পরামর্শ

অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য উচ্চশিক্ষা, যেভাবে সুযোগ কাজে লাগাবেন

ফাইল ছবি

অনেক বড় দেশ হওয়া সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়ায় মোটে বিশ্ববিদ্যালয় ৪৩টি। এ ছাড়া রয়েছে অনেক ইনস্টিটিউট, যেখান থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা যায়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কিউএস (কোয়াককোয়ারেল সাইমন্ডস) ২০২৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‍্যাঙ্কিংয়ে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের তৃতীয়-শ্রেষ্ঠ উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থা হিসেবে জায়গা পেয়েছে। তালিকায় অস্ট্রেলিয়ার ৭টি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের সেরা ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্থান পেয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ায় লেখাপড়া পুরোটাই হয় অ্যাসাইনমেন্ট এবং গবেষণার মাধ্যমে। এখানে একজন শিক্ষার্থীর যত বেশি জানার আগ্রহ থাকবে, সে তত বেশি জানতে পারবে এবং শিখতে পারবে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া সরকার মাইগ্রেশন অনেক বেশি সহজ করেছে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ায় জীবনযাপন, চিকিৎসাব্যবস্থা অত্যন্ত মানসম্মত। পড়ালেখার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরির সুবিধাও আছে। স্নাতক শেষ করার পর অনেক সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করারও সুযোগ থাকে। কোভিড–পরবর্তী সময় অস্ট্রেলিয়া সরকার অন্য দেশের ছাত্রছাত্রীদের এখানে পড়ালেখার জন্য অনুপ্রাণিত করছে। আজ এখানে তুলে ধরব কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেশন ইউনিভার্সিটিতে স্নাতক পড়তে আসা কিছু ছাত্রের কথা, জানব তাঁরা কীভাবে পড়তে এলেন আর তাঁরা এখন কেমন আছেন। তা ছাড়া ভবিষ্যতে যাঁরা পড়তে আসবেন, তাঁদের জন্য কী পরামর্শ।

যাঁরা পড়াশোনার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় আসতে চান, তাঁদের উচিত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েই সময় নষ্ট না করে যত ধ্রুত সম্ভব আইএলটিএস বা পিটিআই পরীক্ষা দিয়ে স্টুডেন্ট ভিসার প্রক্রিয়া শুরু করা। কোভিডের পর অস্ট্রেলিয়া বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা করার সুযোগ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে

কামরুল আমিন পিয়াস

কামরুল আমিন পিয়াস।

কামরুল আমিন পিয়াস ২০১৯ সালে কুমিল্লা মডার্ন হাইস্কুল থেকে এসএসসি ও ২০২১ সালে কুমিল্লা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর আইইএলটিএস পরীক্ষা দিয়ে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেশন ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমার এখানে আসার পেছনে সম্পূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বড় ভাই নাজমুল আমিন নাছের, আমার পরিবার, আমার প্রবল প্রচেষ্টা এবং আল্লাহর ইচ্ছা। আমি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার বালারাত শহরে থাকি। শহরটি ছোট হওয়া সত্ত্বেও এখানে সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা আছে।

আমার প্রতি সেমিস্টারে ইউনিভার্সিটি খরচ প্রায় ১০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার। এখানে পড়াশোনার পাশাপাশি আছে খণ্ডকালীন চাকরি করার সুযোগ। চাকরির বেতন দিয়ে যাবতীয় খরচ এবং পড়াশোনার খরচ বহন করি। এখানে চমৎকার বাংলাদেশি কমিউনিটি রয়েছে, আছে বড় ভাইয়া-আপুরা। আমরা যারা নতুন এসেছি এ বছর, আমাদের সবাইকে নিজের ছোট ভাইয়ের মতো করে গ্রহণ করে নিয়েছেন এঁরা সবাই। তাঁরা সব সময় আমাদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে থাকেন, আমাদের যেকোনো সমস্যায় সবার আগে এগিয়ে আসেন।

তাঁরা আছেন বলেই মনে হয় না অন্য একটি দেশে আছি, মনে হয় এ যেন অস্ট্রেলিয়ার বুকে ছোট একটি বাংলাদেশ। এবার আসি পড়ালেখার বিষয়ে। এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের দেশ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে সেলফ–ডিপেন্ডেড পড়াশোনা, ‘ওপেন বুক অ্যাসেসমেন্ট’। কোনো কিছু মুখস্থ করা লাগে না, থিওরি থেকে ব্যবহারিক জিনিসের ব্যবহার বেশি।

নিজেকেই সবকিছু খুঁজে বের করতে হয় ইন্টারনেট থেকে, যার কারণে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক আরও অনেক কিছু শিখতে পারেন। এখানে ইউনিভার্সিটির শিক্ষকেরা এককথায় অসাধারণ, অনেক সহায়ক এবং বন্ধুসুলভ। শিক্ষার্থীরা যেকোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে বা কিছু জানতে চাইলে তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন সমাধান করে দেওয়ার জন্য।

