ভাষাজ্ঞানের জায়গাটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই পোক্ত হওয়া উচিত: অধ্যাপক পবিত্র সরকার

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম পুনর্মূল্যায়নসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কর্মশালায় বক্তব্য দিচ্ছেন ভারতের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পবিত্র সরকার। আজ বুধবার ঢাকার জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে
ছবি: মোশতাক আহমেদ

ভারতের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পবিত্র সরকার বলেছেন, ভাষাজ্ঞানের জায়গাটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই পোক্ত হওয়া উচিত। একটি, দুটি, তিনটি—যে কয়টা ভাষাই হোক, সেটি ছেলে–মেয়েদের একেবারেই পোক্ত করে দেওয়া দরকার। আজ বুধবার ঢাকার জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম পুনর্মূল্যায়নসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কর্মশালা’–তে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন পবিত্র সরকার। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ কর্মশালার আয়োজন করেছে।

কর্মশালায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। কর্মশালায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সময় উপযোগী করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রম বা পাঠ্যক্রম পরিমার্জন করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যেই এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে।

‘আমাদের দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমাদের যাঁরা বিদেশে অসম্ভব সম্মান লাভ করেছেন—বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, তাঁরা সব গবেষণা করেছেন বিদেশি ভাষায়। কিন্তু বাংলা ভাষায় লেখেননি। এটি একটি সমস্যা।’
অধ্যাপক পবিত্র সরকার

কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে ভারত থেকে আসা অধ্যাপক পবিত্র সরকার ভাষাশিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, শিক্ষা মূলত শেখা হয় ভাষা দিয়ে। তাই ছেলে–মেয়েদের ভাষা, সেটি একটি, দুটি, তিনটি—যেটাই হোক, সেটি একেবারেই পোক্ত করে দেওয়া দরকার। ভাষার দুটি দিক আছে, একটি বলার, আরেকটি লেখার দিক। বলা ও লেখার দিকটি যেন একেবারে পোক্ত হয়ে যায়।

বলার ভাষা, আর শিক্ষার ভাষা এক নয়। শিক্ষার ভাষাটি তৈরি, কৃত্রিম ভাষা। এটিকে মানভাষা বা প্রমিত ভাষা বলা হয়। এই মানভাষা শেখাতে হবে। তার মধ্য দিয়ে পরীক্ষায় হোক, বক্তৃতার মঞ্চে হোক, শিক্ষাদানে হোক—তা প্রকাশ করা হবে। কাজেই ভাষাজ্ঞানের জায়গাটি পোক্ত হওয়া দরকার। সেটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই হওয়া উচিত। সেই সচেতনতা বজায় রেখে পাঠ্যক্রম তৈরি করতে হবে।

অধ্যাপক পবিত্র সরকার বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমাদের যাঁরা বিদেশে অসম্ভব সম্মান লাভ করেছেন—বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, তাঁরা সব গবেষণা করেছেন বিদেশি ভাষায়। কিন্তু বাংলা ভাষায় লেখেননি। এটি একটি সমস্যা।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বইগুলোর ভাষায় যেন ছাত্রবন্ধুত্বের ব্যাপারটি থাকে এবং ভাষা যেন সহজলভ্য হয়, তার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান পবিত্র সরকার। তিনি বলেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর অন্তর পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন হওয়ার কথা। কিন্তু সব সময় সেটি সম্ভব হয় না। যখন পাঠ্যক্রম পরিবর্তনের জন্য বসা হয়, তখন এটি ওপর থেকে নিচে যাবে, নাকি নিচে থেকে ওপরে আসবে—এ রকম একটি সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কিন্তু দুটি মিলিত হলে সবচেয়ে ভালো হয়। আর কোন অবস্থানে দাঁড়িয়ে পাঠ্যক্রম পরিবর্তনের কথা ভাবা হচ্ছে, সেই ঐতিহাসিক কথাটিও সব সময় মাথায় রাখতে হবে।

অনলাইনে দেওয়া বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি নতুন শিক্ষাক্রমের প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন সেই দক্ষতা ও শিক্ষা নিয়ে বের হতে পারেন, কর্মজগতের সঙ্গে যেন শিক্ষার সামঞ্জস্য থাকে এবং শিক্ষার্থীরা যখন কর্মজগতে প্রবেশ করতে যান, তখন যেন সেই প্রবেশটি সহজ হয়। এ ছাড়া কর্মজগতের চাহিদার সঙ্গে যেন তাঁরা খুব সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন, সেই জন্যই এসব উদ্যোগ।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মীজানুর রহমান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন (আন্ডারগ্র্যাজুয়েট) নাসির উদ্দিন।