবেদনের শেষ দিন আগামী ৭ নভেম্বর। এ শিক্ষাবর্ষে বিশ্বের ১ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী এবার এ বৃত্তি পাবেন।
দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া নিয়ে অনেকেই জানতে চান। কিন্তু সময়ের অভাব ও আলস্যের রানি হওয়ায় লিখতে পারিনি। এবার ইউরোপে বৃত্তি নিয়ে যাঁরা সাংবাদিকতা, যোগাযোগ, মিডিয়া স্টাডিজে মাস্টার্স পড়তে যেতে চান, তাঁদের জন্য লিখছি। ইউরোপের বেশির ভাগ দেশেই মাস্টার্স দুই বছরের, যুক্তরাজ্যে ব্যতিক্রম। সেখানে সাধারণত মাস্টার্স এক বছরের, কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেড় বা দুই বছরের প্রোগ্রাম আছে।
যুক্তরাজ্যের চেভেনিং বৃত্তি ফুল ফান্ডেড। চেভেনিং মূলত পেশাজীবীদের জন্য একটি বৃত্তি। এ বৃত্তির জন্য দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। এর মানে এমন না যে পাস করে দুই বছর। ছাত্রজীবনে করা কোনো ইন্টার্নশিপ কিংবা পার্টটাইমের অভিজ্ঞতাও তারা কাউন্ট করে। উন্নয়ন সংস্থা, ইয়ুথ ফোরাম, স্বাস্থ্য, আইন পেশায় থাকা লোকজন এবং সরকারি চাকুরে—এগুলো থেকে বেশি লোকজন এই বৃত্তি পান বলে কয়েক বছর ধরে দেখছি। কোনো কোনো বার পেশাদার সাংবাদিকেরাও এ বৃত্তি পেয়েছেন। এ বৃত্তি অ্যাকাডেমিশিয়ানরা সংখ্যায় কম পান। চেভেনিং কর্তৃপক্ষ কোনো বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে, বৃত্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে সেটা ওয়েবসাইটে ভালোভাবে লেখা আছে, পড়ে নিতে পারেন বৃত্তিপ্রত্যাশীরা। বৃত্তিতে কী কী পাবেন, তা ওয়েবসাইট থেকে কষ্ট করে পড়ে নিতে হবে।
চেভেনিং বৃত্তির আবেদনের লিংক। এই লিংকের লেখা ভালোভাবে পড়বেন প্রথমে। তারপর বুঝে আবেদন করবেন।
স্কলারশিপের আবেদনে বলা আছে, বৃত্তির জন্য মনোনীত হলে আইইএলটিস (IELTS) স্কোর সাবমিট করতে হবে। আমার পরামর্শ, আগে দেওয়াই ভালো, তাহলে এ বৃত্তির মনোনয়নের জন্য এগিয়ে থাকবেন। আইইএলটিসে ৭-৮ মোটামুটি সেফ স্কোর। তবে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে ভিন্ন ভিন্ন চায়।
এ বৃত্তিপ্রত্যাশীদের পছন্দের ৩টি ইউনিভার্সিটি সিলেক্ট করতে হয়। তারপর সেগুলোতে আবেদন করতে হয়। Ranking (THE/QS) দেখে আবেদন করতে পারেন বৃত্তিপ্রত্যাশীরা। কিছু ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করতে ফি লাগে। সব কাগজপত্র পাঠাতে হয় ডাকে। কিছু ইউনিভার্সিটিতে সব কাগজপত্র অনলাইনে সাবমিট করতে হয়, কোনো ফি লাগে না। তবে ডকুমেন্টস ডাকে পাঠান কিংবা না পাঠান, সব ইউনিভার্সিটিতেই আপনার অনলাইনে আবেদন করতে হয়।
আর ইউনিভার্সিটির জন্য আপনার অনার্সের পঠিত বিষয়ের ফলাফল কাজে লাগবে। তবে বাংলাদেশের মতো ৩.৫ চায় না চেভেনিং বৃত্তির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ডে আপার সেকেন্ড ক্লাস, গুগলে গিয়ে আপনার রেজাল্ট ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ডে কেমন, চেক করে নিতে হবে।
একই কোর্সে তিনটি ভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করতে পারলে ভালো। যেমন কমিউনিকেশনে পড়তে চাইলে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার অব কমিউনিকেশন কোর্স পছন্দ করতে পারেন।
চেভেনিংয়ে অ্যাপ্লাই করার সময় ইউনিভার্সিটি চয়েজে এগুলো দেবেন, পরে প্রাথমিকভাবে সিলেক্টেড হলে ভাইভার সময় অফার লেটার নিয়ে যাবেন।
দুটো রেফারেন্স লাগে। একটা অ্যাকাডেমিক, আরেকটা কাজের জায়গা থেকে। এডুকেশনাল সার্টিফিকেট আর রেফারেন্স শর্টলিস্টেড হলে তারপর আপলোড করতে হয়।
যথেষ্ট ধৈর্য ও সময় নিয়ে অনলাইন আবেদন ফরম পূরণ করাই ভালো। স্টেটমেন্ট অব পারপাস (এসওপি) বৃত্তিপ্রত্যাশীদের বৃত্তি অনেকটা নির্ধারণ করে দেয়। এটা সুলিখিত হওয়া উচিত। ওয়ার্ড লিমিটের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে কিন্তু। নরমালি ১০০-৫০০ শব্দের মধ্যে লিখতে হয়। যে কোর্সে পড়বেন, তা মাথায় রেখে উত্তর লিখবেন। আমি যে তিনবার আবেদন করেছি তখন যে প্রশ্নগুলো ছিল তা চারটি বিষয়কে কেন্দ্র করে— Leadership and influence, Networking, Studying in the UK and Career Plan। আপনার পড়া, কাজ এগুলোকে কেন্দ্র করে এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়াই ভালো।
আবেদন সফল হলে আপনার ই-মেইলে ভাইভার জন্য ডাক আসবে। সাধারণ সময়ে ভাইভা ব্রিটিশ হাইকমিশনেই হয়। ভাইভায় সফল বা বিফল, তা-ও ই-মেইলে জানানো হবে। এ পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে।
*লেখক: শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়