পোল্যান্ডে উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপ, সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ, আইইএলটিএসে ৬ হলেই আবেদন

শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ, মেধা ও বুদ্ধির স্বাধীন ও সঠিক চর্চাসহ নানা কারণেই ইউরোপমুখী হচ্ছেন বিশ্বের নানা প্রান্তের উচ্চাকাঙ্ক্ষী শিক্ষার্থীরা। বছরের পর বছর ধরে পেশাদার জনশক্তি তৈরি করে আসছে বাস্তবধর্মী শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিনিধি শেনজেনভুক্ত দেশগুলো। এগুলোর মধ্যে অন্যতম পোল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা নিয়ে আজকের আলোচনা। পোল্যান্ডে পড়াশোনার খরচ, স্কলারশিপসহ ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

কেন পোল্যান্ডে পড়ব

উচ্চশিক্ষায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যরাষ্ট্রটিকে বেছে নেওয়ার নেপথ্যে অ্যনতম কারণ হতে পারে আর্থসামাজিক অবস্থা। এরপরই সবচেয়ে আকর্ষণীয় কারণ হচ্ছে, স্বল্প খরচে মানসম্মত শিক্ষা। এখানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে প্রতিবছর গড়ে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার ফি নেওয়া হয়। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ৯৮ হাজার ৬৯৪ থেকে ৪ লাখ ১৮ হাজার ১৭১ টাকার (১ ডলার সমান ১১৯ দশমিক ৪৮ বাংলাদেশি টাকা) সমান। শুধু তা–ই নয়, পোল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থাও করে।

কম ফি নেওয়ার পরও শিক্ষার মানের সঙ্গে এতটুকু আপস করা হয়নি। কিউএস র‍্যাঙ্কিংয়ে বিদ্যাপীঠগুলোর অবস্থান তারই প্রমাণ। পোল্যান্ডের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারসের র‍্যাঙ্ক ২৬২–তে। জাগিলোনিয়ান ইউনিভার্সিটি ও ওয়ারস ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি রয়েছে যথাক্রমে ৩০৪ ও ৫৭১ নম্বর অবস্থানে।

পোল্যান্ডের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রমের নাম বোলোগ্না। এটি পুরো ইউরোপে মেনে চলা হয়। এর ফলে এখানকার ডিগ্রিগুলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায়। শুধু ইউরোপেই নয়, এর বাইরে বিশ্বের যেকোনো চাকরির বাজারে গ্রহণযোগ্যতা আছে পোলিশ ডিগ্রির।

আবেদনের পূর্বশর্ত

*আন্ডারগ্রাজুয়েশনে ভর্তির জন্য একাডেমিক শিক্ষা কার্যক্রমে ১২ বছর অতিবাহিত করতে হবে। এখানে প্রতিটি চূড়ান্ত পরীক্ষায় সর্বনিম্ন ৬০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। জিপিএ (গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ) পদ্ধতিতে প্রোগ্রাম অনুসারে ন্যূনতম গ্রেডের প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে জিপিএ ২ দশমিক ৫ চাওয়া হয়ে থাকে।

*ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার জন্য আইইএলটিএসে প্রতিটি ব্যান্ডে ৫ দশমিক ৫–সহ সামগ্রিক স্কোর ৬ থাকতে হয়।

*মাস্টার্সের জন্য ৩ থেকে ৪ বছরের স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে, যেখানে কোনো পরীক্ষায় ৬০ শতাংশের নিচে পাওয়া যাবে না। আইইটিএলএসে প্রতিটি ব্যান্ড স্কোর অবশ্যই ৬ দশমিক ৫ বা তার ওপরে থাকতে হবে।

*এ ছাড়া ডিজাইন, মেডিকেল বা প্রকৌশলের মতো প্রোগ্রামগুলোর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যোগ্যতা পূরণের প্রয়োজন হতে পারে।

পোল্যান্ডের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ও চাহিদাসম্পন্ন কোর্সের তালিকা

১০টি পোলিশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান:

*ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারস

*জাগিলোনিয়ান ইউনিভার্সিটি

*ওয়ারস ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি

*অ্যাডাম মিকিউইচ ইউনিভার্সিটি পোজনান

*পোজনান ইউনিভার্সিটি অব লাইফ সায়েন্সেস

*জিডান্স্ক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি

*এজিএইচ (একাডেমিয়া গরনিক্জো-হাটনিক্জা) ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি

*নিকোলাস কোপার্নিকাস ইউনিভার্সিটি

*ইউনিভার্সিটি অব রোক্ল

*রোক্ল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।

সেরা বিষয়গুলো—

মেডিসিন, মনোবিজ্ঞান, কম্পিউটার সায়েন্স, আইন, ব্যবসা ব্যবস্থাপনা, ইঞ্জিনিয়ারিং, কলা, নকশা ও স্থাপত্য।

আবেদনের সময়—

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সাধারণত দুটি ভিন্ন মৌসুমে পোল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তির আবেদন শুরু করতে পারেন। একটি সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরে, অন্যটি ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে। প্রতিটি মৌসুমেরই রয়েছে নির্দিষ্ট সময়সীমা, যা বিশ্ববিদ্যালয় অনুসারে পরিবর্তিত হয়।

প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব অনলাইন পোর্টালে ভর্তির আবেদন গ্রহণ করে থাকে। পোর্টালের নিবন্ধনের পর আবেদনপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময়ই ভর্তির প্রয়োজনীয় নথিপত্রগুলো আপলোড করতে হয়। সব তথ্য দেওয়া শেষে সাবমিট করার পর সম্পূর্ণ আবেদনপত্র ডাউনলোড করে প্রিন্ট করতে হয়। অতঃপর তাতে আবেদনকারীকে স্বহস্তে সই করে দূতাবাসে জমাদানের জন্য অন্যান্য কাগজপত্রের সঙ্গে প্রস্তুত রাখতে হয়।

ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র—

*ইউনিভার্সিটির পোর্টালে জমা দেওয়া আবেদনপত্র

*নোটারাইজড মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট

*স্নাতক প্রোগ্রাম ডিপ্লোমা

*৪টি পাসপোর্ট সাইজের ছবি

*পাসপোর্ট

*ইংরেজি ভাষার দক্ষতার প্রমাণ; মিডিয়াম অব ইনস্ট্রাকশন (এমওআই) ইংরেজি হলে আলাদা প্রমাণের প্রয়োজন নেই

*মেডিকেল সার্টিফিকেট

*ভর্তি ফি প্রদানের রশিদ; সাধারণত ৪৪ থেকে ১৮৪ ইউরো বা ৫ হাজার ৮২৬ থেকে ২৪ হাজার ৩৬২ টাকার (১ ইউরো সমান ১৩২ দশমিক ৪০ টাকা) মধ্যে হয়ে থাকে।

*একটি একাডেমিক রেফারেন্স ও একটি ব্যক্তিগত রেফারেন্স লেটার

*মোটিভেশন লেটার

*পোর্টফোলিও বা সিভি

*পোল্যান্ডে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন

যাঁরা দীর্ঘমেয়াদি পড়াশোনার জন্য পোল্যান্ডে যেতে ইচ্ছুক, তাঁদের টাইপ-ডি ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এই ভিসায় এক বা একাধিক ভিজিটে ৯০ দিন থেকে শুরু করে এক বছর পর্যন্ত পোল্যান্ডে থাকার অনুমতি লাভ করা যায়।

এ স্টাডি ভিসার জন্য ই-কনস্যুলেটের -এর ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হয়। এটি মূলত ভিসাপ্রাপ্তির জন্য দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার পদ্ধতি। অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিশ্চিত হওয়ার পরই ভিএফএস ওয়েবসাইটে যেতে হবে। এটিই হলো পোল্যান্ডের স্টুডেন্ট ভিসার অনলাইন আবেদন।

পোল্যান্ডে যেকোনো ধরনের আবাসন প্রাপ্তির প্রমাণ

আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ: মাসিক জীবনযাত্রার খরচ বাবদ ৭৭৬ পোলিশ জ্লতি বা পিএলএন। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই পরিমাণ প্রায় ২৩ হাজার ৯২০ টাকা (১ পোলিশ জ্লতি সমান ৩০ দশমিক ৮২ টাকা)। এর পাশাপাশি বাংলাদেশে ফিরে আসার জন্য ভ্রমণ খরচ বাবদ কমপক্ষে ২ হাজার ৫০০ জ্লতি (৭৭ হাজার ৬১ টাকা) দেখাতে হবে। এর সঙ্গে—

