অধিভুক্ত কলেজ-মাদ্রাসাসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ৪৪ লাখ ১৫ হাজার ৬৪৯ জন।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ২৩ লাখ ১ হাজার ৮১৮ ও ছাত্রী ২১ লাখ ১৩ হাজার ৮২৬ জন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নতুন তথ্য বলছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ও ছাত্রীর সংখ্যা সমান হতে চলছে। এর মধ্যে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রীরা এগিয়ে আছেন।
দেশের মেয়েরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে সংখ্যার দিক দিয়ে আগে থেকেই ছেলেদের পেছনে ফেলে এগিয়ে চলছে। উচ্চমাধ্যমিক কলেজেও অংশগ্রহণের দিক দিয়ে ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরাই এগিয়ে। তবে পিছিয়ে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে।
কয়েক দিন আগে রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ছাত্রীদের গড় হার ৪৮। আর ছাত্রদের হার ৫২।
সরকারি পর্যায়ে ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তিসহ কিছু সুবিধা দেওয়া হয়। পাশাপাশি এখন অভিভাবকদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়ছে। আবার উচ্চশিক্ষার সুযোগও বাড়ছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে এবং স্থানীয় পর্যায়ে অনেক কলেজে অনার্স কোর্স চালু হয়েছে। এসব কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের হারও বাড়ছে।
তবে শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণের তুলনায় সরকারি চাকরিতে নারীর হার এখনো যথেষ্ট নয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ‘সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যান ২০২২’–এর তথ্য বলছে, দেশে কর্মরত প্রায় ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর মধ্যে ৪ লাখ ৯ হাজার ১৩৯ জন নারী ও প্রায় ১০ লাখ পুরুষ।
ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে ২০২২ সালের তথ্যের ভিত্তিতে। ওই সময় দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ৫৩টি। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১১০টি। পরে অবশ্য সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে অধিভুক্ত কলেজ-মাদ্রাসাসহ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থী ছিল ৪৪ লাখ ১৫ হাজার ৬৪৯ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২৩ লাখ ১ হাজার ৮১৮ জন; যা মোট শিক্ষার্থীর ৫২ শতাংশ। এ ছাড়া ছাত্রী ২১ লাখ ১৩ হাজার ৮২৬ জন; যা মোট শিক্ষার্থীর ৪৮ শতাংশ।
ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব মিলিয়ে শিক্ষার্থী ছিলেন ৩৬ হাজার ৬৭৬ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৪১ শতাংশের বেশি। তবে সর্বশেষ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রীর হার বেশি হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে ৪৪ শতাংশ ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। আর সর্বশেষ শিক্ষাবর্ষে (২০২২-২৩) ছাত্রী ভর্তির হার ছিল প্রায় ৫২। দেশের মেয়েরা যে মেধার স্বাক্ষর রেখে এগিয়ে চলেছে, ছাত্রী ভর্তির হারের এই বৃদ্ধি সেটিই নির্দেশ করে।’
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা সমান হতে চললেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীরা এখনো বেশ পিছিয়ে। ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ছিল ৩ লাখ ৪১ হাজার ৯৮ জন। এর মধ্যে ২৯ শতাংশ ছাত্রী। আর ছাত্র ৭১ শতাংশ।
বেড়েছে ৩ লাখের বেশি শিক্ষার্থী
করোনার ধাক্কা সামলিয়ে আবারও দেশের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থী বাড়ছে। গত তিন বছরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ছিল প্রায় ৪৭ লাখ। কিন্তু পরের বছর প্রায় আড়াই লাখ শিক্ষার্থী কমে যায়। ওই সময় করোনার সংক্রমণজনিত পরিস্থিতির প্রভাব পড়ে। তবে এক বছরের ব্যবধানে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
২০২২ সালে এসে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ লাখের বেশি বেড়েছে। ২০২১ সালে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থী ছিল ৪৪ লাখ ৪১ হাজার ৭১৭ জন। পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ লাখ ৫৬ হাজার ৭৪৭ জন। যত শিক্ষার্থী বেড়েছে, তার মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজারের বেশি। বাকি ৩১ হাজারের মতো বেড়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র–ছাত্রীর ভর্তির হার প্রায় সমান হওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করেন ইউজিসির সদস্য ও প্রথিতযশা বিজ্ঞানী অধ্যাপক হাসিনা খান। তিনি বলেন, ‘শুধু সংখ্যাই নয়, এখন ফলাফলের দিক দিয়েও ছাত্রীরা খুব ভালো করছে। এর একটি কারণ, ছাত্রীদের অন্যান্য দিকে মনোযোগটা কম। ছেলেরাও মেধার দিক দিয়ে খারাপ তা নয়। কিন্তু অনেকেই অন্যান্য দিকে ঝুঁকে যায়।’
অধ্যাপক হাসিনা খান আরও বলেন, ‘তুলনামূলকভাবে ছাত্রীরা পড়াশোনার প্রতি ফোকাস বেশি দেয়। তবে মানসিকতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে নারীদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশে এখনো কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। এখন পর্যন্ত হারটি কম হলেও ধীরে ধীরে নারীরা চাকরিতেও এগিয়ে যাচ্ছেন, নেতৃত্বে আসছেন। একটু সময় লাগলেও পরিবর্তন হবেই।’