দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের (সরকারীকরণ) দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষকদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। মাঝে কয়েক দিন শিক্ষকের উপস্থিতি কমে গেলেও অবস্থান কর্মসূচির ১৫তম দিনে এসে আজ মঙ্গলবার হঠাৎ শিক্ষকের উপস্থিতি অনেক বেশি লক্ষ করা গেছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত শিক্ষকদের যে তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছে, তার কঠোর সমালোচনা করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকনেতারা।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে গত রোববার (২৩ জুলাই) যেসব প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন, তাঁদের নামের তালিকা চায় শিক্ষা বিভাগ। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ঢাকা অঞ্চলের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই তালিকা চাওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবারের মধ্যে এই তালিকা দিতে বলা হয়। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ কর্মসূচি চলাকালে বক্তৃতায় মাউশির মহাপরিচালকের উদ্দেশে বলেন, ‘তালিকা তৈরির দরকার নেই। একটি হাজিরা শিট তৈরি করে এখানে (আন্দোলনস্থলে) পাঠিয়ে দিন, কষ্ট করতে হবে না।’
এই আন্দোলনকে রুটিরুজি ও পেটের তাগিদের আন্দোলন বলে মন্তব্য করেন শেখ কাওছার আহমেদ। তিনি বলেন, ‘যতই অস্তিত্বে আঘাত করবেন, আন্দোলন ততই বেগবান হবে।’
শিক্ষামন্ত্রীর উদ্দেশে শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, ‘একটি শিট তৈরি করে পাঠিয়ে দেখুন কারা জাতীয়করণ চায় আর কারা চায় না।’ আবারও প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ কামনা করে এই শিক্ষকনেতা বলেন, অভিভাবক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ ছাড়া তাঁরা ঘরে ও শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাবেন না। যত দিন অভিভাবকের দেখা না পাবেন, তত দিন রাজপথেই থাকবেন।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ডাকে ১১ জুলাই থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকেরা। এর আগে ১৯ জুলাই আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনরত শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী। সেখানে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে (জাতীয়করণ) আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ নেই। তবে জাতীয়করণের যৌক্তিকতা আছে কি নেই, সেটাসহ শিক্ষা, শিক্ষকদের সার্বিক মানোন্নয়নের লক্ষ্যে দুটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী আগস্টের শেষ নাগাদ এ দুই কমিটি গঠন করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একটি কমিটি জাতীয়করণসহ শিক্ষা ও শিক্ষকদের মানোন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা, যৌক্তিকতা ও করণীয় বিষয়ে গবেষণা করবে। আরেকটি কমিটি আর্থিক বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে। এ ছাড়া সেদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিলেরও ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী।
তবে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকেরা। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল হওয়ায় রোববার থেকে ক্লাস শুরু হলেও আন্দোলনকারী এসব শিক্ষক ক্লাসে ফিরে যাননি।