*ট্রাভেলার চেক

*ব্যাংকের জারি করা ক্রেডিট কার্ডের লিমিটের প্রমাণপত্র

*ব্যাংকের অর্থের প্রাপ্যতার শংসাপত্র। এসব বিবৃতি অবশ্যই কোনো পোলিশ ব্যাংকের ইস্যু করা হতে হবে।

* স্পনসরপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে তার প্রমাণপত্র; এ ক্ষেত্রে সব ভ্রমণ, বসবাস ও বাসস্থানের ব্যয়ভার বহন করা হচ্ছে উল্লেখপূর্বক নোটারাইজ্ড স্বীকৃতিপত্র

*প্রার্থী নিজের ব্যয়ভার বহন করলে তাঁর মাসিক বেতন বিবরণীসহ কর্মসংস্থানের শংসাপত্র

ভিসা আবেদন জমা ও বায়োমেট্রিক নিবন্ধন

ই-কনস্যুলেটরে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করার পর প্রার্থীকে একটি ই-মেইল পাঠানো হবে, যেখানে অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ উল্লেখ থাকবে। এই তারিখে দরকারি কাগজপত্র নিয়ে প্রার্থীকে সশরীর উপস্থিত হতে হবে ভিসা আবেদন কেন্দ্রে (ভিএসি)। বাংলাদেশে পোল্যান্ডের কোনো ধরনের ভিসার প্রক্রিয়াকরণ করা হয় না। তাই প্রার্থীদের আবেদন জমা ও সাক্ষাৎকারের জন্য যেতে হবে ভারতে অবস্থিত পোলিশ দূতাবাসে।

দূতাবাসের ঠিকানা: ৫০ এম, শান্তিপথ, চাণক্যপুরী, নতুন দিল্লি, দিল্লি-১১০০২১, ভারত ভিএসিতে প্রার্থীর আবেদন গ্রহণের পাশাপাশি আঙুলের ছাপ নেওয়া ও ছবি তোলার মাধ্যমে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন করা হবে। সেই সঙ্গে প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে, যেখানে মূলত তাঁর পোল্যান্ডে যাওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে কথা হবে।

যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ভিএসি কর্মকর্তা প্রার্থীকে আইসিআর বা ইনভয়েস কাম রিসিপ্ট প্রদান করবেন। পরবর্তী সময়ে ভিসাযুক্ত পাসপোর্ট নিতে আসার সময় এই রশিদ অবশ্যই সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে।

ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় ও ভিসা প্রাপ্তি

পোল্যান্ডের স্টুডেন্ট ভিসার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে সাধারণত ১৫ কার্যদিবস লাগে। তবে নথিগুলো বিশদ যাচাইয়ের ক্ষেত্রে সময় ৩০ দিন পর্যন্ত বাড়তে পারে। পোল্যান্ড থেকে দূতাবাসে ভিসার সিদ্ধান্ত চলে এলে ভিএসির পক্ষ থেকে ই-মেইল ও এসএমএসের মাধ্যমে প্রার্থীকে জানানো হবে। অবশ্য ভিসা প্রক্রিয়াকরণের মাঝখানের এই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে ভিসার সর্বশেষ আপডেট সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। এই সুবিধা পেতে যেতে হবে লিঙ্কে। এখানে প্রার্থীর শেষ নাম ও ভিএসসি থেকে পাওয়া সেই আইসিআরে থাকা রেফারেন্স নম্বর ব্যবহার করতে হবে।

ভিসা প্রক্রিয়াকরণের আনুষঙ্গিক খরচ

পোলিশ স্টাডি ভিসার ফি ১২ হাজার ৪০৮ রুপি, যার মূল্যমান ১৭ হাজার ৬৭২ টাকার (১ রুপি সমান ১ দশমিক ৪২ টাকা) সমান। এটি অনলাইন পেমেন্ট, ক্যাশ বা কার্ডে যেকোনোভাবেই পরিশোধ করা যায়। দূতাবাসে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময়ও ভিএফএসের সার্ভিস চার্জসহ মোট ফি পরিশোধ করা যেতে পারে। ভিসা ফিসহ প্রতি ভিসা আবেদনের জন্য ৯৩৬ রুপি (১ হাজার ৩৩৩ টাকা) পরিষেবা চার্জ রাখা হয়। এটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং করার সময়ই অনলাইনে পরিশোধ করা উচিত।

