প্রাথমিকের বই ছাপা প্রায় শেষ, পিছিয়ে মাধ্যমিক। অষ্টম ও নবম শ্রেণির তিনটি করে মোট ছয়টি বইয়ের পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত হয়নি।
নতুন শিক্ষাবর্ষে বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য প্রাথমিক স্তরের বই ছাপার কাজ এগিয়ে চলছে। কিন্তু মাধ্যমিকের বই ছাপার কাজ বেশ পিছিয়ে আছে। এর মধ্যে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী অষ্টম ও নবম শ্রেণির ছয়টি বইয়ের পাণ্ডুলিপি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অথচ নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে মাত্র ২৫ দিন বাকি। তাই বাকি সময়ে সব বই ছাপার কাজ শেষ করে নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে সব পাঠ্যবই তুলে দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
করোনাকাল ছাড়া ২০১০ সাল থেকে শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎসব করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে বই তুলে দিচ্ছে সরকার। শিক্ষার্থীরা খালি হাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে নতুন বই হাতে নিয়ে খুশিমনে বাড়ি ফেরে। এটি এখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।
যেহেতু ৭ জানুয়ারি নির্বাচন, নির্বাচন-পূর্ববর্তী সময়টা আসলে কেমন থাকবে, সেটাও একটু বিবেচনায় নিয়ে এবং যেহেতু অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়, সে কারণে আমরা এবার বই উৎসবটা ঠিক ১ তারিখে করব নাকি নির্বাচনের পরে, হয়তো ১০-১১ তারিখ করব, এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করছি।শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি
অবশ্য, জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে আসন্ন শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিনেই উৎসব করে শিক্ষার্থীদের বই তুলে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে একধরনের অস্পষ্টতা আছে। এ বিষয়ে গত ২৬ নভেম্বর এইচএসসির ফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছিলেন, ‘যেহেতু ৭ জানুয়ারি নির্বাচন, নির্বাচন-পূর্ববর্তী সময়টা আসলে কেমন থাকবে, সেটাও একটু বিবেচনায় নিয়ে এবং যেহেতু অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়, সে কারণে আমরা এবার বই উৎসবটা ঠিক ১ তারিখে করব নাকি নির্বাচনের পরে, হয়তো ১০-১১ তারিখ করব, এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করছি।’
■ ২০১০ সাল থেকে শিক্ষাবর্ষের শুরুতে শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে নতুন বই দিচ্ছে সরকার।
■ ২০২৪ সালের জন্য প্রাথমিকে বই ৯ কোটি ৩৮ লাখের বেশি। মাধ্যমিক স্তরের বই ২১ কোটি ৩২ লাখের বেশি।
■ অষ্টম শ্রেণিতে বই ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৭১টি।
■ নবম শ্রেণিতে বইয়ের সংখ্যা ৫ কোটি ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৩।
এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ১ জানুয়ারি উৎসব করে বই দেওয়া হবে, এটি ধরে নিয়েই তাঁরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর ছয় বইয়ের পাণ্ডুলিপির কাজও একেবারে শেষ পর্যায়ে আছে। এসব বই ছাপার কাজ যাঁরা পেয়েছেন, তাঁরা বড় মুদ্রণকারী। তাঁদের সক্ষমতা বেশি। তাই তিনি আশা করছেন, এ মাসের মধ্যেই ছাপার কাজ শেষ হয়ে যাবে।
এর মধ্যে আবার অষ্টম শ্রেণির তিনটি এবং নবম শ্রেণির তিনটি অর্থাৎ এই দুই শ্রেণির মোট ছয়টি বইয়ের পাণ্ডুলিপি এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি এনসিটিবি। এগুলো হলো ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান অনুশীলন বই এবং বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ (দুই শ্রেণিতেই বইয়ের নাম এক)।
এনসিটিবি সূত্রমতে, এবার প্রাথমিকে বই ৯ কোটি ৩৮ লাখের বেশি এবং মাধ্যমিক স্তরের বই ২১ কোটি ৩২ লাখের বেশি। জাতীয় নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখে এবার পাঠ্যবই ছাপার প্রক্রিয়া আগে শুরু করেছিল এনসিটিবি। এই প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক স্তরে পাঠ্যবই ছাপার কাজ প্রায় শেষ করে উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিকের বই ছাপার কাজ শেষ হয়নি। এর মধ্যে অষ্টম ও নবম শ্রেণির ছাপার কাজ বেশি পিছিয়ে পড়েছে।
এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, এবার অষ্টম শ্রেণিতে মোট বইয়ের সংখ্যা ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৭১টি। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত তথ্য হলো, এই শ্রেণির ২১ শতাংশ বই ছাপিয়ে উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। নবম শ্রেণিতে মোট বইয়ের সংখ্যা ৫ কোটি ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৩টি। এর মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ বই ছাপিয়ে উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে।
নির্বাচন সামনে রেখে এবার আগেই বই ছাপার কাজ শেষ করার কথা বলেছিল এনসিটিবি। কিন্তু এখনো অষ্টম ও নবম শ্রেণির কয়েকটি বইয়ের পাণ্ডুলিপিই চূড়ান্ত করে দেয়নি সংস্থাটি। অথচ বই লেখার কাজটি আরও আগেই শেষ করা উচিত ছিল।বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান
এর মধ্যে আবার অষ্টম শ্রেণির তিনটি এবং নবম শ্রেণির তিনটি অর্থাৎ এই দুই শ্রেণির মোট ছয়টি বইয়ের পাণ্ডুলিপি এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি এনসিটিবি। এগুলো হলো ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান অনুশীলন বই এবং বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ (দুই শ্রেণিতেই বইয়ের নাম এক)। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী এই দুই শ্রেণিতে ১০টি বিষয়ে মোট বইয়ে ১১টি করে। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিষয়ে দুটি বই। আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন করে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চালু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রম। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে এই নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, নবম ও দশম শ্রেণির বই পৃথক। এত দিন নবম ও দশম শ্রেণির বই একই ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের বইয়ের পাণ্ডুলিপির চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ চলছে। তবে অন্য বইগুলোর পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত করতে আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যাবে।
অষ্টম শ্রেণিতে একেকটি বিষয়ে বইয়ের সংখ্যা সাড়ে ৪৮ লাখের বেশি এবং নবম শ্রেণিতে একেকটি বিষয়ে বই ৪৬ লাখের বেশি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, যদি ১ জানুয়ারি সারা দেশে উৎসব করে বই দিতে হয়, তাহলে হয়তো প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই দেওয়া যাবে না। দু-একটি বই দিতে কয়েক দিন দেরি হতে পারে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে এবার আগেই বই ছাপার কাজ শেষ করার কথা বলেছিল এনসিটিবি। কিন্তু এখনো অষ্টম ও নবম শ্রেণির কয়েকটি বইয়ের পাণ্ডুলিপিই চূড়ান্ত করে দেয়নি সংস্থাটি। অথচ বই লেখার কাজটি আরও আগেই শেষ করা উচিত ছিল। ফলে এবার সময়মতো সব বই দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা আছে। তা ছাড়া এসব বই ছাপিয়ে চলমান হরতাল-অবরোধের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে পাঠানোর কাজটিও সহজ নয়।