শিক্ষার্থীসংখ্যার বিচারে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় হলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির ২ হাজার ২৮৩টি অধিভুক্ত কলেজে অধ্যয়ন করে প্রায় ৩২ লাখ শিক্ষার্থী। এখানে স্নাতক পাস, স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ডিগ্রি দেওয়া হয়। কিছু পেশাগত কোর্সেও ডিগ্রি দেয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বড় সাফল্য হলো অনলাইন ভিত্তিক কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত কলেজগুলোকে সংযুক্ত করতে পেরেছে এবং ভর্তি, ফরম পূরণ থেকে শুরু করে পরীক্ষক নিয়োগ পর্যন্ত অনলইানে সম্পন্ন হয়। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় সিইডিপির আওতায় বেশ কিছুসংখ্যক শিক্ষকের দক্ষতা বৃদ্ধিতে দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণ কার্যকর ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে উচ্চ শিক্ষার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর বিশেষ করে নারীদের সামাজিক পরিচয় সংকট দূর করেছে, সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, গ্র্যাজুয়েটদের বড় অংশেরই দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। এক-তৃতীয়াংশ চাকরিজীবী গ্র্যাজুয়েট মনে করেন, কলেজে শেখা জ্ঞান ও দক্ষতা তাঁরা কাজে লাগাতে পারছেন। তবে অধিকাংশ কলেজ গ্র্যাজুয়েটই কলেজে শেখা বিদ্যা বা জ্ঞান কাজে লাগাতে পারছেন না।
সাম্প্রতিক বিআইডিএসের এক গবেষণায় দেখা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্নাতক সম্পন্ন হয় ব্যবসায় শিক্ষা, সমাজবিজ্ঞান ও মানবিক বিষয়ের ওপর। যেখানে বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়ে পাস করা শিক্ষার্থীদের হার অনেক কম (স্নাতকে ৩ দশমিক ৮২ শতাংশ, স্নাতকোত্তরে ৩ দশমিক ১০ শতাংশ)। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি (৪৪. ২৬ শতাংশ) ব্যবসায় শিক্ষা থেকে স্নাতক করেন। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষাথীদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি (২৮.২৪ শতাংশ)। আর এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ৪৩.১৩ শতাংশ সরকারি চাকরি করতে চাইলেও যাঁরা চাকরিতে আছেন, তাঁরা বেশির ভাগ স্বল্প আয়ের চাকরি করেন। নারী ও গ্রামের শিক্ষার্থীদের মধ্য বেকারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গবেষণার তথ্য বলছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ৪২.২৯ শতাংশ শিক্ষার্থী কম বেতনে চাকরি করছেন। এ ছাড়া ১৬ শতাংশ আত্মকর্মসংস্থানে আছেন এবং ১৩ শতাংশের বেশি খণ্ডকালীন কাজ করছেন। পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৩৬ শতাংশ স্কুল, কলেজ, কোচিং সেন্টারগুলোতে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত। এরপর পেশা হিসেবে আছে অফিসার অথবা অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসারের পদ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা অনেকে তৈরি পোশাক খাতের নিচু পদেও যাচ্ছেন। কৃষি খাতেও যুক্ত আছেন অনেকে।
বিআইডিএসের গবেষণায় দেখা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলো থেকে পাস করার তিন বছর পরও ২৮.৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বেকার থাকছেন।
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত ১:১৯। পক্ষান্তরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত ১:২৯ অর্থাৎ প্রতি ২৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক রয়েছে। অধিভুক্ত বেশির ভাগ কলেজে নেই পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষক, অবকাঠামো, গবেষণাগার ও গ্রন্থাগার। এসব কলেজের সমস্যা হিসেবে গবেষণায় বলা হয়েছে, কলেজগুলো মানসম্পন্ন নয়, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুব কম, শিক্ষকদের ইনসেনটিভ ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব, চাকরির বাজারমুখী শিক্ষা কম। এ ছাড়া শিক্ষাক্রমে সমসাময়িক জ্ঞান ও দক্ষতার অভাব, অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি, ইংরেজি ভাষার দক্ষতার ঘাটতি, এসব কারণে শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে তাঁরা চাকরির প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন। এ ছাড়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিম্নমধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের সদস্য (প্রথম আলো, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩)। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থীই দরিদ্র পরিবারের সদস্য। এসব শিক্ষার্থীদের পরিবারের মাসিক আয় ১০ হাজার টাকার কম। আর ১০ থেকে ৪০ হাজার টাকা মাসিক আয় এমন পরিবারের শিক্ষার্থী রয়েছে ৪৯ শতাংশ। সঙ্গত কারণে এদের অধিকাংশ পড়ালেখার পাশাপাশি নানা স্বল্প আয়ের পেশারর সঙ্গে জড়িত। শিক্ষাজীবন শেষ করার পর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ চাকরির বাজারে প্রবেশের সুযোগ পান না। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে প্রতিবছর কমপক্ষে ২০ লাখ জনগোষ্ঠী চাকরির বাজারে প্রবেশ করে। তাঁদের মধ্যে ১৩-১৪ লাখের দেশের অভ্যন্তরে কর্মসংস্থান হয়। বাকিরা দেশের বাইরে পাড়ি জমান। ফলে দুই দশক ধরে দেশে বেকারসংখ্যা ২৪-২৮ লাখের মধ্যে স্থির আছে। তবে যারা দেশের অভ্যন্তরে তীব্র প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে চাকরি পাচ্ছেন তাঁদের বেশিরভাগই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা গ্র্যাজুয়েট।
দেশে সার্বিকভাবে মোট বেকারের মধ্যে ১২ শতাংশই উচ্চশিক্ষিত। বেকারদের মধ্যে নারী বেশি এবং এ সংখ্যা গ্রামের দিকে বেশি। কলেজ গ্র্যাজুয়েট ট্রেসার স্টাডির তথ্য উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংক বলছে, কলেজ গ্র্যাজুয়েট পুরুষদের ৬৬ শতাংশই বেকার থাকছেন। তাঁদের মধ্যে নারী বেশি (৭৭ শতাংশ) এবং এ সংখ্যা গ্রামের দিকে বেশি। মেট্রোপলিটন এলাকার কলেজ গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৫৫ শতাংশ হলেও গ্রামাঞ্চলে তা ৭২ শতাংশ।
বিআইডিএসের গবেষণায় দেখা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলো থেকে পাস করার তিন বছর পরও ২৮.৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বেকার থাকছেন। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পড়ালেখা শেষ করে মাত্র ১ শতাংশ কলেজ গ্র্যাজুয়েট স্বকর্মসংস্থানে যুক্ত হচ্ছেন। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর তিন বছর ধরে চাকরির সন্ধান করতে হচ্ছে ৪৬ শতাংশ কলেজ গ্র্যাজুয়েটকে। তাঁদের মধ্যে বেকারত্বের হারও সবচেয়ে বেশি (৭১ শতাংশ)। সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা থেকে যাঁরা এসএসসি পাস করে এসে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন, তাঁদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি। তবে কারিগরি ও দাখিল পাস করে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেকারত্বের হার কম।
ফলে এই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ভুক্ত কলেজগুলোর লেখাপড়ার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সেশনজট কমাতে গিয়ে ক্লাসের চেয়ে পরীক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রায় সারা বছরই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো না কোনো পরীক্ষা থাকায় কলেজের শ্রেণি কার্যক্রম ব্যহত হয়। পরীক্ষা নেয়া হয় বেলা (১টা থেকে ১.৩০টার সময়), যা অন্য কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সচারাচর দেখা যায় না। এ সময়ে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার না খেয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। ফলে তাঁরা পরীক্ষায় অধিক মনোযোগী হতে পারেন না। এ ছাড়া বাস্তবতা ও চাহিদার মধ্যে সমন্বয় না রেখেই দীর্ঘদিন ধরে ঢালাওভাবে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কলেজে স্নাতক সম্মান কোর্স চালু করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ কলেজেই উচ্চশিক্ষা পরিচালনা করার মতো পর্যাপ্ত ও দক্ষ শিক্ষকের অভাব, প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষ সংকট, অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি, অবকাঠামোগত ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নেই। এ ছাড়া শিক্ষার্থী ও কলেজের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সব কলেজকে ঠিকমতো তদারকি করা সম্ভব হয় না বলে নানা মহলে আলোচনা আছে। এসব নানাবিধ কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা কাঙিক্ষত মাত্রায় দক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীর তুলনায় চাকরির প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, গ্র্যাজুয়েটদের বড় অংশেরই দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। এক-তৃতীয়াংশ চাকরিজীবী গ্র্যাজুয়েট মনে করেন, কলেজে শেখা জ্ঞান ও দক্ষতা তাঁরা কাজে লাগাতে পারছেন। তবে অধিকাংশ কলেজ গ্র্যাজুয়েটই তাঁদের কলেজে শেখা বিদ্যা বা জ্ঞান কাজে লাগাতে পারছেন না।