যাঁরা পড়াশোনা করার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় আসতে চান, তাঁদের উচিত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে সময় নষ্ট না করে যত ধ্রুত সম্ভব আইএলটিএস বা পিটিআই পরীক্ষা দিয়ে স্টুডেন্ট ভিসার প্রক্রিয়া শুরু করা। কারণ, কোভিডের পর থেকে অস্ট্রেলিয়া সরকার তাদের দেশে ইন্টারন্যাশনাল ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা করার সুযোগ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

নতুন যেসব ভাইয়া-আপুদের অস্ট্রেলিয়া বা অন্য যেকোনো উন্নত দেশে পড়াশোনা করার ইচ্ছা রয়েছে, তাঁদের জন্য আমার পরামর্শ হলো, ‘এখন থেকেই আপনারা আপনাদের লক্ষ্য ঠিক করে ফেলেন। সেই অনুযায়ী আস্তে আস্তে অগ্রসর হতে থাকেন। ইনশা আল্লাহ একদিন সবার স্বপ্ন পূরণ হবে।’

অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরি করে ভালো অঙ্কের টাকা উপার্জন করা যায়। যারা একটু পরিশ্রমী, তারা নিজেদের খুব ভালো সাপোর্ট দিতে পারবে। এ ছাড়া পরিবারকেও একটু সাপোর্ট দিতে পারবে। আসার পরপরই টিএফএন (TFN) করে নিতে হবে। তারপর কয়েকটি ওয়েবসাইটে (Jora, Indeed, Seek)-এ গিয়ে করে ফেলতে হবে কাজের জন্য।

মো. রিফাত হাসান

মো. রিফাত হাসান

গতানুগতিক ধারায় জীবন ও ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনার অনভ্যস্ততা থেকেই একটা সময় চিন্তা করলাম ‘দেশের বাইরে পড়তে গেলে কেমন হয়’। ২০২১ সালে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে এইচএসসির পর এ চিন্তাটা যেন একটু বেশি মাথাচাড়া দিয়ে উঠল।

তারপর ইন্টারনেটের মাধ্যমে কয়েকটি দেশের পড়াশোনার সুযোগ-সুবিধা জানার পর সিদ্ধান্ত নিলাম অস্ট্রেলিয়াতেই পড়তে যাব। কয়েকটি অস্ট্রেলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করলাম এবং আইএলটিএসের প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম। পরীক্ষা দিয়ে কাঙ্ক্ষিত স্কোর পেয়ে গেলাম।

এরপর জিটিএ ক্লিয়ারেন্সের জন্য সব ডকুমেন্ট স্টাডি লিংকে জমা দিলাম এবং টিউশন ফি জমা দেওয়ার মাধ্যমে Confirmation of Enrolment–COE পেলাম। এরপর ২০২২ সালের অক্টোবরে ভিসার আবেদন করলাম। ১৩ তারিখ ভিসা হাতে পেয়ে গেলাম। এরপর শুরু হলো বাসা খুঁজে পাওয়ার নতুন চ্যালেঞ্জ এবং অবশেষে পেয়েও গেলাম। ওরিয়েন্টেশন সম্পন্ন করার জন্য ক্লাস শুরুর আগে অস্ট্রেলিয়া এসে পৌঁছালাম এবং যথারীতি ক্লাস শুরু হলো।

অস্ট্রেলিয়াতে লেখাপড়া মূলত অ্যাসাইনমেন্ট এবং গবেষণানির্ভর। এখানে একজন শিক্ষার্থীর যত বেশি জানার আগ্রহ থাকবে, সে তত বেশি জানতে পারবে এবং শিখতে পারবে। আর এখানে সবাই অনেক বেশি সাহায্যপরায়ণ। পাশাপাশি এখানে বাংলাদেশি কমিউনিটির সবার মধ্যে সম্পর্কটা অনেক বেশি ভালো এবং যেকোনো বিপদে–আপদে বড় ভাই-আপুরা এগিয়ে আসেন।

বর্তমান সময়ে অস্ট্রেলিয়া সরকার মাইগ্রেশন অনেক বেশি সহজ করেছে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। যারা অস্ট্রেলিয়া পড়তে আসতে চাও, এখনই তাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ। এখানে পড়তে আসার জন্য শুরুতেই আইইএলটিস অথবা পিটিই পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করতে হবে, পাশাপাশি ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ অন্যান্য সব ডকুমেন্টস জোগাড় করে পছন্দমতো ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করার পর জিটিই (GTE) ক্লিয়ারেন্স এবং সিওই (COE) পাওয়ার পর ভিসার আবেদন করতে পারবেন।

