ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গত তিন বছরে অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিল শিক্ষক নিয়োগ ‘দুর্নীতি’র মামলা। স্কুলে শিক্ষক এবং কর্মচারী নিয়োগে নানা অনিয়ম ও অভিযোগ নিয়ে নানা আলোচনা আছে। টেট (প্রাথমিক স্কুল) এবং এসএসসির (মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক) দুই ক্ষেত্রেই আছে বিস্তর অভিযোগ। টেট নিয়ে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, সাড়ে তিন মাসের শুনানি শেষে আজ সোমবার সেই এসএসসি মামলার রায় ঘোষণা করা হলো। রায়ে ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল করে দিলেন কলকাতা হাইকোর্ট। এর ফলে ২০১৬ সালের পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বাতিল করে দিলেন উচ্চ আদালত।
বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ শাব্বির রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন। এতে এসএসসি মামলায় ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল করা হয়েছে। ২০১৬ সালের প্যানেলে চাকরি পেয়েছিলেন তাঁরা। প্যানেলের মেয়াদ শেষের পরে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের বেতন দিতে হবে। আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে ১২ শতাংশ সুদসহ বেতন ফেরতের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তবে সোমা দাস নামের এক চাকরি পাওয়া প্রার্থীর চাকরি থাকবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন হাইকোর্ট। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। মানবিক কারণে তাঁর চাকরি বহাল রেখেছেন আদালত। বিচারপতি জানিয়েছেন, এসএসসি প্যানেলের মেয়াদ শেষের পরে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের বেতনও ফেরত দিতে হবে। এসএসসির ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র দ্রুত এসএসসির সার্ভারে আপলোড করতে হবে।
নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ নিয়োগের পাশাপাশি এসএসসি গ্রুপ সি ও গ্রুপ-ডি নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হয়েছিল। সেই সব মামলার শুনানি শেষের পর আজই রায় ঘোষণা করেন আদালত। এরই পাশাপাশি সিবিআই এই নিয়োগে প্রক্রিয়ার দুর্নীতির তদন্ত চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট। প্রয়োজনে এ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত যে কাউকে হেফাজতে নিয়েই তদন্তকারীরা জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন বলেও জানিয়েছেন বিচারপতিরা।
এদিকে, আদালতের রায় প্রসঙ্গে বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘হাইকোর্টের এ রায়ের ফলে ২৫ হাজার পরিবারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। যাঁদের চাকরি গেল, তাঁদের মধ্যে অনেকেই এই সময়ের মধ্যে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাট বানিয়েছেন। এই পরিস্থিতি তৈরি করল তৃণমূলের সরকার। এই অরাজক ব্যবস্থা তৈরির দায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।’
গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল এসএসসি নিয়োগ ‘দুর্নীতি’ মামলা। এই মামলায় প্রথমে হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ডিভিশন বেঞ্চেও সেই নির্দেশ বহাল থাকে। এরপর মামলা যায় সুপ্রিম কোর্টে। সেখান থেকে মামলাগুলো হাইকোর্টে আবার ফেরত পাঠানো হয়। মে মাসের মধ্যে হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চকে শুনানি শেষ করে রায় ঘোষণা করতে বলেছিলেন শীর্ষ আদালত। সাড়ে তিন মাসের মধ্যে শুনানি শেষ হয়ে গিয়েছিল। আজ সোমবার রায় ঘোষণা করলেন আদালত। ২৮১ পৃষ্ঠার রায় আদালতে পড়ে শোনান বিচারপতি দেবাংশু বসাক।
কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার। তিনি ভারতের গণমাধ্যম আনন্দবাজারকে বলেছেন, উচ্চ আদালতের রায়ে তিনি খুশি নন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, পাঁচ হাজার জনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এজন্য ২৬ হাজার জনের কেন চাকরি বাতিল হবে?
সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেন, আদালতের রায় তিনি এখনও পড়ে দেখেননি। রায়ের প্রতিলিপি হাতে এলে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রায় ৩০০ পাতার রায়। প্রায় সাড়ে তিনশ মামলা। ভেতরে অনেক পয়েন্ট আছে। সুনির্দিষ্ট কোনও নির্দেশ আছে কি না দেখতে হবে। সবটা না পড়ে কোনাকিছু বলা কঠিন।