ইসরায়েলের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বেলজিয়ামের গেন্ট ইউনিভার্সিটি। জেরুজালেমের মানবাধিকার নীতির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততার কারণে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেলজিয়ামের উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে মে মাস থেকে গেন্ট ইউনিভার্সিটিতে জোরাল বিক্ষোভ চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কিছু অংশ বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করে আসছেন।
সেখান থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে।
ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়টি ইউগেন্ট নামে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি তদন্ত কমিটি ইসরায়েলি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ইসরায়েলি সরকার, সামরিক বা নিরাপত্তা পরিষেবার মধ্যে সংযোগ খুঁজে পেয়েছে। এ ব্যাপারে এক বিবৃতিতে উদ্বেগও প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) এক রায়ের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোয় গাজার মানবিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি এটি আমলে নিয়েছে।
ইউগেন্ট দুই সপ্তাহ আগে তিনটি ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। ইসরায়েলি ১৮টি একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির অংশীদারত্ব রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ছয়টি নন-একাডেমিক ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গবেষণা প্রকল্প চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে। কেননা ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো যোগসূত্র খুঁজে পায়নি তারা।
এর আগে গত সপ্তাহে বেলজিয়ামের আরও দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের সহযোগিতার নীতি পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছিল। এর মধ্যে অ্যান্টওয়ার্প বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছিল, ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চলমান গবেষণা প্রকল্পগুলো চালিয়ে যাবে। তবে নতুন প্রকল্পগুলো স্থগিত করবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সিবিএসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় ১৩ শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি সনদ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। ডিগ্রি যোগ্যতা-সম্পর্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিধান উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ক্যাম্পাসে হওয়া আন্দোলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি লঙ্ঘন করেছেন। তাই আমরা এ মুহূর্তে তাঁদের ডিগ্রি প্রদান করতে পারি না।’ হার্ভার্ডের এ সিদ্ধান্তকে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদও জানিয়েছেন ডিগ্রি পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী। এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়া সুযোগ মেলে ছাত্রী শ্রুতি কুমারের। তিনি তাঁর বক্তৃতার একপর্যায়ে ওই ১৩ শিক্ষার্থীর কথা তুলে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বাক্স্বাধীনতা এবং আইন অধিকারের প্রতি অসহিষ্ণুতা দেখে আমি গভীরভাবে হতাশ। ছাত্রছাত্রীরা এটা নিয়ে কথা বলছেন, শিক্ষকেরা কথা বলছেন। হার্ভার্ড, তুমি কি আমাদের কথা শুনছো?’ অনুষ্ঠান যখন চলছিল, কিছু গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী অনুষ্ঠান বর্জন করে ১৩ শিক্ষার্থীকে সনদ না দেওয়ার প্রতিবাদে রাস্তায় মিছিল করেছেন।
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনিদের হত্যা বন্ধের দাবিতে গত ১৭ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তালিকায় যুক্ত হয় ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, ভারত, লেবানন, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, মেক্সিকোসহ অনেক দেশ। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া, এমোরি ইউনিভার্সিটি, ব্রাউন ইউনিভার্সিটি, ইমারসন কলেজ, ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি, জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলস, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, অস্টিনের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস, ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান, ইউনিভার্সিটি অব নিউ মেক্সিকো, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে, ইয়েল, হার্ভার্ড, প্রিন্সটন ও মিনেসোটা ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভ হয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পেটানো হয়েছে।