গুচ্ছভুক্ত ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (জিএসটি গুচ্ছভুক্ত) ভর্তির পরীক্ষায় কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয় বেশ দেরিতে। আবার ভর্তির প্রক্রিয়াটিও শেষ করা হয়েছে দেরিতে। ফলে নির্ধারিত সময়ে ক্লাস শুরু হয়নি। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ পরিবর্তনের (মাইগ্রেশন) সুযোগ রাখা হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীরা যেমন সমস্যায় পড়েন, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আসন পূরণ নিয়ে সমস্যায় পড়ে।
এ অবস্থায় এই ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আসন্ন (২০২২-২০২৩) শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা দ্রুত আয়োজন করাসহ আরও কিছু পরামর্শ দিয়েছে উচ্চশিক্ষা দেখভালের দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
আজ সোমবার ইউজিসির উদ্যোগে আয়োজিত এক পর্যালোচনা সভায় বিগত ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছপদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয় এবং আসন্ন ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে আজকের সভার সভাপতি ও ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, কিছু সংকট ছিল, সেগুলো সমাধানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ভর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ অবশ্যই রাখতে হবে, তবে তা অফুরন্ত সময় দিয়ে নয়। এ ছাড়া ক্লাসের সম্ভাব্য সময় আগেই বলে দিতে হবে। আর গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়কে মোটামুটি কাছাকাছি সময়ে ভর্তি পরীক্ষা নিতে হবে। ইউজিসি পরামর্শ দিয়েছে, কিন্তু কাজগুলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই করতে হবে।
বর্তমানে সারা দেশে ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১১৪টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ৮৮০টি কলেজে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মাদ্রাসা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাতটি বড় সরকারি কলেজে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ডিগ্রি পাস কোর্স রয়েছে।
একসময় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদাভাবে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা নিত। ফলে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের সঙ্গে ছিল আর্থিক ক্ষতিও। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে আলোচনা, চেষ্টা ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের নির্দেশনার পর ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে প্রথমে গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে কৃষি ও কৃষি শিক্ষাপ্রধান সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়। এ ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা পরীক্ষা দিতে হয় না। একটি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী তাঁর যোগ্যতা ও পছন্দ অনুযায়ী গুচ্ছে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও (রুয়েট) আলাদা একটি গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে। এ দুই গুচ্ছের পরীক্ষা নিয়ে বড় কোনো সমস্যার কথা শোনা যায়নি।
তবে সবচেয়ে বড় যে গুচ্ছ, সেই ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে সংকটগুলো রয়ে গেছে। এ ব্যবস্থায় আগের চেয়ে ভোগান্তি কমলেও এখনো শিক্ষার্থীদের কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। মূলত ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও দীর্ঘদিন সময় নিয়ে আসন পূরণ করতে হয়।
এ সমস্যাগুলোই আজকের সভায় আলোচনা হয়েছে। ইউজিসি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আজকের সভা থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন ও ভর্তির কাজ শেষ করা এবং শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর তারিখ নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আহ্বান জানানো হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার প্রসপেক্টাসে ভর্তি পরীক্ষাসংক্রান্ত সব শর্ত ও তথ্য উল্লেখ করা এবং ভর্তিপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত শর্তগুলো অপরিবর্তিত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অনলাইনে অনুষ্ঠিত এ সভায় অংশ নেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক মো. আবু তাহের, জিএসটি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমন্বিত ভর্তি কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. এমদাদুল হক, কৃষি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, চুয়েট, কুয়েট ও রুয়েটের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভাপতি এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন মো. শাহজাহান এবং ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান প্রমুখ।