উচ্চশিক্ষায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সরকারি প্রতিষ্ঠানেও ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পাচ্ছেন। বর্তমানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এ সুযোগ থাকলেও সেটি নীতিমালা অনুযায়ী হচ্ছে না; যার যার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হচ্ছে। এখন বেসরকারি খাতকেও একই নীতিমালার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তের পর ইন্টার্নশিপ নীতিমালা-২০২৩-এর গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার।
দেশের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যুগোপযোগী ও অভিজ্ঞ মানবসম্পদ সৃষ্টি, পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞানের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটানোর সুযোগ রেখে ইন্টার্নশিপ নীতিমালার গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। ইন্টার্নদের নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাতা ও ছুটির সুযোগ রেখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নীতিমালা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত কিংবা অন্য কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ইন্টার্নশিপ প্রদান করতে পারবে। ইন্টার্নশিপের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে নীতিমালায় বলা হয়েছে, ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুগোপযোগী ও অভিজ্ঞ মানবসম্পদ সৃষ্টি করা; পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞানের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটানো এবং সরকারি দপ্তরের কাজের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ভবিষ্যতে প্রজাতন্ত্রের সেবায় নিয়োজিত করতে উৎসাহ প্রদান করা। তবে সামরিক বা বেসামরিক বা আধা সামরিক সব ধরনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, সরকার কর্তৃক ঘোষিত কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন (কেপিআই) স্থাপনা বা প্রতিষ্ঠানগুলো এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, এমন কোনো কর্মে ইন্টার্নশিপ প্রদান করা যাবে না।
নীতিমালা অনুসারে, ইন্টার্নশিপ প্রার্থীর আবেদন করার জন্য আগ্রহীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে; প্রার্থীকে কমপক্ষে স্নাতক/সমমানের ডিগ্রিধারী হতে হবে (অবতীর্ণ প্রার্থীসহ); স্নাতক/স্নাতকোত্তর/সমমানের ডিগ্রি অর্জনের দুই বছরের মধ্যে আবেদন করতে হবে এবং একজন প্রার্থী একবার সরকারি অফিসে ইন্টার্নশিপ করতে পারবেন।
ইন্টার্ন বাছাই হবে মেধার ভিত্তিতে। বিষয়-সংশ্লিষ্ট জ্ঞানের ভিত্তিতে (সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারিত) এবং আবেদনকারীর ইন্টার্নশিপের ক্ষেত্র বাছাইয়ের প্রেক্ষাপট এবং এ ক্ষেত্রে তাঁর সম্ভাব্য অবদানের বর্ণনার ভিত্তিতে। সুষম প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ইন্টার্ন বাছাই করতে হবে। এ জন্য নীতিমালার আলোকে প্রতিটি মন্ত্রণালয় তার ও তার অধীন দপ্তর, সংস্থা, প্রতিষ্ঠানের অধিক্ষেত্র বিবেচনায় প্রতি অর্থবছরের জন্য ইন্টার্নশিপের সুযোগের সংখ্যা নির্ধারণ করবে। দপ্তর, সংস্থা, বিদ্যমান সুযোগের বিপরীতে ইন্টার্নশিপ প্রদানের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বহুল প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ইন্টার্নশিপ প্রদানকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান ইন্টার্ন বাছাই করে নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় বরাবর মনোনয়নের অনুমতি গ্রহণ করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে ইন্টার্নশিপের স্থান, সংখ্যা, মেয়াদকাল, বিশেষ দক্ষতা, ভাতা (যদি থাকে), বাছাইপ্রক্রিয়া প্রভৃতি বিষয় উল্লেখ করতে হবে। ইন্টার্নশিপের মেয়াদ সর্বনিম্ন তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত হতে পারবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সময় নির্ধারণ করবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, ইন্টার্ন প্রতি মাসে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পরিমাণ ভাতা প্রাপ্য হবেন। ভাতা ছাড়া ইন্টার্ন অন্য কোনো ভাতা বা সুবিধা প্রাপ্য হবেন না। ভাতা প্রাপ্তির প্রাক্কালে প্রতি মাসে ইন্টার্নকে তাঁর সন্তোষজনক কর্মকালের বিষয়ে সুপারভাইজারের কাছ থেকে প্রত্যয়ন সংগ্রহ করতে হবে। ইন্টার্নশিপ চলার সময়ে ইন্টার্ন-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কর্মে নিযুক্ত রয়েছেন মর্মে কোনোরূপ প্রত্যয়ন প্রাপ্য হবেন না; সফলভাবে ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করার পর ইন্টার্নশিপ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ প্রাপ্য হবেন। ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করা কোনোভাবেই কোনো প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী, অস্থায়ী বা অন্য কোনো প্রকার চাকরির ক্ষেত্রে প্রাধিকার বা অগ্রাধিকার হিসেবে গণ্য হবে না।
ইন্টার্নশিপে যোগদানের সময় অন্য কাগজপত্রের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সর্বশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তাঁর মৌলিক যোগ্যতা ও অন্য গুণাবলির বর্ণনা-সংবলিত প্রত্যয়ন; স্নাতক/স্নাতকোত্তর/সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণের সনদ, অথবা উক্তরূপ পরীক্ষাগুলোতে অবতীর্ণ হওয়ার প্রত্যয়ন (যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক) পত্রের কপি; জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি এবং অন্য কোনো কর্মে নিয়োজিত থাকলে প্রয়োজনীয় অনাপত্তি সনদ দিতে হবে। কর্মে যোগদানের আগে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন মনে করলে ইন্টার্নের পুলিশ ভেরিফিকেশন করাতে পারবে।
বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্ব-স্ব মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রণালয়গুলোর তত্ত্বাবধানে যথোপযুক্ত ইন্টার্নশিপ নীতিমালা প্রণয়ন করবে। সরকার এই নীতিমালার মাধ্যমে বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেও ইন্টার্নশিপ কার্যক্রমকে উৎসাহিত করবে এবং এ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে। বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী ইন্টার্নদের ভাতা, ইন্টার্নশিপের মেয়াদ ও অন্যান্য বিষয় নির্ধারণ করতে পারবে। এফবিসিসিআই ও সংশ্লিষ্ট শীর্ষ ব্যবসায়িক সংগঠন ইন্টার্নশিপের বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত পরিবীক্ষণ ও নির্দেশনা দেবে।
ইন্টার্নশিপ বাস্তবায়নে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অধীনে একটি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সৃজন করা হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
*ইন্টার্নশিপের গেজেট দেখুন এখানে