প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট কর্তৃক উপবৃত্তির টাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা পেতে পারেন চলতি মাসের শেষ তথা মে মাসের শেষ থেকে জুনের মধ্যে। তবে ঠিক কোন দিন পাওয়া যাবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। প্রথম আলোকে এমনটাই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন সোহাগ।
উপবৃত্তি নিয়ে এক শ্রেণির প্রতারকচক্র ইতিমধ্যে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য বলছে, এমন অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে আইনশৃংলারক্ষাকারী বাহিনী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো এসএমএস আমাদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় না। এ ধরনের এসএমএস ভুয়া ছাড়া আর কিছু নয়। শিক্ষার্থীর অ্যাকাউন্টে উপবৃত্তির টাকা ঢুকলে আমাদের পক্ষ থেকে একটা স্বয়ংক্রিয় এসএমএস যায়, যেটা অনেকটা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকলে যেমন এসএমএস যায়, সেটার মতো। এখানে উপবৃত্তির টাকা তোলার জন্য কারও ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে বলার কোনো সুযোগ নেই।’
উপবৃত্তি পেতে শিক্ষার্থীকে কোনো টাকা কিংবা চার্জ পরিশোধ করতে হয় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীকে এক টাকাও দিতে হবে না। এমনকি উপবৃত্তির টাকার সার্ভিস চার্জ যেটা আসে, সেটাও আমরা দিয়ে দিই, যেন শিক্ষার্থীকে কোনো টাকা খরচ করতে না হয়।’
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের উপবৃত্তির টাকা সাধারণত বছরে দুবার দেওয়া হয়। জুলাই থেকে ডিসেম্বরের টাকা জানুয়ারিতে দেওয়া হয়। আর জানুয়ারি থেকে জুনের টাকা জুনের ১১ তারিখের মধ্যে দেওয়া হয়। গত বছরের জুন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা এই টাকা বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে নিতে পারতেন। কিন্তু নতুনভাবে শুধু নগদ মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে টাকা জমা দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের তথ্যগুলো প্রক্রিয়া করা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে প্রায় অতিরিক্ত তিন মাস সময় লেগেছে। ফলে যেখানে চলতি বছরের জানুয়ারিতে উপবৃত্তির টাকা পাওয়ার কথা ছিল, সেটা পিছিয়ে গেছে। এই পেছানোর ফলে শুধু এবারের জন্য শিক্ষার্থীদের জানুয়ারির টাকা এবং জুনের টাকা একসঙ্গে চলতি বছরের মে মাসের শেষ থেকে জুনের মধ্যে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথম আলোকে এমনটাই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের এক কর্মকর্তা।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার এবং নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীর নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিয়েই শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির টাকা পাবে। এ জন্য তৃতীয় কারও সঙ্গে কোনো লেনদেন কিংবা দেনদরবারের প্রয়োজন নেই। এ বিষয়ে কেউ প্রতারণার চেষ্টা করলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক অথবা প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ থাকবে।
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের এক কর্মকর্তা জানান, মাধ্যমিকে (ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি) ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ৪৪ লাখ ৬১ হাজার শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বাস্তবে এই সংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪০ লাখ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে দেওয়া হয়েছিল ৫০ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬১ শিক্ষার্থীকে। এসব শিক্ষার্থীকে মোট ১ হাজার ৪৭৫ কোটি ৫২ লাখ ৭৩ হাজার ৭৬০ টাকা দেওয়া হয়।
উচ্চমাধ্যমিকে (একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি) ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫৯ হাজার শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭ লাখ ৬২ হাজার ৫৯৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫০৩ কোটি ৬০ লাখ ৫৫ হাজার ৩১০ টাকার উপবৃত্তি বিতরণ করা হয়।
স্নাতক ও সমমান শ্রেণিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ লাখ ৬৫ হাজার শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৩৫ হাজার থাকলেও উপবৃত্তি দেওয়া হয় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৮৯ শিক্ষার্থীকে। তাঁদের ৭৯ কোটি ৪৭ লাখ ৬১ হাজার ৬৫০ টাকার উপবৃত্তি বিতরণ করা হয়।
উপবৃত্তি সংক্রান্ত সচারচর কিছু জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে ভিজিট করুন: pmeat.portal.gov.bd/sites/default/files/files/pmeat.portal.gov.bd/notices/9a5f0433_6d79_4ff3_8d40_9b9e12380fcf/2022-09-01-04-25-b237fbd6b66a2fe4ddcf2e136869ddcb.pdf