সারা বিশ্বে শিক্ষা ব্যয় অনেক বেড়েছে। গত তিন দশকে বিশ্বের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১৩ শতাংশ ও বেসরকারি কলেজগুলোয় প্রায় ১২৯ শতাংশ শিক্ষা ব্যয় বেড়ে গেছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এখন বছরে গড়ে খরচ হয় প্রায় ১০ লাখ ৪২ হাজার ১৬১ টাকা (১০ হাজার ডলার) ও বেসরকারি কলেজগুলোয় প্রায় ৩৬ লাখ ৪৭ হাজার ৫৬৩ টাকা (৩৫ হাজার ডলার) পড়াশোনা বাবদ খরচ করতে হয়।
শিক্ষাবিষয়ক ওয়েবসাইটগুলো বলছে, মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের পরিবারের জন্য পড়াশোনা বাবদ এই পরিমাণ অর্থ খরচ অনেক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে পড়াশোনার এই খরচ কমানোর অন্যতম একটি উপায় হলো বৃত্তি পাওয়া। এ কারণে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর বৃত্তির বিষয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে। আগামী বছর বিশ্বের প্রায় ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী আন্তর্জাতিক বৃত্তি পাওয়ার সুযোগ পাবেন। তাই কীভাবে স্কলারশিপ খুঁজতে হবে, আবেদনের প্রক্রিয়া ও নির্বাচনের পদ্ধতি বোঝা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই প্রতিবেদন বিভিন্ন ধরনের বৃত্তি, কীভাবে তা খুঁজে পেতে হয় এবং আবেদনের পদ্ধতি বুঝতে সহায়তা করবে।
কলেজে পড়ার খরচ বেশি
যুক্তরাষ্ট্রে ২০২১ সালে ২ কোটির বেশি শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তি হয়েছেন। অনেক শিক্ষার্থীকেই টিউশন ফি, আবাসন, বই ও অন্যান্য সরঞ্জাম বাবদ অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয়। আর এসব কিছুরই মূল্য অনেক বেড়ে গেছে। ক্রমবর্ধমান এই ব্যয়ের সঙ্গে অনেকেই তাল মেলাতে পারেন না। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থীর জন্য উচ্চশিক্ষা গ্রহণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
১৯৯৮ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে অসংখ্য কলেজ লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়া শুরু করে। এরপরের বছরগুলোয় অতিরিক্ত অর্থ আয়ের আশায় আরও অনেক কলেজ লাভজনক প্রতিষ্ঠানের মডেল অনুসরণ করেছে।
ডিগ্রি দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠিত কলেজগুলোকেও এখন তালিকাভুক্ত হতে অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয়। আর এই ব্যয় নির্বাহের জন্য কলেজগুলো শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বাড়িয়ে দেয়। এটাও পড়াশোনার খরচ বাড়ার অন্যতম একটি কারণ। আর উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ, কর্মী ও প্রযুক্তির খরচও আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে।
বৃত্তি যে কারণে দরকার
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিসটিকসের তথ্য অনুযায়ী, স্নাতক ডিগ্রিধারী প্রার্থীরা গড়ে প্রতি সপ্তাহে হাইস্কুল ডিগ্রিধারীদের চেয়ে ৫২৫ ডলার (প্রায় ৫৪ হাজার ৭১৩ টাকা) বেশি আয় করতে পারেন।
এ কারণে কলেজ শিক্ষার অর্থায়নের জন্য অনেক শিক্ষার্থী ও পরিবার বৃত্তির কথা ভাবেন। কারণ, বৃত্তি পেলে ওই শিক্ষার্থীর টিউশন ফিসহ শিক্ষাসংক্রান্ত অন্যান্য খরচ মওকুফ হয়ে যায়। আর ওই শিক্ষার্থীর পরিবারকেও কোনো ধরনের ঋণ করতে হয় না এবং পারিবারিক সঞ্চয়ও ভেঙে ফেলতে হয় না।
কলেজের বৃত্তি
