বিএনপির ডাকা অবরোধের কারণে রাজধানীর বিদ্যালয়গুলো খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুবই কম। পর্যাপ্ত উপস্থিতি না থাকায় কোনো কোনো বিদ্যালয়ে ক্লাস হচ্ছে না। কোথাও ক্লাস হলেও উপস্থিতি খুবই কম। অবশ্য কোনো কোনো বিদ্যালয়ে উপস্থিতি স্বাভাবিক ছিল।
তবে ক্লাসের চেয়েও বড় শঙ্কা আসন্ন বার্ষিক পরীক্ষা ও মূল্যায়ন শেষ করা নিয়ে। দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী প্রায় তিন কোটি। হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দীর্ঘ হতে থাকলে এসব পরীক্ষা কীভাবে হবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষক ও অভিভাবকেরা।
তিন দিন (৩১ অক্টোবর এবং ১ ও ২ নভেম্বর) অবরোধ কর্মসূচি শেষে মাঝে দুই দিন বিরতি দিয়ে আজ রোববার থেকে আবার দুই দিনের অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি।
অবরোধের মধ্যে আজ দুপুরের পর রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে গেলে মূল ফটকের বাইরে পাওয়া গেল দুই ছাত্রকে। দ্বাদশ শ্রেণির ওই দুই ছাত্র জানায়, অবরোধের কারণে আজ তাদের ক্লাস হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির দুই শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা জানান, শিক্ষার্থী উপস্থিতি প্রায় নেই বললেই চলে, তাই ক্লাস হচ্ছে না।
প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও সমন্বয়কারী (প্রশাসন) তারিকুল আজম খান জানান, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় ১০ হাজারের মতো। এর মধ্যে প্রভাতি শাখায় (সকালের পালা) পড়ে সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী। বাকিরা দিবা শাখায়। আজ প্রভাতি শাখায় সব মিলিয়ে ৪০ থেকে ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী এসেছিল। এ রকম অবস্থায় ক্লাসের গুরুত্ব থাকে না।
এর আগে বেলা পৌনে একটার দিকে সেগুনবাগিচা হাইস্কুলে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীর উপস্থিতি স্বাভাবিক সময়ের মতো। তখন ক্লাস শেষে পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া সন্তানকে নিয়ে বাসায় যাচ্ছিলেন এক মা। জানালেন, বিদ্যালয় খোলা, তাই সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন।
সেগুনবাগিচা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এ কে এম ওবাইদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি আজ নবম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে ক্লাস করিয়েছেন। ওই ক্লাসে ৩০ জনের শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৫ জনের মতো উপস্থিত ছিল।
এ কে এম ওবাইদুল্লাহ জানান, গত অবরোধের প্রথম দিনে (শেষ হওয়া তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিন) উপস্থিতি কম ছিল। ওই দিন প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ছিল ৫৬ জন। কিন্তু পরদিন থেকে উপস্থিতি বাড়তে থাকে। তাঁদের বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী আশপাশের এলাকার বাসিন্দা বলে জানান প্রধান শিক্ষক।
মতিঝিলে অবস্থিত আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে জানা গেল, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি খুবই কম। তবে ক্লাস হয়েছে। বিদ্যালয়ের ফটকের সামনে নবম শ্রেণির এক ছাত্রকে পাওয়া গেল। সে বলল, ক্লাসে আজ উপস্থিত ছিল ১৫ জন। তাদের ক্লাসে শিক্ষার্থী ৭০ জনের মতো।
পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাদের ক্লাসে ৬০ জনের মতো শিক্ষার্থী। কিন্তু ক্লাসে উপস্থিত ছিল ১৪ জন।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মনিরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, কম উপস্থিতি থাকলেও তাঁরা ক্লাস নিচ্ছেন। যারাই আসছে, তাদের নিয়েই ক্লাস হচ্ছে।
জাতীয় নির্বাচনের কারণে এ বছর বিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক পরীক্ষা ও মূল্যায়ন নভেম্বর মাসেই শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা বিভাগ। এর মধ্যে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু হবে ৯ নভেম্বর। নতুন শিক্ষাক্রমের হওয়ায় এই দুই শ্রেণির মূল্যায়নের সময় কেন্দ্রীয়ভাবে ঠিক করা হলেও অষ্টম ও নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা বিদ্যালয়গুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নেয়। এ জন্য এই পরীক্ষা একেক বিদ্যালয়ে একেক তারিখে হয়ে থাকে। তবে সবার পরীক্ষা শেষ করতে হবে নভেম্বর মাসে।
কিন্তু সরকারবিরোধী দলগুলোর এ রকম টানা কর্মসূচি ওই সব মূল্যায়ন ও বার্ষিক পরীক্ষার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যদি শুধু কর্মদিবসগুলোয় কর্মসূচি থাকে এবং পরিস্থিতি কোনোভাবেই অনুকূলে না আসে, তাহলে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারে এসব পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না, চিন্তাও আছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার একটি বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, নভেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা ও মূল্যায়ন শেষ করতে চাইলে শুধু শুক্র ও শনিবার এসব পরীক্ষা বা মূল্যায়ন কাজ করে তা শেষ করা কঠিন হবে। সে ক্ষেত্রে তাঁর পরামর্শ, এ ক্ষেত্রে মূল বিষয়গুলোর ওপর পরীক্ষা নিয়ে কিংবা সব বিষয়ে ৫০ শতাংশ নম্বরের পরীক্ষা নিয়ে তা শেষ করা সম্ভব।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবীর চৌধুরী আজ প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত আগের পরিকল্পনামতোই পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত আছে। দেখা যাক, সামনে পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।