ক্যাডার-বৈষম্য, পদোন্নতিসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানসহ বিভিন্ন দাবিতে আজ মঙ্গলবার থেকে টানা তিন দিনের ‘সর্বাত্মক কর্মবিরতি’ শুরু করেছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এই কর্মবিরতির কারণে সরকারি কলেজগুলোতে ক্লাস হচ্ছে না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ২০২১ সালের ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্স তৃতীয় বর্ষের তিন দিনের (১০, ১১ ও ১২ অক্টোবর) পরীক্ষা ইতিমধ্যে স্থগিত করা হয়েছে। অন্যদিকে মাউশিসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারাও কাজ করছেন না।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ডাকে দেশের সরকারি কলেজ, সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), শিক্ষা বোর্ডসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে এ কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে। সমিতি ঘোষণা দিয়েছে, ক্লাস, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা, শিক্ষা বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধীন ভর্তি, ফরম পূরণ, সব ধরনের পরীক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড কর্মবিরতির আওতায় থাকবে।
আজ দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মূল সংস্থা মাউশিতে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা দপ্তরে উপস্থিত থাকলেও তাঁরা কাজ করছেন না। কেউ কেউ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কক্ষে বসে ছিলেন।
প্রথম আলোর একজন ফটোসাংবাদিক ঢাকা কলেজে গিয়ে দেখেন, শিক্ষকেরা সেখানে কর্মবিরতি পালন করছেন। পরে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক কুদ্দুস শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, কর্মবিরতির সমর্থনে আজ তাঁদের কলেজে কোনো শিক্ষা কার্যক্রম হয়নি।
ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন সরকারি কলেজে কর্মবিরতি পালনের খবর পাওয়া গেছে। কুমিল্লা থেকে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কর্মবিরতির কারণে আজ জেলার সব সরকারি কলেজ, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা কুমিল্লা অঞ্চলে ক্লাস, পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কাজ বন্ধ ছিল। সকাল ১০টায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে দেখা গেছে, লোকজন বসে আছেন। তাঁদের একজন লক্ষ্মীপুর জেলার ভবানীপুর এলাকার বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘সনদ নিতে এসেছিলাম। এখন দেখি কর্মকর্তারা আন্দোলনে। আগামী রোববারের আগে সনদ পাব না। তাই ফিরে যাচ্ছি।’
তিন দিনের কর্মবিরতির প্রথম দিন আজ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) শাহেদুল খবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা সারা দেশে কর্মবিরতি পালনের খবর পাচ্ছেন। কলেজগুলো তাদের নির্ধারিত কর্মসূচিগুলো পিছিয়ে দিয়েছে। পরীক্ষাও পেছানো হয়েছে। দপ্তরগুলোতে তাঁরাও কোনো ফাইলে সই করছেন না।
ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে দাবি পূরণের ব্যবস্থা না হলে আরও কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী। তিনি বলেন, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি সভা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবে।
এর আগে গতকাল সোমবার বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি শাহেদুল খবির চৌধুরী ও সমিতির মহাসচিব শওকত হোসেন মোল্ল্যার সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা আশা করেছিলাম, কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং শিক্ষা ক্যাডারের ন্যায্য দাবিগুলো পূরণ করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এ কারণে সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১০, ১১ ও ১২ অক্টোবর টানা তিন দিনের কর্মবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে।’
এর আগে একই দাবিতে ২ অক্টোবর কর্মবিরতি পালন করেছিলেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি তুলে ধরার পাশাপাশি কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়েছিল, পদোন্নতি-বৈষম্য কমাতে সব ক্যাডারে সুপারনিউমারারি পদ (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সংখ্যার চেয়ে অতিরিক্ত পদ) সৃষ্টি করে পদোন্নতি দেওয়া, অধ্যাপকদের বেতন গ্রেড তৃতীয় ধাপে উন্নীত করা ও অর্জিত ছুটির সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। শিক্ষা ক্যাডারের তফসিলভুক্ত পদ ‘দখলের মানসে’ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার জন্য পৃথক নিয়োগ বিধিমালা করা হয়েছে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির অভিযোগ, পদোন্নতিতে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে শিক্ষা ক্যাডার।