যেকোনো বৃত্তি পাওয়ার আগে নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে হবে। একটি আকর্ষণীয় জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করতে হবে। এই জীবনবৃত্তান্তে অবশ্যই পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যকলাপ ও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও নেতৃত্বের দক্ষতার ওপর জোর দিতে হবে। কারণ, এটাই প্রার্থীর আগ্রহকে প্রতিফলিত করবে।
যদি কোনো বিষয়ের ওপর ফোকাস করতে সমস্যা হয় বা হিসাব-নিকাশের প্রয়োজন হয়, তাহলে দ্রুত তা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। এ বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য কিছু ওয়েবসাইট আছে। সেখান থেকেও সহযোগিতা নিয়ে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এরপর যত দ্রুত সম্ভব বৃত্তি খুঁজতে হবে।
যোগ্যতা অনুযায়ী বৃত্তি খুঁজতে হবে
যোগ্যতা অনুযায়ী বৃত্তি খুঁজে পাওয়ার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হলো ইন্টারনেট। কারণ, অনেক স্কলারশিপ ওয়েবসাইটে ওই বৃত্তি পাওয়া যোগ্যতা উল্লেখ করা থাকে। তা দেখে ওই বৃত্তির জন্য আবেদন করা যাবে কি না, তা সহজেই বোঝা যায়। এ ছাড়া অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে আগ্রহ, বিষয় ও যোগ্যতা নির্বাচন করে বৃত্তির তথ্য পাওয়া যায়। এতে সময় কম ব্যয় হয়। কারণ, শিক্ষার্থী যে বিষয়ে বৃত্তি পেতে ইচ্ছুক, তা নির্বাচন করে দিলে কেবল ওই বিষয়ের বৃত্তির তথ্যই দৃশ্যমান হবে। অযথা একাধিক বৃত্তির তথ্য দেখে সময় ব্যয় হয় না।
আবেদনে যা দরকার
আবেদনের জন্য যা যা প্রয়োজন, তা আগে ভালো করে বুঝে নিতে হবে। ওই স্কুল–কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তির নিয়ম জেনে নিতে হবে। যেমন কলেজে চার ক্যাটাগরিতে বৃত্তি দেওয়া হয়। এগুলো হলো—ফেডারেল অনুদান (৪৭ শতাংশ), স্কুল বৃত্তি (৩৫ শতাংশ), প্রাইভেট স্কলারশিপ (৩৫ শতাংশ) ও রাষ্ট্রীয় অনুদান (৮ শতাংশ)। প্রতিটি ক্যাটাগরির জন্য আবেদনে আলাদা আলাদা প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
ফেডারেল অনুদানের জন্য আবেদন করতে হলে ফ্রি অ্যাপ্লিকেশন ফর ফেডারেল স্টুডেন্ট এইড (এফএএফএসএ) ফরম পূরণ করতে হয়। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একটি প্রবন্ধসহ অন্যান্য উপকরণ জমা দিতে হয়।
আবার প্রাইভেট স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে হলে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো ওই প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে। এ কারণে আবেদনের যোগ্যতা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয় মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। সেই সব যোগ্যতা আবেদনকারীর পূরণ হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।
আবেদনের প্রস্তুতি
আবেদনকারী কোন বৃত্তির জন্য যোগ্য, তা নিশ্চিত জানা হলে আবেদন করতে কী কী নথি ও বিষয় প্রয়োজন, সে দিকে মনোযোগ দিতে হবে। যেসব বৃত্তির জন্য আবেদন করা যাবে, আবেদনের সময়সীমা ও আবেদনে কী কী লাগবে, তার একটা তালিকা তৈরি করে নিতে হবে।
শিক্ষাগত যোগ্যতার মার্কশিট ও লেটারস অব রেকমেন্ডেশনসহ আবেদনের জন প্রয়োজনীয় উপকরণ গুছিয়ে হাতের কাছে রাখতে হবে, যেন প্রয়োজন হলেই তা দিয়ে দেওয়া যায়।
সবশেষে লেখার দক্ষতা বাড়াতে হবে। কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—গ্রেড, পাঠ্যক্রম, পরীক্ষার স্কোর ও প্রবন্ধ লেখা। চার নম্বর বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর দক্ষতার ওপর নির্ভর করছে আবেদন গ্রহণ হবে কি না। প্রবন্ধ লেখার দক্ষতা বাড়াতে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে লেখার অনুশীলন করতে হবে। ইন্টারনেটসহ নানা উৎস থেকে নমুনা প্রবন্ধ পর্যালোচনা করতে হবে।