গত বছরের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২০ নিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, এই শিক্ষাক্রম প্রসঙ্গে বিভিন্ন মহল থেকে জাপান ও ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থার কথা বলা হচ্ছে। বছরের পর বছর শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে পরামর্শ-পর্যালোচনা ও মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে তাদের (জাপান ও ফিনল্যান্ড) শিক্ষাক্রম তৈরি হয়েছে, হঠাৎ করে আসেনি।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘উদ্বিগ্ন অভিভাবক, শিক্ষক ও নাগরিক সমাজ’-এর ব্যানারে আয়োজিত এক মানববন্ধনে অংশ নিয়ে আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন। গত বছরের নভেম্বরে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আন্দোলনকারী তিনজন অভিভাবককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল শাহবাগে এই মানববন্ধন হয়।
মানববন্ধনে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘যেকোনো বিষয়ে ভিন্নমতকে পর্যালোচনা করা সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এর জন্য তাঁদের গ্রেপ্তার করতে হবে কেন? এর মাধ্যমে সরকার বার্তা দিচ্ছে যে শিক্ষা নিয়ে অভিভাবক-শিক্ষক কেউ কোনো ভিন্নমত প্রকাশ করতে পারবেন না। তারা যা করবে, তার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা যাবে না। এই স্বৈরতন্ত্রী ও ফ্যাসিবাদী চিন্তা শিক্ষাকে গ্রাস করলে শিক্ষার চলমান বিপর্যয় আরও বাড়বে।’
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকার নতুন শিক্ষাক্রমের পক্ষে যুক্তি দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষাকে আনন্দময় করা, বইয়ের বোঝা কমানো ও মুখস্থবিদ্যা থেকে বের করার কথা বলছে। এসব কথা আমরা বহুদিন থেকে বলে আসছি। কিন্তু সরকার যেভাবে শিক্ষাক্রম করেছে, তা কি এসব থেকে আমাদের মুক্তি দিচ্ছে? বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে শিক্ষানীতি করা হয়েছিল। ওই নীতির কারণে গাইড-কোচিং সেন্টারের আধিপত্য বাড়ল, শিক্ষার ব্যয় বৃদ্ধি পেল, পরীক্ষা বাড়ল, অভিভাবকদের অস্থিরতা বাড়ল। শিক্ষানীতির বাইরে গিয়ে সরকার একের পর এক পাবলিক পরীক্ষা চালু করল।’
মামলা প্রত্যাহার করে গ্রেপ্তার অভিভাবকদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক নাসির উদ্দিন আহমদ। মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ, নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, অভিভাবক সাবিনা ইয়াসমিন, দিদারুল ভূঁইয়া প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মানববন্ধনে কিছু দাবি তুলে ধরেন উদ্বিগ্ন অভিভাবক, শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক রাখাল রাহা। এগুলো হলো ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিবিরোধী নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল; নতুন শিক্ষানীতি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত পুরোনো শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই বহাল রাখা, সে অনুযায়ী নম্বরভিত্তিক দুটি সাময়িক পরীক্ষা চালু রাখা ও ক্লাস টেস্টগুলোকে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হিসেবে ধরা; নবম শ্রেণি থেকেই শিক্ষার্থীদের আগ্রহ অনুযায়ী বিষয় নির্বাচনের সুযোগ বা বিজ্ঞান বিভাগ রাখা; ত্রিভুজ, বৃত্ত, চতুর্ভুজ ইত্যাদি নির্দেশক বাতিল করে নম্বর ও গ্রেডভিত্তিক মূল্যায়নপদ্ধতি রাখা; শিক্ষার্থীদের দলগত ও প্রকল্পের কাজে ডিভাইসমুখী হতে নিরুৎসাহিত করা ও তাত্ত্বিক বিষয়ে অধ্যয়নমুখী করা; প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা চালু করা, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা চালু রাখা এবং সব সময় সব শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের আগে অবশ্যই তা মন্ত্রিপরিষদ ও সংসদে উত্থাপন করা।