ইউনিভার্সিটি অ্যাপ্লিকেশন থেকে শুরু করে ভিসা পাওয়ার আগপর্যন্ত অনেক চড়াই-উতরাই থাকবে এবং এখানে আসার পরও শুরুর দিকে সবকিছু অতটা সহজ হবে না, তবে যদি ধৈর্য ধরতে পারেন এবং নিজের প্রতি বিশ্বাস রেখে সব বাধা পার করতে পারেন, তাহলে অস্ট্রেলিয়া পড়াশোনা করার জন্য তোমার কাছে স্বর্গরাজ্য মনে হবে।

মো. রায়হান উদ্দীন

মো. রায়হান উদ্দীন

জীবন ও ক্যারিয়ার নিয়ে যখন ভাবতাম, তখনই ইচ্ছা হতো বাইরে থেকে যদি একটা ভালো ডিগ্রি অর্জন করতে পারতাম। সময়টা ২০২০, করোনা মহামারিতে জীবন থেকে একটা বছর শেষ হয়ে গেল। কোনো কিছু বুঝতে পারছিলাম না যে কী করব। রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে ২০২১ সালে এইচএসসি সম্পন্ন করলাম। করোনার জন্য পাস হয়ে গেলাম অটো। আর তারপর বাইরে পড়তে যাওয়ার চিন্তাটা যেন একটু বেশি মাথাচড়া দিয়ে উঠল।

তারপর ইন্টারনেটের মাধ্যমে কয়েকটি দেশের পড়াশোনার সুযোগ-সুবিধা জানার পর সিদ্ধান্ত নিলাম অস্ট্রেলিয়াতেই পড়তে যাব। নিজের অনেক কাছের বন্ধুরা সবাই অস্ট্রেলিয়াতে পড়াশোনা করছে। সবাই পরামর্শ দিল এর থেকে ভালো কোনো দেশ হতে পারে না পড়াশোনা এবং নিজের কার্যের জন্য।

নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করা শুরু করলাম। কয়েকটি অস্ট্রেলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করলাম এবং আইইএলটিএস প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম। মাত্র ১০ দিনের প্রস্তুতিতে পরীক্ষা দিলাম এবং কাঙ্ক্ষিত স্কোর পেয়ে গেলাম। ইতিমধ্যে আমি দেশের আইইউবিতে (IUB) ক্লাস শুরু করে দিয়েছি। আমার সব কাজ, ইউনিভার্সিটি থেকে শুরু করে সব কার্যক্রমে আমাকে সাহায্য করেছে একটি স্টুডেন্ট মাইগ্রেশন এজেন্সি।

এরপর জিটিএ ক্লিয়ারেন্সের জন্য সব ডকুমেন্ট জমা দিলাম। আমার আগে থেকেই সব ডকুমেন্টস তৈরি ছিল, কারণ কাছের বন্ধু সবাই যে ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়াতে পড়াশোনা করতে গিয়েছে। জিটিএ ক্লিয়ারেন্স সম্পন্ন হলো, এবার টিউশন ফি জমা দেওয়ার পালা। ব্যাংকের মাধ্যমে খুব সহজেই টিউশন ফি প্রদান করা শেষ হয়ে গেল। টিউশন ফি দেওয়ার মাধ্যমে সিওই COE পেলাম। এ বছরের ২৬ জানুয়ারিতে ভিসার আবেদন করলাম। ৬ ফেব্রুয়ারি ভিসা হাতে পেয়ে গেলাম।

এরপর শুরু হলো বাসা খুঁজে পাওয়ার নতুন চ্যালেঞ্জ। ১৬ ফেব্রুয়ারিতে রাত ১টায় আমার ঢাকা টু মেলবোর্নের ফ্লাইট ছিল। এসে প্রথমে বন্ধুর বাসায় উঠলাম তারপর বাসা খোঁজা শুরু করলাম এবং পেয়েও গেলাম। তারপর ওরিয়েন্টেশনের পর যথারীতি ক্লাস শুরু হলো। অস্ট্রেলিয়াতে লেখাপড়া পুরোটাই হয় অ্যাসাইনমেন্ট এবং গবেষণার মাধ্যমে। এখানে একজন শিক্ষার্থীর যত বেশি জানার আগ্রহ থাকবে, সে তত বেশি জানতে পারবে এবং শিখতে পারবে।

কারণ, যখন অ্যাসাইনমেন্ট করতে যাবে, তখন অনেক ওয়েবসাইট থেকে ডেটা কালেকশন করতে হবে, সে জন্য অনেক ইনফরমেশন পাওয়া যাবে। আর এখানে সবাই অনেক বেশি সাহায্যপরায়ণ। পাশাপাশি এখানে বাংলাদেশি কমিউনিটি আছে এবং সবার মধ্যে সম্পর্কটা অনেক বেশি ভালো। যেকোনো বিপদে-আপদে বড় ভাইয়া-আপুরা এগিয়ে আসেন। বর্তমান সময়ে অস্ট্রেলিয়া সরকার মাইগ্রেশন অনেক বেশি সহজ করেছে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।