পোল্যান্ডে পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার সম্ভাব্য খরচ

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পোল্যান্ডে স্নাতক অধ্যয়নের জন্য গড়ে প্রতিবছর ২ হাজার ইউরো (২ লাখ ৬৪ হাজার ৮০০ টাকা) খরচ করতে হয়। স্নাতকোত্তরের পাশাপাশি পোস্ট-ডক্টরাল ইন্টার্নশিপের জন্য গড়পড়তা খরচ পড়ে ফি বছর ৩ হাজার ইউরো বা ৩ লাখ ৯৭ হাজার ২০০ টাকা। ভোকেশনাল স্টাডিজেরও বার্ষিক খরচ কমবেশি প্রায় ৩ হাজার ইউরো (৩ লাখ ৯৭ হাজার ২০০ টাকা)।

*মেডিসিন ও এমবিএর মতো প্রোগ্রামের অধ্যয়ন ফি সবচেয়ে বেশি; বার্ষিক প্রায় ৮ থেকে ১২ হাজার ইউরো। এর মূল্যমান ১০ লাখ ৫৯ হাজার ২০০ থেকে ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ৮০০ টাকার সমতুল্য।

*বিদেশি শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার ব্যয়ের বড় অংশটি চলে যায় আবাসনে। ডরমিটরি বা অ্যাপার্টমেন্টে শেয়ার করা বসবাসের জন্য প্রতি মাসে ৯০ থেকে ১৪০ ইউরো ভাড়া গুনতে হয়। এই খরচ ১১ হাজার ৯১৬ থেকে ১৮ হাজার ৫৩৬ টাকার সমান। চলাফেরায় গণপরিবহনে খরচ হয় মাসিক ১১ থেকে ১৩ ইউরো বা ১ হাজার ৪৫৭ থেকে ১ হাজার ৭২২ টাকা। ইউটিলিটি বিলের জন্য বাজেট রাখতে হয় ১৭ থেকে ২২ ইউরো (২ হাজার ২৫১ থেকে ২ হাজার ৯১৩ টাকা)। খাবার ও মুদি সামগ্রী কিনতে ব্যয় হয় ৪৫ থেকে ৭০ ইউরো বা ৫ হাজার ৯৫৮ থেকে ৯ হাজার ২৬৮ টাকা।

*অবশ্য এই বাজেট সব শহরের জন্য সমান নয়। ওয়ারসে মাসিক খরচ সর্বাপেক্ষা বেশি; ৫১৫ থেকে ৬৩০ ইউরো (৬৮ হাজার ১৮৬ থেকে ৮৩ হাজার ৪১২ টাকা)।

*অন্যদিকে, মাসে ২০০ থেকে ৩০০ ইউরোই (২৬ হাজার ৪৮০ থেকে ৩৯ হাজার ৭২০ টাকা) যথেষ্ট পোজনান শহরের ক্ষেত্রে।

পোল্যান্ডে স্কলারশিপের সুবিধা

ইউনেস্কো পোল্যান্ড ফেলোশিপ প্রোগ্রাম আন্তর্জাতিক ছাত্রদের অধ্যয়নের জন্য সম্পূর্ণ অর্থ বহন করে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর অধ্যয়নের জন্য প্রদান করা এই বৃত্তিতে অতিরিক্ত মাসিক ভাতার পরিমাণ ২ হাজার ২০০ জ্লতি বা ৬৭ হাজার ৮১৪ টাকা।

পোল্যান্ড গভর্নমেন্ট লুকাসিউইচে সম্পূর্ণ অধ্যয়ন ফির পাশাপাশি পাওয়া যায় ১ হাজার ৭০০ জ্লতি (৫২ হাজার ৪০১ টাকা) মাসিক উপবৃত্তি। এ ছাড়া থাকে যাতায়াত ও গবেষণা প্রতিটির জন্য ৫০০ জ্লতি (১৫ হাজার ৪১২ টাকা)।

