আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি, আরবি ভাষায় দক্ষতা প্রয়োজন, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ১২ বৃত্তি

মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের অন্যতম একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আল-শরিফ ইনস্টিটিউট বিদেশি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেবে। এ বৃত্তি নিয়ে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ও মাস্টার্সের ভর্তির সুযোগ পাবেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও। এ জন্য ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও পোস্টগ্র্যাজুয়েট করার জন্য স্কলারশিপ দেওয়া হবে। বাংলাদেশিদের জন্য বৃত্তির সংখ্যা ১২টি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, যথাযথ নিয়ম মেনে আবেদন করতে হবে। আরবি ভাষায় দক্ষ শিক্ষার্থীদের এই বৃত্তির জন্য প্রাধান্য দেওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বৃত্তিসংক্রান্ত সব তথ্য দেওয়া রয়েছে। আবেদন চলছে। ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত আগ্রহীরা আবেদন করতে পারবেন।

মিসরের মিনিস্ট্রি অব হায়ার এডুকেশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী অনলাইনে আবেদন সম্পন্ন করতে হয়। নানা বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে। আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মীয় ও সাধারণ মিলে মৌলিক মোট ২৩টি অনুষদ ও শতাধিক বিভাগ আছে। এসব অনুষদের মধ্য থেকে ধর্মতত্ত্ব, ইসলামি শরিয়াহ্‌ ও আইন, আরবি ভাষা, ইসলামি শিক্ষা ও আরবি, ইসলামি দাওয়ার মতো ধর্মীয় অনুষদগুলোয় পড়ার সুযোগ বেশি৷ বর্তমানে প্রায় সাত শর বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আল-আজহারের বিভিন্ন বিভাগে পড়াশোনা করছেন।

আল-আজহারে বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থীরা নগদ ২ হাজার ৫০০ মিসরীয় পাউন্ড, টিউশন ফি, থাকা-খাওয়া, দেশে আসা-যাওয়ার বিমানের টিকিট, মিসরের দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পান।

আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী

আবেদনের লিংক

আগ্রহীদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনলাইন http://202.4.112.150:3030 লিংকে তথ্য দাখিল করতে যাবে। ফরম পূরণের গাইডলাইনও এখানে পাবেন শিক্ষার্থীরা। লিংকটি ২৪ ডিসেম্বর দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওপেন থাকবে। আবেদনের যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটেও।

বাংলাদেশের আলিয়া মাদ্রাসার আলিম ও ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত দারুল আরকাম আল-ইসলামিয়া (কওমি) মাদ্রাসার উচ্চমাধ্যমিক (সানুবিয়াহ) সনদের সঙ্গে আল-আজহারের উচ্চমাধ্যমিক (সানুবিয়াহ) সনদের মুআদালা (সমমান চুক্তি) আছে। তাই এই দুই ধরনের সনদধারী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকে সরাসরি ভর্তি হতে পারেন। আল-আজহারের স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির জন্য উচ্চমাধ্যমিক সনদের বাধ্যবাধকতা থাকলেও যাঁদের উচ্চমাধ্যমিক সনদ নেই, তাঁরাও আবেদন করতে পারেন। তাই কওমি, আলিয়ার শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দেশের সব মাধ্যমের যেকোনো বয়সী মানুষ আল-আজহারে এসে পড়াশোনা করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে মিসরে আসার পর তাঁকে যোগ্যতার স্তর নির্ধারণী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আজহারের স্কুল বা কলেজে ভর্তি হতে হবে। তারপর প্রয়োজনীয় স্তরগুলো পর্যায়ক্রমে শেষ করে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি হতে পারবেন।

আল–আজহার বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম সেরা শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে বিবেচ্য। ফাতেমি খিলাফতের সময় ৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে কোরআন ও ইসলামি আইন শিক্ষার জন্য এই শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। বর্তমানে সেক্যুলার বিষয়াদিও কারিকুলামে সন্নিবেশিত আছে।

বিদেশে পড়াশোনার সঙ্গে কাজের সুযোগ আছে যেসব দেশে

মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট জামাল আবদেল নাসের ১৯৬১ সালে আল–আজহারকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করেছিলেন এবং অনেক সেক্যুলার বিষয়ও এর অন্তর্ভুক্ত হয়। যেমন ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, ফার্মেসি, মেডিসিন, প্রকৌশল, কৃষি ইত্যাদি। মিসরের বাইরে ফিলিস্তিনের গাজা এবং কাতারের দোহায় আল–আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা রয়েছে।

বর্তমানে আল–আজহারের ১৫ হাজার ১৫৫ শ্রেণিকক্ষে ৩০ হাজারের বেশি শিক্ষক পাঠদান করেন। তাঁদের কাছ থেকে পাঠ গ্রহণ করেন ৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের ২০ শতাংশ বিদেশি। বর্তমানে ১০২টি দেশের শিক্ষার্থী আল–আজহারে লেখাপড়া করছেন। শিক্ষকসহ আল–আজহারের কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজারের মতো। তবে আল–আজহারের অধীন মিসরের প্রায় চার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়। এ হিসাবে আল–আজহারের বর্তমান শিক্ষার্থী ২০ লাখের মতো। 

  • আবেদনের বিস্তারিত ও আবেদনের পদ্ধতি দেখুন এখানে