২২ কলেজে ১০ তলা ভবন

লিফট স্থাপন হয় না, তাই ভবনগুলো কাজে লাগে না

প্রকল্পের শুরু ২০১০ সালে। দফায় দফায় মেয়াদ বাড়লেও কাজ শেষ হয়নি।

ঢাকা কলেজে ১০ তলা ভবন হয়েছে দেড় বছর আগে, কিন্তু এখনো লিফট লাগানো হয়নি। তাই ওপরের তলাগুলো ঠিকমতো ব্যবহার করা যাচ্ছে না
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা কলেজে ১০ তলাবিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে দেড় বছর আগে। কিন্তু লিফট স্থাপন না করায় এখনো ভবনটির ওপরের তলাগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, লিফট লাগানোর জায়গায়টি অস্থায়ী দেয়াল করে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। একই চিত্র দেখা গিয়েছিল আট মাস আগেও।

তখনো ভবনটির ষষ্ঠ থেকে দশম তলা পর্যন্ত বেশির ভাগ শ্রেণিকক্ষই অব্যবহৃত পড়ে ছিল। কলেজটির একজন শিক্ষক বললেন, আট মাস আগের সেই চিত্র এখনো বদলায়নি। লিফট লাগানো হবে হবে করেই মাসের পর মাস চলে যাচ্ছে।

শুধু ঢাকা কলেজেই নয়, দেশের ২২ কলেজে নির্মিত বহুতল ভবনগুলোতে লিফট স্থাপন না করায় সেগুলো পুরোপুরি কাজে আসছে না। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ‘শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে জেলা সদরে অবস্থিত সরকারি পোস্টগ্র্যাজুয়েট কলেজসমূহের উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় এই ভবনগুলো করা হয়।

মাউশির শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এই প্রকল্প নিয়ে তাঁরা বেকায়দায় আছেন। লিফট স্থাপন করতে দেরি হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে।

প্রকল্পটি মাউশির অধীনে হলেও অবকাঠামোগত কাজটি করে দিচ্ছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)। মাউশি ও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার অভিযোগ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের গাফিলতির কারণে প্রকল্পের কাজ ঠিকমতো শেষ করা যাচ্ছে না।

অবশ্য প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক মুহম্মদ নাসির উদ্দিন ৪ জুলাই প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে লিফট কেনা হয়েছে এবং কিছু লিফট চলে এসেছে। কয়েক মাসের মধ্যেই এই সমস্যা কেটে যাবে। তাঁর দাবি, সার্বিকভাবে প্রকল্পের অগ্রগতি ভালো।

জেলা সদরের ৭০টি কলেজে অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ২০১০ সালে এই প্রকল্প শুরু হয়েছিল। প্রথমে এর ব্যয় ছিল এক হাজার কোটি টাকার মতো। পরে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ গত বছর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এক বছর বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এই সময়ের মধ্যেও কাজটি শেষ করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। এখন প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এই প্রকল্পের অধীনে মোট ২০৮টি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২২টি কলেজে ২৬টি ভবন ১০ তলাবিশিষ্ট। সমস্যা হচ্ছে, এই ১০ তলাবিশিষ্ট ভবনগুলো নিয়েই। এসব ভবনের দু-একটি ছাড়া কোনোটিতেই লিফট লাগানো হয়নি। আবার অন্তত দুটি কলেজে ১০ তলা ভবনের কয়েক তলার নির্মাণকাজ শেষ হয়নি।

সরেজমিনে তিন কলেজ

৪ জুলাই ঢাকা কলেজ গিয়ে দেখা যায়, ১০ তলা ভবনটিতে লিফট স্থাপন হয়নি। আগের মতো ওপরের তলাগুলোতে বিভিন্ন বিভাগের সাইনবোর্ড টানানো আছে।

এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কুদ্দুস শিকদার বলেন, ১০ তলা ভবনের ওপরের তলাগুলোতে তিনটি বিভাগ স্থানান্তরের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। ভবনে লিফট না লাগানো ও আরও কিছু কাজ বাকি থাকায় সেটি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শ্রেণিকক্ষ–সংকট নিয়েই চলতে হচ্ছে।

ঢাকা কলেজ সূত্রে জানা যায়, এই ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে গত বছরের জানুয়ারিতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমে বলা হয়েছিল এপ্রিলের মধ্যেই লিফট লাগানো শেষ হবে। কিন্তু এখন কবে হবে, তা অনিশ্চিত।

মিরপুরে সরকারি বাঙলা কলেজে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে দুটি। ৪ জুলাই এই কলেজে গিয়ে দেখা যায়, এখনো লিফট স্থাপন হয়নি। তবে লিফট লাগানোর জায়গায় কিছু সরঞ্জাম পড়ে আছে। নামফলকে থেকে দেখা যায়, গত ১ এপ্রিল ভবনের উদ্বোধন করা হয়েছে।

একই দিনে রাজধানীর তিতুমীর কলেজে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দুটি ১০ তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবন। কিন্তু সেগুলোতে লিফট স্থাপন করা হয়নি। এই কলেজে আরও দুটি ১০ তলা ভবনেও (শিক্ষার্থীদের আবাসিক হোস্টেল) লিফট না থাকায় চালু করা হয়নি।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী কলেজের ১০ তলা ভবনের নির্মাণসংক্রান্ত কিছু কাজ করার পর ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখেছিলেন। ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের ১০ তলা ভবনেরও কিছু কাজের পর তা বন্ধ ছিল।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল খালেকের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখন তিনতলার ছাদের নির্মাণকাজ প্রক্রিয়াধীন। কিন্তু এরপর কী হবে, সেটি আর তাঁরা বলতে পারেন না।