এ ছাড়া দেশের অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাথাপিছু ব্যয় অনেক কম। ইউজিসির ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পিছু ব্যয় মাত্র ৭০২ টাকা। আসলে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিনিয়োগ একটি বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন শিক্ষার্থীদের পেছনে বিনিয়োগের দৈন্যদশার চিত্রই প্রমাণ করে উন্নত মানের শিক্ষার সুযোগ ও পরিবেশ এখানে অনুপস্থিত। ইউজিসি বলছে, সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ে বিজ্ঞান, চিকিৎসা, প্রকৌশল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রতি ব্যয় সব সময়ই বেশি। শিক্ষাবিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পিছু ব্যয় বেশি, সেগুলোর পড়াশোনা ও গবেষণার মান তুলনামূলকভাবে উন্নত। আর যারা কম ব্যয় করে, তাদের শিক্ষার মানও তুলনামূলক খারাপ। তারপরও দেশের গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় বড় ভরসার জায়গা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
বিআইডিএসের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪২ শতাংশ চাকরি করছেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেকার অবস্থায় আছেন ৪২ থেকে ৪৮ শতাংশ। পরিসংখ্যানুসারে বিএ পাস কোর্স, পলিটিক্যাল সায়েন্স, লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট, বাংলা ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেকারের হার বেশি। এক হিসাব মতে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন ২৩ শতাংশ। আর গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা থেকে পাস করা অন্তত ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী রয়েছেন। বেকার থাকা শিক্ষার্থীদের ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ ইসলামের ইতিহাস ও বাংলায় স্নাতক করেছেন। জানা যায় ইংরেজিতে স্নাতক করা শিক্ষার্থীরা কম বেকার রয়েছেন। অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান ও হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেকার ১ শতাংশের মতো।
কারণ হিসেবে জানা যায়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বেশির ভাগ হতাশায় ভোগেন। সাধারণত যে সকল শিক্ষার্থী কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায় না এবং পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না, তারাই অনেকটা বাধ্য হয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত স্থানীয় কলেজে ভর্তি হয়। ভর্তির পর বেশির ভাগ শিক্ষার্থী নিজ বাড়ি থেকে অনিয়মিতভাবে ক্লাসে অংশগ্রহণ করেন। অনেকে অবশ্য কলেজ হোস্টেলে, আবার অনেকে কলেজের আশেপাশের ব্যাঙের ছাতার মতো গজানো অস্বাস্থ্যকর ছাত্রাবাসে অবস্থান করেন। ছাত্রাবাসে অবস্থানরত সিনিয়র শিক্ষার্থীদের লক্ষ্যহীন অলস সময় কাটানো দেখে তাঁরাও অলস হয়ে পড়েন, তাঁদের হতাশা দেখে নতুন শিক্ষার্থীরা শুরু থেকেই হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। জীবনে কোনো কিছু করা বা হবার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো কলেজ পড়ুয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের মুল বই না পড়া, অনেকে একটি পাঠরত বিষয়ের একটি টেক্সট বইয়ের নাম পর্যন্ত জানেন না। তাঁরা বিভাগের সিনিয়র ভাইদের পরামর্শে বাজারের ভুলেভরা সস্তা নোট পড়ে পরীক্ষায় কৃতকার্য হন, অনেকে অকৃতকার্যও হন। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় বিগত বছরের প্রশ্নগুলো অনুসরণ করে ধারাবাহিকভাবে প্রশ্ন প্রণয়ন করা হয়। ফলে তাঁরা গুটি কয়েক প্রশ্ন পড়েই কৃতকার্য হতে পারেন। অনেক কলেজে অনার্স বা মাস্টার্স পড়ানোর মতো দক্ষ শিক্ষক, গবেষণাগার ও গ্রন্থাগারের অভাব দেখা যায়। ফলে লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে শিক্ষার্থীরা কাঙিক্ষত দক্ষতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। তাঁরা দেশে বিদ্যমান চাকরির বাজারে নিজের অবস্থান তৈরি করতে পারছেন না। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে বেকারত্বেও বোঝা বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
*লেখক: শিক্ষক, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ, যশোর