সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে কয়েক দিন ধরে নানা কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার (৭ জুলাই) শিক্ষার্থীরা নতুন কর্মসূচি পালন করবেন। এ কর্মসূচির নাম ‘বাংলা ব্লকেড’।
আজ ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে সর্বাত্মক ব্লকেড (অবরোধ) পালন করা হবে। এ কর্মসূচির ফলে সব ক্যাম্পাসের সামনের সড়ক অবরোধ করবেন শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচি বেলা তিনটা থেকে পালিত হবে। সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় এবং মহানগর ও জেলা শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শহরে এ কর্মসূচি পালন করবেন। এর পাশাপাশি সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘট পালন করা হবে।
আজ ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি অনুযায়ী রাজধানী ঢাকায় শাহবাগ মোড়, সায়েন্স ল্যাব, চানখাঁরপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিলসহ প্রতিটি পয়েন্টে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নেবেন।
ঢাকার বাইরের জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করবেন। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে গতকাল শনিবার পূর্বনির্ধারিত বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে রাজধানীর শাহবাগে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে শাহবাগ মোড় প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা বলছেন, কোটা বাতিলের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা শ্রেণিকক্ষে ফিরবেন না।
এদিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম উৎসব শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা শুরু হবে আজ বেলা তিনটা থেকে। রাজধানীর স্বামীবাগ ইসকন মন্দির থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে শেষ হবে এ রথযাত্রা।
গত ৫ জুন কোটার পরিপত্র বাতিলের রায়ের পর থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন। এর মধ্যে ১ জুলাই থেকে টানা আন্দোলন চলছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, ২০১৮ সালে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহাল করতে হবে।
পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। এর মধ্যে টাঙ্গাইল, রাজশাহী, রংপুর ও কুষ্টিয়ায় মহাসড়ক এবং ঢাকার তাঁতীবাজার মোড় ও খুলনায় সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। গতকাল বেলা সোয়া তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল বের করেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বুয়েট ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে পলাশী ও আজিমপুর এলাকায় যায়। সেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে শাহবাগ মোড়ে পৌঁছায়। এরপর বিকেল পৌনে পাঁচটা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। অবরোধের কারণে শাহবাগ মোড় দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ।
অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সারা দেশে আগামীকাল (আজ) বেলা তিনটায় বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করা হবে। ঢাকায় শাহবাগ মোড়, সায়েন্স ল্যাব, চানখাঁরপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিলসহ প্রতিটি পয়েন্টে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে আসবেন এবং এ কর্মসূচি সফল করবেন। ঢাকার বাইরের জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করবেন। কোটাবিরোধী আন্দোলনের এই সমন্বয়ক আরও বলেন, শিক্ষার্থী ও আদালতকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে সরকার দায়িত্বহীন আচরণ করছে। এখানে নির্বাহী বিভাগ তার দায় এড়াতে পারে না। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কোটা থাকবে না। তাহলে কোটা কেন আবার ফিরে এল? কেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রহসন করা হচ্ছে? তিনি বলেন, ‘দাবি আদায়ে প্রয়োজনে আমরা হরতালের মতো কর্মসূচি পালন করব। এটা শুধু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নয়। শিক্ষক-অভিভাবকদেরও আন্দোলনে নেমে আসতে হবে।’
গত ৫ জুন কোটার পরিপত্র বাতিলের রায়ের পর থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন। এর মধ্যে ১ জুলাই থেকে টানা আন্দোলন চলছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, ২০১৮ সালে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহাল করতে হবে।
এর বাইরে কোটাব্যবস্থা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইলে আগের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করতে হবে বলে দাবি করে আসছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা বলছেন, এই কমিশনের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে। অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য যৌক্তিক ও ন্যূনতম কোটা রাখা যেতে পারে। তবে কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে নিয়োগ দিয়ে শূন্য পদগুলো পূরণ করতে হবে। চাকরিতে একই কোটা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না। দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা আজ রোববার থেকে শুরু হচ্ছে। আগামী ১৫ জুলাই উল্টো রথযাত্রার মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ উৎসব। রথযাত্রা উপলক্ষে বিভিন্ন মন্দিরে নানা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) রথযাত্রা উপলক্ষে আট দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
প্রধান রথযাত্রা রোববার বেলা তিনটায় রাজধানীর স্বামীবাগ ইসকন মন্দির থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে শেষ হবে। উল্টো রথযাত্রা আগামী ১৫ জুলাই বেলা তিনটায় ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্বামীবাগ ইসকন মন্দিরে এসে শেষ হবে।
স্বামীবাগ রোডের স্বামীবাগ আশ্রম (ইসকন, ঢাকা) থেকে জয়কালী মন্দির মোড়-ইত্তেফাক মোড়-শাপলা চত্বর-দৈনিক বাংলা মোড়-রাজউক ক্রসিং-গুলিস্তান গোলাপশাহ মাজার-পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স-সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল-হাইকোর্ট মাজার-দোয়েল চত্বর-কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার-জগন্নাথ হল-পলাশী-ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে শেষ হবে রথযাত্রা। রথযাত্রা উপলক্ষে এ সময়ে উপরিউক্ত রোডে চলাচলকৃত যানবাহনগুলোকে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করার জন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।