কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং অনুসারে পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেরা ১০–এর মধ্য কয়েক বছর ধরেই আছে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পৃথিবীর সব দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের। এখানে না পড়েও অসাধারণ ফলাফল ও গবেষণার জন্য রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. তৌহিদুল ইসলাম।
রাজশাহীর ছোট্ট মফস্সল শহর চারঘাটে বেড়ে ওঠা তৌহিদুলের। তাঁর বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় হয়ে চিকিৎসক হবেন। আর ফুফু-ফুফা বলতেন, ‘তোমার যা করতে ভালো লাগে, তুমি সেটাই করো।’
তৌহিদুল বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমার স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫.০০ পাওয়ার পর ২০০৫ সালে বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হই। বুয়েটে মোহাম্মদ কামরুল হাসান স্যার ও সেলিয়া শাহনাজ ম্যাডামের কাছে গবেষণার হাতেখড়ি। বুয়েট থেকে ৩.৮২ সিজিপিএ নিয়ে পাস করার পর সেলিয়া শাহনাজ ম্যাডামের অনুপ্রেরণায় যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার জন্য আবেদন করি এবং স্কলারশিপসহ ২০১৪ সালে পড়তে যাই।’
চিকিৎসা ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে বর্তমানে গবেষণা করছেন তৌহিদুল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে কীভাবে আগে থেকে হৃদ্রোগ, মস্তিষ্কের রোগ ও ক্যানসার নির্ণয় করা যায়, সেসব বিষয় নিয়ে কাজ করছেন। কী ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি ব্যবহার করে ক্যানসার রোগীদের জীবনমান ভালো করা যায় এবং চিকিৎসায় সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়—এটিও তাঁর গবেষণার একটি বিষয়।
এখন পর্যন্ত ৪৪টি পিয়ার রিভিউড জার্নালে প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে পিএইচডিতে ২২টি প্রবন্ধ রয়েছে। পোস্টডক্টরাল সময়ে পাঁচটি ফার্স্ট অথর প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন, যেগুলো সম্মানজনক নেচার সাবজার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণার জন্য গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ থেকে সম্মানজনক কে৯৯/আর০০ পাথওয়ে টু ইনডিপেনডেন্স অ্যাওয়ার্ড পান তিনি। টেক্সাস এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট অ্যাওয়ার্ড, স্ট্যানফোর্ড ক্যানসার ইনস্টিটিউট এবং স্ট্যানফোর্ড এইচএআই অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন।
তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘স্ট্যানফোর্ডে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে চাকরি পাওয়ার যাত্রাটি বেশ দীর্ঘ ও চ্যালেঞ্জিং ছিল। বাংলাদেশ থেকে আমিই প্রথম স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে টেনিউর ট্র্যাক (স্থায়ী) সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করতে যাচ্ছি, যা আমার জন্য অনেক বড় এক অর্জন। আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়োগপ্রক্রিয়া কঠিন এবং ধাপে ধাপে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা হয়। কয়েকবার ইন্টারভিউ দিতে হয়। আমি বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছিলাম। আমার পিএইচডি শুরুর পর থেকেই স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার এবং আমার প্রথম পছন্দ ছিল স্ট্যানফোর্ড।’
তৌহিদুল বলেন, ‘গত ছয় মাসে অসংখ্য জুম ইন্টারভিউ, অনসাইট ইন্টারভিউ এবং স্যালারি নিয়ে আলোচনার মিটিংয়ের মধ্য দিয়ে গেছি। অবশেষে আমেরিকার প্রথম পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তিনটি থেকে অফার পাই। এ সময়টাতে অনেক চিন্তা এবং আমার পিএইচডি ও পোস্টডক মেন্টরদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সবকিছু বিবেচনা করে আমি স্ট্যানফোর্ডে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিই। আলহামদুলিল্লাহ! এখন থেকে স্ট্যানফোর্ডকে আমার নতুন বাড়ি বলতে পারব।’
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৫ সালে তৌহিদুলের অধীনে নতুন ল্যাব চালু হবে। তিনি বলেন, ‘আমার ল্যাবে বেশ কয়েকজন পিএইচডি স্টুডেন্ট ও পোস্টডক নেওয়া হবে। যাঁরা মেডিকেল ডেটা বিশ্লেষণ, রোগ নির্ণয়, মেশিন লার্নিং, ডিপ লার্নিং বা পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করেন, তাঁরা আমার ল্যাবের জন্য উপযুক্ত হবেন।’
যেসব বাংলাদেশি শিক্ষার্থী স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখছেন, তাঁদের উদ্দেশে তৌহিদুল বলেন, ‘স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা পিএইচডি ও মাস্টার্স করতে ইচ্ছুক, তাঁদের টোয়েফল ও জিআরই-তে ভালো স্কোর থাকতে হবে। এ ছাড়া স্নাতক পর্যায়ের সিজিপিএ বেশি থাকতে হবে। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স, বায়োমেডিকেল ডেটা সায়েন্স ও বায়ো–ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীরা যদি স্ট্যানফোর্ডে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করতে চান, যেকোনো পরামর্শের জন্য আমাকে ই–মেইল (tauhid@stanford.edu) করতে পারেন। আমি তাঁদের যথাযথ নির্দেশনা দেওয়ার চেষ্টা করব।’