ওয়ারস ইউনিভার্সিটি সোশ্যাল স্কলারশিপ পুরো পড়াশোনার ব্যয়ভার বহন করে। প্রতি সেমিস্টারে প্রদান করা ভিসেগ্রাদ পোল্যান্ড স্কলারশিপের মূল্যমান প্রায় ১৯ হাজার ৩০০ জ্লতি (৫ লাখ ৯৪ হাজার ৯০৭ টাকা)।

উইমেন ইন জেন এম ক্লাউসম্যান বিজনেস, বিআর্ট প্রিসেট একাডেমিক ও সার্ভিসস্কেপ নামক স্কলারশিপগুলোয় রয়েছে আংশিক তহবিল পাওয়ার সুযোগ।

ইউরোপের অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো পোল্যান্ডেও প্রায় সব পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য পূর্ণ তহবিল দেওয়া হয়।

পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সেমিস্টার চলাকালীন সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করতে পারেন। ছুটির মৌসুমে পূর্ণকালীন কাজের স্বাধীনতা থাকে। রিটেইল, হসপিটালিটি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে প্রশাসনিক কাজসহ বিভিন্ন সেক্টরে খণ্ডকালীন কর্মীর চাহিদা থাকে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যারিয়ার সেন্টারেও কর্মী প্রয়োজন হয়, যেগুলো শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও ক্লাব কার্যক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। এসব কাজে ক্যাম্পাসের বাইরের চাকরিগুলো চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা থাকে এবং অপেক্ষাকৃত স্বল্প শ্রমসাধ্য হয়।

পড়াশোনার পর ওয়ার্ক পারমিট ও পারমানেন্ট রেসিড্যান্স লাভ

পড়াশোনা শেষ করার পর বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের পোল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য প্রথম যে কাজ করতে হয়, তা হচ্ছে অস্থায়ী বসবাসের অনুমতি নেওয়া। এই পারমিটের সর্বোচ্চ মেয়াদ তিন বছর। অস্থায়ী বসবাসের এই অনুমতি লাভের পূর্বশর্ত হচ্ছে একটি চাকরি জোগাড় করা। নিয়োগকর্তার নিকট থেকে অফার লেটার দিয়ে এই পারমিটের জন্য আবেদন করা যায়। নিয়োগকর্তা কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিক বা বিশ্ববিদ্যালয় যেকোনোটি হতে পারে।

তিন বছর পর চাকরিরত ব্যক্তি ভিসা নবায়নের আবেদন করতে পারেন। এবার নিয়োগকর্তা তাঁর কর্মচারীর হয়ে ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন করেন। কাজের জন্য উপযুক্ত পোলিশ প্রার্থী না থাকলে মূলত একটি ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া হয়। কর্মচারী যথেষ্ট দক্ষ হয়ে গেলে নিয়োগকর্তার কাছ থেকে এই সুবিধা আশা করা যায়। নির্দিষ্ট মেয়াদের চুক্তি অপেক্ষা বেশি সময় ধরে কাজ করলে কর্মচারী ব্লু কার্ডধারী হন। এই কার্ডের বৈধতা থাকে সর্বোচ্চ তিন বছর।

পোল্যান্ডে একটানা পাঁচ বছর বসবাস করার পর একজন ব্যক্তি স্থায়ী বসবাসের জন্য অনুমতি বা পারমানেন্ট রেসিড্যান্স (পিআর) আবেদনের জন্য মনোনীত হন। পিআরের মাধ্যমে তিনি ৬ মাসের মধ্যে ৯০ দিনের জন্য যেকোনো শেনজেনভুক্ত দেশ ভ্রমণ করার অনুমতি অর্জন করেন।

পোল্যান্ডে স্নাতকদের গড় প্রারম্ভিক বেতন বার্ষিক ৭ হাজার ১২ থেকে ২৫ হাজার ৯৬৭ ইউরোর মধ্যে। বাংলাদেশে এই বেতন ৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৮৯ থেকে ৩৪ লাখ ৩৮ হাজার ৩১ টাকা। ফ্রেশ স্নাতকদের জন্য চাহিদাসম্পন্ন চাকরিগুলোর মধ্যে রয়েছে সিনিয়র ডেটা সায়েন্টিস্ট, মানবসম্পদ (এইচআর) বিশেষজ্ঞ, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বা ডেভেলপার কিংবা প্রোগ্রামার ও অ্যাকাউন্টেন্ট। তথ্যসূত্র: ইউএনবি নিউজ