এখানে পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরি করে একটা ভালো অঙ্কের টাকা উপার্জন করা যায়। যারা একটু পরিশ্রমী, তারা নিজেদের খুব ভালো সাপোর্ট দিতে পারবে। এ ছাড়া পরিবারকেও একটু সাপোর্ট দিতে পারবে। তোমাদের আসার পরপর ই টিএফএন (TFN) করে নিতে হবে। তারপর কয়েকটি ওয়েবসাইটে (Jora, Indeed, Seek)-এ গিয়ে করে ফেলতে হবে কাজের জন্য। আশা করি, পেয়ে যাবে সবাই। চেষ্টা করে যেতে হবে ভালো একটি কাজ না পাওয়া পর্যন্ত।

খণ্ডকালীন চাকরি অনেক জায়গাতেই পাওয়া যাবে, শুধু ধৈর্য ধরে থাকতে হবে এবং চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। অস্ট্রেলিয়ায় আসার জন্য শুরুতেই তোমাদের আইএলটিএস/পিটিই পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। পাশাপাশি সব ডকুমেন্টস ঠিকমতো জোগাড় করে পছন্দমতো বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপ্লাই করতে হবে। তারপর GTE ক্লিয়ারেন্স এবং COE, আর তার পরেই কেবল ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে।

ইউনিভার্সিটি অ্যাপ্লিকেশন থেকে শুরু করে ভিসা পাওয়ার আগপর্যন্ত—এই পুরো প্রক্রিয়ায় অনেক ধৈর্য ধরতে হবে আর সবকিছু ঠিকভাবে করতে হবে, অন্যথায় যেকোনো জায়গা থেকে বাধা আসতে পারে। রিফাতের মতো আমিও বলব, নিজের প্রতি বিশ্বাস রেখে সব বাধা পার করতে হবে, আর তবেই তাহলে অস্ট্রেলিয়া পড়াশোনা করার জন্য স্বর্গরাজ্য মনে হবে।

তিনজন ছাত্রের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা অনেক কিছু জানতে পারলাম। তবে কিছু ব্যাপারে সতর্ক থাকা ভালো।

  • যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হবে, সেগুলো খুব সতর্কতার সঙ্গে দেখে নিতে হবে। এখানে কোনো ধরনের ‘শর্টকাট’ অবলম্বন করলে পরবর্তী সময়ে অনেক ভোগান্তির সম্ভাবনা আছে। অস্ট্রেলিয়া সরকারের ভিসার আইন অত্যন্ত শক্ত এবং কোনো প্রকার জালিয়াতির আশ্রয় তারা মেনে নেয় না।

  • সম্ভব হলে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে আসা ভালো। যদিও অনেক সময় সেটা সম্ভব হয় না। আবারও বলছি, ড্রাইভিং জেনে মূল লাইসেন্স নিয়ে আসা। বাংলাদেশের লাইসেন্স নিয়ে এখানে গাড়ি চালানোর আগে অস্ট্রেলিয়া সরকার বাংলাদেশের এম্বাসি থেকে সেই লাইসেন্স ভেরিফাই করিয়ে নেয়।

  • আসার আগে থাকা-খাওয়ার ব্যাপারে খুব ভালোভাবে জেনে আসতে হবে। এখানে আসার পর থাকার ব্যবস্থা করা যাবে—এই চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এখানে বাইরের হোটেল বা এয়ার বিএনবিতে থাকা অনেক ব্যয়বহুল, তাই অবশ্যই আগে থেকেই থাকার ব্যবস্থা করা ভালো, হোক সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে বা পরিচিতজনের মাধ্যমে।

  • কয়েক মাসের থাকা-খাওয়ার টাকা অবশ্যই নিয়ে আসতে হবে। এখানে আসার পর খণ্ডকালীন চাকরি পেতে সময় লাগতে পারে, সেই কয়েক দিন/কয়েক মাস চলার মতো টাকা হাতে থাকতে হবে। তা ছাড়া কোনো কারণে অসুস্থ থাকলে খণ্ডকালীন চাকরিতে যাওয়া যাবে না, সে ক্ষেত্রে হাতে টাকা থাকাটা জরুরি।

লেখাটি সম্পাদনায়: এহসান রাজা চৌধুরী, ম্যানেজিং কনসালট্যান্ট, আইবিএম অস্ট্রেলিয়া এবং সাবেক সহকারী অধ্যাপক, কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়