ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল এবং কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে অছাত্র ও বহিরাগত ব্যক্তিদের প্রবেশ ঠেকানোর কথা ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেছেন, আগামী বছর থেকে আবাসিক হলে নির্ধারিত কার্ড পাঞ্চ করে ঢুকতে হবে। এ ছাড়া আগামী এক মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারেও কার্ড পাঞ্চ করে ঢুকতে হবে।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে এক আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে উপাচার্য এসব কথা বলেন। সেদিনের আয়োজনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিদায়ী নবম, দশম ও একাদশ ব্যাচকে অগ্রায়ণ (বিদায়) এবং নবীন পঞ্চদশ, ষোড়শ ও সপ্তদশ ব্যাচকে বরণ করে নেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে উপাচার্য বলেন, ‘আমি দুবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে গিয়েছি দেখার জন্য। দুবারই দেখেছি, সবাই বিসিএস পড়ার জন্য (সেখানে) যায়। এর অর্থই দাঁড়ায়, যে বিষয়ে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করে, সেই বিষয়ে পড়ে তারা আনন্দ খুঁজে পায় না।...আমাদের ভাবতে হবে, আমরা যে পরিমাণ শিক্ষার্থী ভর্তি করাই, ভবিষ্যতে এ পরিমাণ শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর প্রয়োজন আছে কি না।’
উপাচার্য বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রায় ১৫ রকমের অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে, এমন কার্ড দেওয়া হয়েছে। আমাদের শিক্ষকদেরও দেওয়া হচ্ছে। আগামী বছর থেকে আবাসিক হলে সেই নির্ধারিত কার্ড পাঞ্চ করে ঢুকতে হবে। যদি কেউ মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্র থাকে, কেউ যদি বহিরাগত থাকে, তারা হলে ঢুকতে পারবে না। আগামী এক মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারেও কার্ড পাঞ্চ করে ঢুকতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ যেসব ছাত্র গ্রন্থাগারে গিয়ে বিসিএস পড়ে, তাদের আগামী মাস থেকে সেখানে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। কথাগুলো বলার কারণ হলো, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা রূপান্তরের কথা ভাবছি। আমাদের শিক্ষার্থীদেরও ভাবতে হবে তাদের রূপান্তরের কথা।’
উপাচার্য মাকসুদ কামাল বলেন, ‘স্নাতকোত্তরে আমরা যে পরিমাণ শিক্ষার্থী ভর্তি করাই, যারা স্নাতক শেষ করে স্নাতকোত্তরে উঠে যায়, তাদের আমরা স্নাতকোত্তরে ভর্তি করাব কি না, ভাবতে হবে। আমরা ভর্তি পরীক্ষাটা নিই আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে। আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে যারা স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়, আইনগতভাবে সেটা বৈধ কি না, তা–ও ভাবার অবকাশ রয়েছে। স্নাতকোত্তরে যারা যাবে, তারা সংখ্যায় বেশি হবে না। যারা গবেষণা করবে, যারা তাদের ক্যারিয়ার ডেভেলপ করবে, তারাই স্নাতকোত্তরে পড়াশোনা করবে। পৃথিবীর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এভাবে স্নাতকোত্তরে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয় না।’
চলতি বছর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত বিশ্বের মতো ফান্ডেড পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করবে বলেও জানান উপাচার্য। তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা দেব। আমাদের এখানে যাঁরা পিএইচডি করবেন—একজন বিদেশি সুপারভাইজার থাকবেন আর এখানকার (দেশীয়) একজন সুপারভাইজার থাকবেন। পিএইচডি চলাকালে বিদেশি সুপারভাইজারের চার বছরের মধ্যে এখানে দুবার আসার সুযোগ থাকবে। যিনি পিএইচডি করবেন, তাঁর বিদেশে দুবার প্রেজেন্টেশন দেওয়ার মতো সুযোগ থাকবে বিভিন্ন সেমিনারে অংশগ্রহণ করার জন্য, যাতে করে আমাদের গবেষণার মান উন্নত দেশের গবেষণার মতো হয়।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান আবুল মনসুর আহাম্মদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন রাশেদা ইরশাদ নাসির এবং সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক ছাত্র, অভিনেতা ও সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদ। আরও বক্তব্য দেন সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী উপদেষ্টা মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে বিভাগের সাংস্কৃতিক সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এ আয়োজনে টিএসসিতে সাংবাদিকতার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা তৈরি হয়। আয়োজনটি ঘিরে টিএসসিতে ছিল সাজ সাজ রব।